১৬৩ রান তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতেই উঠে গেল ৯৮। ১৪ ওভার শেষে রান ১ উইকেটে ১২৪। এই ম্যাচও কি হারা যায়! অবিশ্বাস্যভাবে সেটাই করে দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ওয়েন মর্গ্যানের বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব ও বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে অসাধারণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়াকে ২ রানে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। প্রায় ৬ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে মুঠো থেকে জয় ফেলে দেওয়ার তেতো স্বাদ পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
সাউথ্যাম্পটনে শুক্রবার ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ইংল্যান্ড ২০ ওভারে তুলেছিল ১৬২ রান। একপর্যায়ে ধুঁকতে থাকা দলকে এই পুঁজি এনে দেয় দাভিদ মালানের ৬৬ রানের ইনিংস। রান তাড়ায় উড়ন্ত সূচনার পরও শেষ পর্যন্ত মুখ থুবড়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া থেমেছে ১৬০ রানে।
শেষ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। টম কারানের প্রথম বলে রান না পেলেও পরের বল গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেন মার্কাস স্টয়নিস। এরপর কারান আর সুযোগ দেননি হাত খোলার। তৃতীয় বলেও রান হয়নি। শেষ তিন বলের প্রতিটিতে এসেছে দুই রান করে। অস্ট্রেলিয়া হেরেছে দুই রানেই।
ম্যাচের শুরুটা ইংলিশদের ছিল দারুণ। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দলকে ঝড়ো শুরু এনে দেন জস বাটলার। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই অ্যাশটন অ্যাগারকে মারেন দুই ছক্কা এক চার। ৪ ওভারে স্কোরেবার্ডে জমা হয় ৪৩ রান।
জনি বেয়ারস্টোকে ফিরিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন প্যাট কামিন্স। তবে বাটলার ছুটছিলেন। তাকে থামান সেই অ্যাগারই। ২৯ বলে ৪৪ রান করা ব্যাটসম্যান ধরা পড়েন সীমানায়।
বাটলারকে ফেরানোর পর ভালোভাবে ম্যাচে ফেরে অস্ট্রেলিয়া। অ্যাগারের বলেই দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে বিপজ্জনক টম ব্যান্টনকে ফেরান ফিঞ্চ। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক পরে সফল হন নেতৃত্বের কৌশলেও।
দুই বাঁহাতি দাভিদ মালান ও ওয়েন মর্গ্যানের জন্য গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অফ স্পিন আক্রমণে আনেন ফিঞ্চ। নিজের প্রথম ওভারেই মর্গ্যানকে ফেরান ম্যাক্সওয়েল, পরের ওভারে মইন আলিকে।
এরপর কেন রিচার্ডসনের স্লোয়ারে যখন ফিরলেন টম কারান, ইংল্যান্ডের দেড়শ হওয়া নিয়েই টানাটানি। কিন্তু মালান তখনও ছিলেন, তিনিই এগিয়ে নেন দলকে।
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই অসাধারণ পারফর্ম করতে থাকা এই ব্যাটসম্যান এ দিনও রাখেন নিজের ছাপ। মূল পেসারদের ওভার বাকি থাকার পরও ১৮তম ওভারে লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পার হাতে বল তুলে দেন ফিঞ্চ। সেই ওভারে মালানের দুই ছক্কাসহ রান আসেন মোট ২২।
৪৩ বলে ৬৬ করে মালান আউট হন সীমানায় স্টিভেন স্মিথের দারুণ ক্যাচে। ১৪টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেই মালানের ১ সেঞ্চুরি, ৭ ফিফটি হয়ে গেল।
মালানের সৌজন্যেই ইংল্যান্ড পায় খানিকটা লড়ার মতো রান। ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চ যদিও লড়ার সুযোগই দিচ্ছিলেন না ইংলিশদের। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাট করেছেন দুজন। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে আসে ৫৫ রান।
৯ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ৩৬ বলে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ৩৯ রান। সেখান থেকেই তাদের নাটকীয় পতন। আদিল রশিদকে সুইপ খেলে ক্যাচ দেন স্মিথ। ওই ওভারেই বাজে শটে ফেরেন ম্যাক্সওয়েল।
ওয়ার্নার তখনও উইকেটে, পেরিয়ে গেছেন ফিফটি। কিন্তু উইকেট ছুঁড়ে আসার মিছিলে সামিল তিনিও। আর্চারকে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে এই ওপেনার বোল্ড হন ৪৭ বলে ৫৮ রান করে।
সুযোগ বুঝে ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেন উজ্জীবিত ইংলিশ বোলাররা। স্টয়নিসের মতো আগ্রাসী ব্যাটসম্যান টিকে থাকলেও শেষ রক্ষা হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। শেষ ওভারের ওই ছক্কা ছাড়া স্টয়নিস পারেননি বড় শট খেলতে। দারুণ জয়ের আনন্দে মাঠ ছাড়ে ইংলিশরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৬২/৭ (বাটলার ৪৪, বেয়ারস্টো ৮, মালান ৬৬, ব্যান্টন ৮, মর্গ্যান ৫, মইন ২, কারান ৬, জর্ডান ১৪*, রশিদ ১* ; স্টার্ক ৩-০-৩০-০, অ্যাগার ৪-০-৩২-২, কামিন্স ৩-০-২৪-১, রিচার্ডসন ৩-০-১৩-২, জ্যাম্পা ৪-০-৪৭-০, ম্যাক্সওয়েল ৩-০-১৪-২)।
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১৬০/৬ (ওয়ার্নার ৫৮, ফিঞ্চ ৪৬, স্মিথ ১৮, ম্যাক্সওয়েল ১, স্টয়নিস ২৩*, কেয়ারি ১, অ্যাগার ৪, কামিন্স ০* ; আর্চার ৪-০-৩৩-২, উড ৪-০-৩১-১, জর্ডান ৩-০-২৩-০, কারান ৪-০-৩৩-০, রশিদ ৪-০-২৯-২, মইন ১-০-৯-০)।
ফল: ইংল্যান্ড ২ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ১-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: দাভিদ মালান