ঠিক যেন রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালের পুনঃমঞ্চায়ন। দুই দলের এবারের লড়াইটি উয়েফা নেশন্স লিগে; স্কোরলাইনেও নেই কোনো পরিবর্তন। ছয় গোলের আরেকটি রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে দিল ফ্রান্স।
স্তাদে দে ফ্রান্সে মঙ্গলবার রাতে ‘এ’ লিগের ৩ নম্বর গ্রুপের ম্যাচে ৪-২ গোলে জিতেছে স্বাগতিকরা। এ নিয়ে টানা দুই জয় পেল ফরাসিরা। সুইডেনকে তাদের মাঠে ১-০ গোলে হারিয়ে আসর শুরু করেছিল দিদিয়ের দেশমের দল।
নেশন্স লিগে এ নিয়ে টানা দুই ম্যাচে বিধ্বস্ত হলো ক্রোয়েশিয়া। নিজেদের প্রথম ম্যাচে শিরোপাধারী পর্তুগালের মাঠে ৪-১ গোলে হেরেছিল তারা।
পরিসংখ্যানের পাতায়ও ক্রোয়াটদের উপর আধিপত্য ধরে রাখল ফ্রান্স। আগের ছয়বারের মুখোমুখিতে ফরাসিদের জয় চারটি। বাকি দুই ম্যাচ ড্র। সর্বশেষ দেখা রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে; সেবারও ক্রোয়াটদের ৪-২ গোলে হারিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা জিতেছিল ফ্রান্স।
প্রথমার্ধের শুরুতে দুই দলই বলের নিয়ন্ত্রণে ছিল মনোযোগী। এরই মধ্যে ষোড়শ মিনিটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। কর্নারে একজন হেডের পর ডান পায়ে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্রুত জায়গা বের করে বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে জাল খুঁজে নেন দেইয়ান লোভরেন।
৩৪তম মিনিটে ডি-বক্সের একটু ওপর থেকে অঁতোয়ান গ্রিজমানের ফ্রি-কিক ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়ে যায়। ডাগআউটে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায় ফরাসি কোচকে।নিজেদের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়ায় ৪৩তম মিনিটে সমতার স্বস্তি ফেরে ফরাসিদের শিবিরে। বেন ইয়েদেরের থেকে বল অঁতনি মার্সিয়ালের পা ঘুরে পেয়ে যান গ্রিজমান। নিখুঁত শটে জাল খুঁজে নেন বার্সেলোনার এই ফরোয়ার্ড। দেশের হয়ে এটি তার ৩১তম গোল।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে এগিয়ে যায় ফরাসিরা। ডান দিক থেকে বেন ইয়েদেরের বাড়ানো ক্রস দুই ডিফেন্ডারের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর দুরের পোস্টে থাকা মার্সিয়াল টোকা দেন। বল পোস্টে লেগে ফেরার পর গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচের হাতে লেগে জালে জড়ায়।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তারকা ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপেকে ছাড়া খেলতে নামা ফ্রান্সের এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ উবে যায় দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে। মাতেও কোভাসিচের থ্রু বল ধরে তিন ডিফেন্ডারের দেয়ালের ভেতর থেকে লক্ষ্যভেদ করেন ইয়োসিপ ব্রেকালো।
ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো ম্যাচের ৬৫তম মিনিটে ফের এগিয়ে যায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। গ্রিজমানের কর্নারে লাফিয়ে উঠে হেডে জাল খুঁজে নেন দাইয়ু উপামিকানো।একটু পর গ্রিজমানের বাড়ানো বল গোলরক্ষকের গায়ে মেরে ব্যবধান বাড়ানোর ভালো একটি সুযোগ মার্সিয়াল নষ্ট করলেও ম্যাচের লাগাম মুঠোছাড়া হয়নি ফ্রান্সের।
৭৭তম মিনিটে সফল স্পট কিকে স্কোরলাইন ৪-২ করেন বদলি নামা অলিভিয়ে জিরুদ। ডি-বক্সে মার্সেলো ব্রোজোভিচের হাতে বল লাগলে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি। সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ব্রোজোভিচ ও লোভরেন দেখেন হলুদ কার্ড।
শেষ দিকে ভ্লাসিচের শট পোস্টে লেগে ফিরলে ম্যাচে ফেরা হয়নি ক্রোয়েশিয়ার। ফরাসিদের বিপক্ষে আরেকটি বড় হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা।
দিনের অন্য ম্যাচে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর নৈপুণ্যে সুইডেনকে ২-০ গোলে হারানো পর্তুগাল ও ফ্রান্সের পয়েন্ট ৬ করে। গোল পার্থক্যে গ্রুপে শীর্ষে পর্তুগিজরা। সুইডেন ও ক্রোয়েশিয়া এখনও পয়েন্টের খাতাই খুলতে পারেনি।
আইসল্যান্ডকে উড়িয়ে দিল বেলজিয়াম
ব্রাসেলসে মঙ্গলবার ‘এ’ লিগের দুই নম্বর গ্রুপের ম্যাচে ৫-১ গোলে জিতেছে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দলটি। জোড়া গোল করেন মিচি বাতসুয়াই। একটি করে গোল করেন ড্রিস মের্টেন্স, আক্সেল উইটসেল ও জেরেমি দোকু।
একই সময়ে শুরু হওয়া গ্রুপের আরেক ম্যাচে ডেনমার্কের মাঠে গোলশূন্য ড্র করেছে ইংল্যান্ড।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে ডেনমার্ককে তাদের মাঠে ২-০ গোলে হারিয়েছিল বেলজিয়াম। আর শেষ মুহূর্তের গোলে আইসল্যান্ডের মাঠে ১-০ ব্যবধানে জিতেছিল ইংল্যান্ড।
জয়ে ফেরার লক্ষ্যে প্রতিপক্ষের মাঠে আইসল্যান্ড শুরুটা ভালোই করেছিল। দশম মিনিটে সফরকারীদের এগিয়ে নেন ফ্রিদিয়োনসন। অবশ্য পরের সাত মিনিটে উইটসেল ও বাতসুয়াইয়ের গোলে এগিয়ে যায় বেলজিয়াম।
বাকি তিন গোল হয় বিরতির পর। দ্বিতীয়ার্ধের পঞ্চম মিনিটে ব্যবধান বাড়ান আগের ম্যাচে দলের দ্বিতীয় গোলটি করা মের্টেন্স। কেভিন ডে ব্রুইনের কর্নার থেকে বল জালে পাঠান নাপোলির এই ফরোয়ার্ড।৬৯তম মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন চেলসি ফরোয়ার্ড বাতসুয়াই। ১০ মিনিট পর স্কোরলাইন ৫-১ করেন ফরোয়ার্ড দোকু।
কোপেনহেগেনে প্রথমার্ধে ছন্দ ছিল না ইংল্যান্ডের খেলায়। রাহিম স্টার্লিং, জেডন স্যানচো, হ্যারি কেইনদের নিয়ে গড়া আক্রমণভাগ ছিল প্রাণহীন। বিরতির আগে সফরকারীরা গোলের উদ্দেশে শট নিতে পারে কেবল একটি। সেটিও আবার ছিল না লক্ষ্যে।
সে তুলনায় পাল্টা আক্রমণে মাঝে মধ্যেই ইংল্যান্ড শিবিরে ভীতি ছড়ায় ডেনমার্ক। ৩১তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড মার্টিন ব্র্যাথওয়েটের জোরালো শট পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে যায়। ছয় মিনিট পর কাসপের ডলবার্গের খুব কাছ থেকে নেওয়া শট ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড।বিরতির পর আক্রমণে ধার বাড়ে ইংল্যান্ডের। যদিও লক্ষ্যে তাদের প্রথম শটের দেখা মেলে ৭০তম মিনিটে। যোগ করা সময়ে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিলেন কেইন। ইংলিশ ফরোয়ার্ডের প্রচেষ্টা লাইন থেকে ফেরান মাটিয়াস ইয়োরগেনসেন। ড্রয়ের হতাশায় মাঠ ছাড়ে সফরকারীরা।
দুই ম্যাচে দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে বেলজিয়াম। ৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ইংল্যান্ড। ডেনমার্কের পয়েন্ট ১, আইসল্যান্ড এখনও কোনো পয়েন্ট পায়নি।