পারমাণবিক জ্বালানিতে সহযোগিতা দেবে হাঙ্গেরি

peter-szijjarto-ak-momen-100920-03

বাংলাদেশে পারমাণবিক জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়াতে একমত হয়েছে হাঙ্গেরি।

বাংলাদেশ সফররত হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেটার সিয়ার্তো বৃহস্পতিবার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ওই বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই মন্ত্রী জানান, বাণিজ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে ঢাকায় কনস্যুলেট খুলছে হাঙ্গেরি।

পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহারে বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াতে হাঙ্গেরির সহযোগিতার বিষয়ে সম্মত হওয়ার কথা জানিয়ে সিয়ার্তো বলেন, বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ কেবল শুরু করেছে। আর হাঙ্গেরি পারমাণবিক শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে ১৯৮০ সাল থেকে।

”পারমাণবিক প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে ১০০ জনের জায়গায় ১৩০ জনকে হাঙ্গেরিতে পড়াশোনার বৃত্তি দেওয়া হবে। অতিরিক্ত ৩০ জন বৃত্তি পাবে পারমাণবিক জ্বালানি নিয়ে পড়তে।”

পারমাণবিক বিদ্যুতে নিজের দেশের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে সিয়ার্তো বলেন, “বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল নির্মাতা রাশিয়ার রোসাটম। হাঙ্গেরিতে একই ধরনের কাঠামোতে বহু আগেই রিঅ্যাক্টর তৈরি করেছি আমরা।”
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এগিয়ে থাকা হাঙ্গেরির সঙ্গে এক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়েও একমত হওয়ার কথা সংবাদ সম্মেলনে জানান দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ”বাংলাদেশের দুই জমজ শিশুকে আলাদা করার অভিজ্ঞতার উপর ভর করে আমরা এক্ষেত্রে সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত করতে চাই।”

তিনি জানান, পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াটার কোম্পানির সঙ্গে কাজ করবে বুদাপেস্টের পানি কোম্পানি।

বাণিজ্য সহযোগিতার জোরদারে অর্থনৈতিক, আইনগত ঝামেলা দূর করার বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ার কথাও জানান তিনি।
সিয়ার্তো বলেন, বিজনেস টু বিজনেস সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রসারিত করতে ২১০ মিলিয়ন ইউরো ঋণ দেবে হাঙ্গেরির এক্সিম ব্যাংক।

”আইনগত বিষয়ে দুই দিক থেকে করারোপ আমরা চাই না। এক্ষেত্রে পথ তৈরি করতে ইতোমধ্যে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অচিরেই এ বিষয়ে চুক্তি সই হবে।”

নতুন কনস্যুলেটে একজন কনসাল নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয় দেখভাল করতে কূটনীতিক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানান সিয়ার্তো।

তিনি জানান, ভারতের দিল্লিতে হাঙ্গেরির দূতাবাসের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশে কনস্যুলেটের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আগামী বছর জানুয়ারি থেকে চালু হতে পারে ঢাকায় হাঙ্গেরির কনসাল অফিস।
রোহিঙ্গা সমস্যা ‘গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ’ করার কথা জানিয়ে হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। আমরা চাই ভিনদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা মানুষগুলো নিজ ভূমে নিরাপদ আবাসস্থল পাক। এ কারণে এটা কেবল অভিবাসনের বিষয় নয়, প্রত্যাবাসনের ব্যাপার। পালিয়ে আসা মিয়ানমারের নাগরিকদের ফেরানোর পথ তৈরিতে আমরা কাজ করব।”

হাঙ্গেরির ডিপ্লোমেটিক অ্যাকাডেমির সঙ্গে বাংলাদেশের ডিপ্লোমেটিক অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষণ ও আদান-প্রদানের কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনার কথাও বলেন সিয়ার্তো।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “ইলেকট্রনিকস, পারমাণবিক বিদ্যুৎ এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাদের (হাঙ্গেরি) এক্সপার্টিজ রয়েছে। আমরা এগুলোর পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক ব্যবসায়সহ অন্য অনেক ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিস্তার ঘটাতে চাই।”

বিদেশে হাঙ্গেরির বিনিয়োগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ”হাঙ্গেরিতে প্রায় ১১৫ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে। অন্য দেশে তাদের বিনিয়োগ রয়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এটা অনেক বড় ব্যাপার।”
এক দিনের সংক্ষিপ্ত সফরে বুধবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেটার সিয়ার্তো। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

বৃহস্পতিবার সকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠকের পর বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সফর শেষে বৃস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।

Pin It