আর্জেন্টিনা ছেড়ে ভীরুভীরু পায়ে প্রথমবারের মতো বার্সেলোনায় পা রেখেছিলেন লিওনেল মেসি। ছিল একটাই স্বপ্ন, স্পেনের বিখ্যাত এই ক্লাবের একজন হওয়া। শারীরিক বাধা পেরিয়ে কাজটা সহজ ছিল না মোটেও। সে বাধার দেওয়াল টপকে মেসি নিজের স্বপ্নকে তো সত্যি করেছিলেনই, পরের ২০ বছরে ক্লাবেরও অজস্র স্বপ্নপূরণের প্রধান কুশীলব বনেছেন তিনি !
বার্সেলোনায় ২০ বছর পূর্তির দিনটা অবশ্য জোড়া গোল দিয়ে রাঙিয়েছেন মেসি। জিরোনার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে প্রথমে ফেলিপে কোটিনহোর গোলেও পরোক্ষ অবদান ছিল তার। ফলে ৩-১ ব্যবধানে অনায়াস এক জয় পেয়েছে কাতালান দলটি।
ছয় বারের ব্যালন ডি’অর জয়ীর ২১তম বছরটাই বার্সায় শেষ বছর হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার আগের সময়গুলোয় যা করেছেন তাতে তাকে দলটির ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় বলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। শেষ ২০ বছরে বার্সেলোনার হয়ে সম্ভাব্য সবকটি দলীয় জিতেছেন মেসি। ফলে ব্যক্তিগত শিরোপাও তার পায়ে লুটিয়ে পড়েছে পাল্লা দিয়ে।
২০০৪ সালে ফ্র্যাঙ্ক রাইকার্ডের কোচিংয়ে প্রথমবারের মতো মূল দলে খেলেন মেসি। এর এক বছর পর আলবাকেতের বিপক্ষে তার আদর্শ রোনালদিনহোর পাস থেকে করা এক দারুণ গোলে শুরু। বছর দুয়েক পর গেটাফের বিপক্ষে প্রায় ৯ জনকে ছিটকে দিয়ে ম্যারাডোনার শতাব্দীসেরা গোলটির মতোই এক লক্ষ্যভেদে নিজের আগমনী বার্তা শুনিয়েছিলেন মেসি।
রোনালদিনহোর ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব এক সত্তা তৈরি করেছিলেন পেপ গার্দিওলার অধীনে। ২০০৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে তাদেরই মাঠে ‘ফলস নাইন’ অবস্থানে খেলিয়ে দুর্ধর্ষ ৬-২ ব্যবধানের এক জয় পেয়েছিলেন সে সময়ের বার্সা কোচ। ঐ বছরেই সম্ভাব্য ছয়টি শিরোপাই জিতে বার্সা, মেসি জেতেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফা বর্ষসেরা আর ব্যালন ডি’অর।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেসি আরো ভয়ংকরই হয়েছেন কেবল। ২০১২ সালে তো সব রেকর্ড ভেঙে করেন ৯১ গোল। এরপর আরো রেকর্ড ভেঙেছেন গড়েছেন। হয়েছেন বার্সার সর্বোচ্চ গোলদাতা, পরে হয়েছেন লা লিগারও। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গড়েছেন দ্রুততম শতগোলের রেকর্ড। পথে আরো দুটো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপাও জিতেছেন আর্জেন্টাইন তারকা।
লিগেও সমানভাবে কথা বলেছে তার বাঁ পা। তার কৃতিত্বেই তো ২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ছয় মৌসুমে পাঁচটি লিগ শিরোপা জিতেছে দল, শেষ ১২ মৌসুমে আট বার।
সাম্প্রতিক সময়ে ক্লাবের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় হয়তো ক্লাব ছাড়তে চেয়েছেন, তবে তাতে বার্সায় মেসির ইতিহাস ক্ষয়ে যাবে না একটুও।
বার্সার হয়ে মেসি
মোট ম্যাচ-৭৩১ গোলসংখ্যা-৬৩৪ জোগান-২৮৫
লা লিগায়
মোট ম্যাচ-৪৮৫ গোলসংখ্যা-৪৪৪ জোগান-২০১
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে
মোট ম্যাচ-১৪৩ গোলসংখ্যা -১১৫ জোগান -৩৯