পররাষ্ট্রনীতিতে যেখানে বিভক্ত ট্রাম্প-বাইডেন

image-184578-1600628505

বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনে জিতেছিলেন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে। ক্ষমতায় আসার পর পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা অতীতে অন্য কোনো প্রেসিডেন্ট নেননি। তিনি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তার ভাষায় ‘অন্যায্য’ বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করেছেন। ন্যাটো জোটভুক্ত দেশ যাতে আরো বেশি ব্যয় করেন, সেজন্য তিনি চাপ দিয়েছেন।

এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বলেছেন, নির্বাচিত হলে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করবেন। ট্রাম্পের গৃহীত অনেক পদক্ষেপ বদলে দেবেন। নির্দিষ্ট কিছু পররাষ্ট্রনীতিতে দুই প্রার্থীর এই মতভিন্নতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রয়টার্সের নিবন্ধে চীন ইস্যুতে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের সময় যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ের ইতিহাসে বলা চলে তলানিতে ঠেকেছে। ট্রাম্পের দাবি কয়েক দশকের মধ্যে তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি চীনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে চীনের সঙ্গে আংশিক ধাপ-১ বাণিজ্যচুক্তিতে পৌঁছানোর আগেই বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেন। এ কারণে পরবর্তী ধাপের আলোচনার দরজাও বন্ধ হয়ে যায়। ট্রাম্পের দাবি বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে মার্কিনিদের চীনাদের কাছ থেকে শিখতে হবে। মার্কিনিদের অনেক কর্মসংস্থান নষ্ট হবে। তিনি করোনা মহামারি মোকাবিলায় চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

কিন্তু করোনা মহামারি মোকাবিলায় ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন বাইডেন। তার দাবি চীনে করোনার ভয়াবহতা নিয়ে গোয়েন্দাদের তথ্যে গুরুত্ব দেননি ট্রাম্প। বাইডেনের দাবি ট্রাম্প প্রশাসনের বিশৃঙ্খল অবস্থার কারণে সুবিধা নিয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের থেকে দূরে সরে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট নেতৃত্ব হারিয়েছে। চীনের প্রভাব অনেকক্ষেত্রে বেড়েছে। বাইডেন বলেন, মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে চীনের ওপর বহুমুখী চাপ সৃষ্টি করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করবেন।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় ইরানের সঙ্গে ছয়-জাতি পরমাণু চুক্তি হয়। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছেন। ট্রাম্প ইরাকে আগ্রাসনের লাভ নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা তৈরির পর নতুন করে সেনা পাঠিয়েছেন। এক্ষেত্রে বাইডেন বলেছেন, তিনি কূটনীতি দিয়ে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণ করবেন। আবারও পরমাণু চুক্তিতে জড়াবেন। তবে এক্ষেত্রে ইরানকে অবশ্যই চুক্তির শর্ত মানতে হবে।

গত জানুয়ারিতে ইরানের শীর্ষ কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি মার্কিন হামলায় নিহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়। বাইডেন বলছেন, তিনি মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানে জোর দেবেন এবং স্থানীয় মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করবেন। বাইডেন ইয়েমেনে সৌদি আরবের যুদ্ধে মার্কিন সমর্থন বাতিল করতে চান, যেখানে ট্রাম্প সৌদি আরবের পক্ষে সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন।

উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ ও ২০১৯ সালে তিন দফা উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু দেশটি পরমাণু কার্যক্রম এখনো পরিত্যাগ করেনি। বাইডেন বলছেন, পূর্ব শর্ত ছাড়া তিনি কোনোভাবেই কিমের সঙ্গে বৈঠক করবেন না।

আফগানিস্তান ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চান মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহার করতে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এই দীর্ঘ যুদ্ধের অবসান চান। ইতিমধ্যে তালেবানদের চুক্তিতে পৌঁছেছে ট্রাম্প প্রশাসন। বাইডেনও আফগানিস্তান থেকে বেশিরভাগ সেনা ফিরিয়ে আনতে চান। অন্যদিকে আলকায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নজর দিতে চান।

ট্রাম্পের প্রচেষ্টায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করেছে। এসব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিকসহ অন্যান্য সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে। এই ঘটনাকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কূটনৈতিক উদ্যোগের বড় বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০১৮ সালে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয় ট্রাম্প প্রশাসন। বাইডেন এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তিনি নির্বাচিত হলে মধ্যপ্রাচ্যে দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানের জন্য কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময় ইউরোপে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দুর্বল হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে। বাইডেন বলছেন, তিনি জয়ী হলে ন্যাটো জোটের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করবেন। আবারও প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্ত হবে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ব মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতার যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে তার পুনরুদ্ধার করবেন।

নিবন্ধে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ন্যাটো সদস্য ও মার্কিন মিত্রদের বিক্ষুব্ধ করেছেন। তিনি নাভালনির ওপর বিষ প্রয়োগ ইস্যুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এমনকি ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ নাকচ করেছেন। অন্যদিকে বাইডেন বলেছেন, রাশিয়া বা চীন যদি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করে তবে তাদের কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। সম্প্রতি জার্মানি থেকে সাড়ে ৯ হাজার সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। বাইডেন বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন।

Pin It