যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) বিজ্ঞানীরা এবার পৃথিবীর সমান একটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং অঙ্কের সমন্বয় ঘটিয়ে তারা এই গ্রহটি আবিষ্কারের কথা বলছেন।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গ্রহটিকে ‘কে-টু৩১৫বি’ হিসেবে শনাক্ত করেছেন। তারা এটিকে ‘পাই আর্থ’ গ্রহ হিসেবেও অবিহিত করেছেন। কারণ গ্রহটি সূর্যকে মাত্র ৩.১৪ দিনেই প্রদক্ষিণ করতে সক্ষম; এ কারণে এটিকে ‘পাই আর্থ’ গ্রহ বলা হচ্ছে। পাই (প্রতীক ?) একটি গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক ধ্রুবক। এর মান ৩.১৪১৫৯। ইউক্লিডীয় জ্যামিতিতে যে কোনো বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাতকে এই ধ্রুবক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটিকে কোনো কোনো সময় বৃত্তীয় ধ্রুবক, আর্কিমিডিসের ধ্রুবক বা রুডলফের সংখ্যাও বলা হয়।
নতুন একটি গ্রহ আবিষ্কারের কথা বলা হলেও এটি মানুষের বসবাসের জন্য একেবারেই অযোগ্য। কারণ এই গ্রহের গড় তাপমাত্রা ৩৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৪৫০ কেলভিন। গ্রহটির অবস্থান সূর্যের অনেক কাছে হওয়ার কারণেই সেখানকার তাপমাত্রা অনেক বেশি বলে অনুমান বিজ্ঞানীদের। তবে এখন পর্যন্ত গ্রহটির ভর সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য জানাতে পারেননি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
২০১৭ সালে নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপের কে-টু মিশন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রহটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন বিজ্ঞানীরা। ভূমিভিত্তিক টেলিস্কোপ নেটওয়ার্ক ‘স্পেকুলোস’ এর সাহায্যে বিজ্ঞানীদের দলটি গ্রহটির সূর্যকে প্রদক্ষিণের সংকেত নিশ্চিত হন এবং সেখানে তারা দেখতে পান পাইয়ের মানের সমান সময়ে গ্রহটি তার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে।
গবেষণা দলের প্রধান এমআইটির আর্থ, অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সাইন্সের (ইএপিএস) স্নাতক প্রাজোয়াল নিরাউলা জানান, গ্রহটি ঘড়ির কাঁটার মতো সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। তবে এর গড় তাপমাত্রা অত্যধিক বেশি হওয়ায় সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ।
কে-টু ডাটা ব্যবহারের মাধ্যমে ৩১৫তম গ্রহটি আবিষ্কার করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তারা হিসাব করে দেখেছেন, গ্রহটির ব্যাসার্ধ পৃথিবীর ব্যাসার্ধের ০.৯৫ গুণ। এ কারণে এটিকে পৃথিবীর প্রায় সমান আকারের বলে ধারণা করা হচ্ছে। গ্রহটি প্রতি সেকেন্ডে ৮১ কিলোমিটার বেগে ছুটছে; প্রতি ঘণ্টায় যা কিনা ২ লাখ ৯১ হাজার কিলোমিটার।
প্রাজোয়াল নিরাউলা বলেন, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং অঙ্কের সমন্বয়ে ভবিষ্যতে এই ধরনের আরো অনেক বৈচিত্র্যময় গ্রহের সন্ধান আমরা করতে পারব। সেই সঙ্গে এসব এলিয়েন গ্রহ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে ভবিষ্যতে আরো উন্নত প্রযুক্তির টেলিস্কোপও হয়তো আমরা পেয়ে যাব।—মিরর