সিলেটের এমসি কলেজে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের ‘সরাসরি ক্রসফায়ারে’ দেওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।
মঙ্গলবার ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে তিনি বলেন, এমসি কলেজে যা ঘটেছে, তা ‘খুবই দুঃখজনক, লজ্জাজনক এবং নিন্দাজনক’ ঘটনা।
“আমাদের এক বোনের উপর পাশবিক নির্যাতন করেছে। কোন দলের সেটার মধ্যে আমি যেতে চাই না। এটা নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি আছে, কেউ বলছে বর্তমান ছাত্রলীগের, কেউ বলছে ছাত্রদলের।”
দোষীরা যে দলেরই হোক, এই ঘটনা ‘চরম নিন্দনীয়’ মন্তব্য করে হানিফ বলেন, “আমার যদি সুযোগ থাকত, আমি এটাই বলতাম, এদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় নয়, এরদেরকে সরাসরি ক্রসফায়ারে দিয়ে দিতে।
“যদিও আমরা ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে, নির্বিচারের হত্যার বিরুদ্ধে। তারপরেও আমি বলি, এরা পশু, এরা কোনো মানুষের কাতারে পড়ে না। যারা এই ধরনের পাশবিক নির্যাতন করে, এদের সঙ্গে পশুর তুলনা করা ছাড়া উপায় নাই। এই পশুগুলোকে অহেতুক বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে ধরে ধরে সরাসরি ক্রসফায়ার দেওয়া দরকার।”
গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন এক নারী। ছাত্রলীগের নয়জন কর্মী ওই নারীকে ক্যাম্পাস থেকে তুলে ছাত্রাবাসে নিয়ে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ধর্ষণের শিকার তরুণীর স্বামী বাদী হয়ে নয়জনকে আসামি করে যে মামলা করেছেন, তার মধ্যে আটজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
‘বিএনপির সময়কার’ নারী নির্যাতনের ধারাবাহিকতা এখনও থেকে গেছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ বলেন, “সরকারকে দোষারোপ করে কথা বলছেন, তাদের বলে দিতে চাই, এই যে ছাত্রসমাজের মধ্যে এই নৈতিকতার অবনতি, এটা রাতারাতি হয় নাই। ২০০১ সালে আপনারা ক্ষমতায় আসার পরে সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছিলেন।
“মনে আছে পূর্নিমার কথা? মনে আছে ফাহিমার কথা? সেগুলোর কথা এখন বিএনপি নেতাদের মনে পড়ছে না। আপনারা দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে এইভাবে পাশবিক নির্যাতন করেছিলেন। আপনাদের কাছে আমরা বিচার চেয়েছিলাম, আপনারা সেই সময় বিচার করেন নাই। আপনার সোনার ছেলে, ছাত্রদল যুবদলের সোনার ছেলেরা, সেই সময় আপনারা উৎসাহ দিয়েছিলেন, মজা দেখেছিলেন।”
বিএনপি ‘দলীয়ভাবে ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নারী নির্যাতনে উৎসাহ’ দিয়েছিল বলেই তার ফল এখনও ভোগ করতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মাহবুব-উল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, “আজকে সেইটার প্রতিক্রিয়া ছাত্রসমাজের মধ্যে। আমরা জাতিকে আশ্বস্ত করতে চাই, বিএনপি আশ্রয় প্রশ্রয় ও উৎসাহ দিয়েছে বলে আমরা দিচ্ছি না। আমরা অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে দেখছি। সে যে দলেরই হোক না কেন, অপরাধী অপরাধীই।”
দুর্নীতি নিয়ে বিএনপি নেতাদের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে হানিফ বলেন, “দুর্নীতি বাংলাদেশে একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে এ কথা আমি বলব না। দুর্নীতি তো আপনারা হাওয়া ভবন খুলে শুরু করেছিলেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে আপনারা দুর্নীতির দোকান খুলে, অফিস খুলে বসেছিলেন। তারেক রহমানকে কমিশন না দিয়ে সারা বাংলাদেশে কোনো কাজ হত না।”
এই আওয়ামী লীগ নেতার ভাষায়, তাদের সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে বলে বিএনপি নেতারা এখন কথা বলছেন। বিএনপির সময়ে তারা দুর্নীতিকে ‘আশ্রয় প্রশ্রয়’ দিয়েছিল বলে সে সময় বেশি ‘চোখে পড়েনি’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) এই আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।
আইইবি সভাপতি মো. নুরুল হুদার সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর, আইইবির সহ সভাপতি নূরুজ্জামান, খন্দকার মনজুর মোর্শেদ, মোহাম্মদ হোসাইন, এস এম মনজুরুল হক মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন (শীবলু), সহকারী সাধারণ সম্পাদক মো. রনক আহসান বক্তব্য দেন।