আগামী কাল গণভবনে সীমিত পরিসরে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দীর্ঘ প্রায় সাত মাস পর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। করোনার কারণে বৈঠক সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং শুধু মাত্র গুরুত্বপুর্ণ নেতারা করোনা পরীক্ষা করে গণভবনের এ বৈঠকে যোগ দিবেন। নানা কারণে আওয়ামী লীগের এ কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিশেষ করে এ সময় নানা রকম অপরাধের ঘটনায় ছাত্রলীগের নাম জড়িয়ে পড়ছে এবং বিভিন্ন স্থানে অনুপ্রবেশ কারিদের দুর্বৃত্তায়ন এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগ সমালোচিত হচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে এই কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, এ বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতগুলো গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এবং এ বৈঠকে যে বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্তু গ্রহণ হতে পারে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১। ঢাকা মহানগরীর দুই কমিটি:
কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে অন্যতম আলোচনার বিষয় হবে ঢাকা মহানগরের দুই কমিটি। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সুত্রগুলো বলেছে যে, ঢাকা মহানগরীর উত্তর এবং দক্ষিণের প্রস্তাবিত কমিটি আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে জমা পড়েছে এবং এই কমিটি গুলোতে যে নামগুলো আছে সে নামগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাচাই বাছাই করে আওয়ামী লীগ সভাপতি আগামীকালের বৈঠকে সেটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দিতে পারেন। এ অনুমোদন দেয়ার মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম আরো জোড়দার করা হবে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
২। জেলা কমিটির ব্যাপারে গাইড লাইন:
ইতোমধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ জেলা কমিটির নাম এসেছে আওয়ামী লীগের কাছে এবং এই তালিকাগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সুত্র গুলো বলছেন, এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুনির্দিষ্ট গাইড লাইন দিতে পারেন আগামীকাল কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে। জেলা কমিটিতে কারা থাকবে এবং কারা থাকতে পারবে না- সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট বার্তা দিবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো জানাচ্ছে যে, কমিটিগুলো যেন আত্মীয় করণ না করা হয় এবং নিজের অনুগত লোকজনকে দিয়ে ভরা না হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। এই গাইড লাইন অনুযায়ী করা কিছু কমিটি অনুমোদন হতে পারে কালকের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে।
৩। উপকমিটি গঠন:
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ তার প্রতিটি সম্পাদক মন্ডলীর জন্য একটি করে উপ কমিটি গঠনের জন্য কাজ শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উপ-কমিটি গঠনের নাম জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগের অনেক উপ-কমিটির নামই জমা পড়েনি। এর পরবর্তিতে সময় বাড়িয়ে দেয়া হয় ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। গতকাল পর্যন্ত দুই-তৃতীয়াংশ উপ-কমিটির প্রস্তাবিত নাম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে জমা পড়েছে, বলে জানা গেছে। কিছু কিছু উপ-কমিটি যাচাই-বাছাই হয়েছে। আগামীকালের বৈঠকে উপ-কমিটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে কিনা- সেটি নিশ্চিত নয়। তবে উপ কমিটির ব্যাপারে আরো কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৪। অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কমিটি:
ইতোমধ্যে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী শ্রমিক লীগ এবং কৃষক লীগের কমিটি আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে জমা পড়েছে। আরো যে অঙ্গ সহযোগি সংগঠন রয়েছে, সে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটির ব্যাপারটিও আওয়ামী লীগ সভাপতি কি ভাবে গঠিত হবে সে সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। আর এই বাস্তবতা এই অঙ্গ সংগঠনগনগুলোর কমিটি গঠনে একটি গাইড লাইন আগামী কালের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
৫। অনুপ্রবেশকারী দুর্বৃত্তায়ন প্রসঙ্গ:
আগামী কালের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সবচেয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবেন। অনুপ্রবেশ কারি এবং দলের ভেতরে ঢুকে যারা অপকর্ম করছে এবং অনুপ্রেবেশ কারিরা যেন আর কোন ভাবে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করতে না পারে, কোন কমিটিতেই যেন তারা না থাকে সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবেন শেখ হাসিনা। এ জন্য আগামী কালের বৈঠকে তিনি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিবেন বলেও আওমী লীগ সুত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সুত্র গুলো বলছে, আওয়ামী লীগ করোনা পরিবর্তী সময়ে দল গোছোনো এবং আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দল ঐক্যবদ্ধ ভাবে যাতে কাজ করতে পারে সে ব্যাপারে কিছু সাংগঠনিক নির্দেশনা দিতে পারেন আগামীকালের বৈঠকে।