কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপ সন্ত্রাসীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছে। এই নিয়ে গত তিন দিনে সংঘর্ষে সাত রোহিঙ্গা নিহত হলো। মঙ্গলবার রাত ১০টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলছিল।
স্থানীয়রা জানায়, কুতুপালংয়ের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী মাস্টার মুন্না গ্রুপের সঙ্গে অনিবন্ধিত ক্যাম্পের আনাস-সেলিম গ্রুপের দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ চলে আসছে।
কক্সবাজারে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু দ্দৌজা জানিয়েছেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কুতুপালং ক্যাম্পে নতুন ও পুরাতন রোহিঙ্গাদের ওই দু’গ্রুপের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এর আগে গত ৪ ও ৫ অক্টোবর সংঘর্ষে তিনজন রোহিঙ্গা নিহত হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে র্যাব অভিযান চালিয়ে ৯ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ আটক করে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে কুতুপালং এক নম্বর ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দু’গ্রুপ ফের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে চারজন নিহত হয়েছে বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জানিয়েছে। এ ঘটনায় কতজন আহত হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, এপিবিএন সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
নিহতদের মধ্যে সন্ত্রাসী মুন্নার ভাই গিয়াস উদ্দিন ওরফে গেচ্ছারীর নাম জানা গেছে। বাকিদের নাম জানা যায়নি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত একজনের গলাকাটা ও অপর তিনজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
র্যাব-১৫ কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান জানান, কতিপয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল। দু’দিন আগে র্যাব তাদের ধাওয়া দেয়। এক পযায়ে তারা কুতুপালং ছেড়ে হোয়াইক্যংয়ের চাকমারকুল এলাকার পাহাড়ে অবস্থান নেয়। গোপন সূত্রে তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় ৯ জনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে দেশে তৈরি চারটি অস্ত্র, ২০ রাউন্ড কার্তুজ, কিরিচ উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। এ ধরনের ছোট-বড় ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। কয়েক দিনের গোলাগুলি ও খুনের ঘটনায় আতঙ্কে কয়েকশ’ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু কুতুপালং ক্যাম্প ছেড়ে অন্য ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে অনেক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।