‘সরকারের ছত্রচ্ছায়ায়’ সারা দেশে ধর্ষণ-নারী নির্যাতনের ‘মহোৎসব’ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সিলেটে দলবেঁধে নববধূকে ধর্ষণ এবং নোয়াখালীকে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে বুধবার রাজধানীতে এক মানববন্ধনে তিনি একথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে সমস্ত বাংলাদেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছে। যে ভয়াবহ অবস্থায় এই অবৈধ সরকার দেশকে নিয়ে গেছে তাতে দেশের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ে্ছে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে যে ভয়াবহ রোমহর্ষক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে এটা সমস্ত জাতি শুধু নয়, আমার মনে হয় সমস্ত বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে।
“শুধু এই নোয়াখালীর ঘটনা নয়, গত কয়েক মাসে আপনারা লক্ষ করেছেন এখানে একটা মহোৎসব শুরু হয়েছে। এই নারীর শ্লীলতাহানি, নারীর ওপরে নির্যাতন- এটা এখন এই অবৈধ সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় একটা নিয়মিত ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা আজকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই সরকার ক্ষমতায় থাকার সমস্ত যে বৈধ্যতা তারা হারিয়েছে। তাদের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো রকমের কোনো কারণ নেই। গত দুই দিন আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন যে, এই ধর্ষণের দায় আমরা এড়াতে পারি না। তাহলে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, এই ধর্ষণ, লুণ্ঠন, নির্যাতন-নিপীড়নের পেছনে আপনাদেরই মদদ রয়েছে…।
“এই সমাবেশ থেকে আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যান। যদি না যান এই দেশের জনগন জেগে উঠবে, আপনাদেরকে চলে যেতে বাধ্য করবে।
তিনি বলেন, “আজকে যে ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে, সিলেটের মতো পবিত্র জায়গায়, আজকে আমাদের আর চুপ করে বসে থাকার আর কোনো উপায় নেই।
“আমাদের উচিত হবে, সবাই একত্রিত হয়ে দলমত নির্বিশেষে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই সমস্ত অনাচার-ব্যভিচার-অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এই যে দানব আমাদের উপরে বসে আছে তাকে সরিয়ে দেশনেত্রীকে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে সামনের দিকে এগিয়ে যাই।”
বৃহস্পতিবার জেলায় জেলায় নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা অনেক অপকর্ম-অন্যায় শুনেছি-দেখেছি-পড়েছি কিন্তু এমসি কলেজে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে হোস্টেলে যে পৈশাচিক জঘন্যতম অপরাধ করা হয়েছে তা নজিরবিহীন। ছাত্রলীগের আওয়ামী লীগের তাদের সোনার ছেলেরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তারপরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে একজন নারীকে উলঙ্গ করে একই রকমের ঘটনা ঘটিয়েছে সে ব্যক্তি কে? আওয়ামী লীগের লোক।
“যে ধর্ষক এটা শুধু কোনো একজন মহিলাকে ধর্ষণ নয়, বাংলাদেশকে ধর্ষণ, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধর্ষণ। এই ঘটনায় (নোয়াখালীর) আমার কোনো ভাষা নেই তার প্রতিবাদ করার। শুধু ঘৃণা, ছি. ধিক্কার। চতুর্দিকে দেখেন- শুধু ধর্ষণ নয়, সমাজের যত রকমের অবক্ষয় আছে, আজকে সমাজকে দূষিত করে ফেলেছে, রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের রাষ্ট্রকে অকার্যকর করেছে।”
এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “আজকে শিশুরা, কলেজের ছাত্ররা, স্কুলের ছাত্রীরা রাস্তায় নেমেছে। কেন নেমেছে এটা আপনাদের (সরকার) বুঝতে হবে। যদি আপনারা দেশ চালাতে না পারেন, মা-বোনের ইজ্জতের সন্মান দিতে না পারেন, তাদেরকে রক্ষা করতে না পারেন তাহলে সোজাসুজি পদত্যাগ করুন।
“আজকে প্রতিবাদের এই সূচনা থেকে আমাদের যাত্রা শুরু। আজকে বলে যাই আগামীতে এমন সমাবেশ এখানে হবে, অতিথিজন এখানে উপস্থিত থাকবেন, যেখানে সমাবেশ হবে, সেখানেই প্রত্যেকে থাকবেন। যতক্ষণ গণতন্ত্র হরণকারী, ধর্ষণকারী, নারী নির্যাতনকারী আর অর্থ-লুটপাটকারী এই সরকার পদত্যাগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।”
বিচার বিভাগ ও পুলিশ বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে সন্ত্রাসীদের দমন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“আমাদের পুলিশ বাহিনী দক্ষ, তাদেরকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিন। বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিন, আমাদের বিচারপতিরা সঠিকভাবে বিচার করতে পারবে,” বলেন গয়েশ্বর।
ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কালো পতাকা হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী এই মানববন্ধনে অংশ নেন, যাতে তা এক সমাবেশে রূপ নেয়। ‘ধর্ষকের আস্তনা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘নিপীড়ক যেখানে, লড়াই হবে সেখান’, ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’ ইত্যাদি শ্লোগানে প্রেস ক্লাব এলাকা মুখর হয়ে ওঠে।
বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের পরিচালনায় মানববন্ধনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, মহানগর উত্তরের মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, আবদুল আলিম নকি, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, ছাত্রদলের ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধনে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, শামীমুর রহমান শামীম, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, আবুল কালাম আজাদ, এজিএম শাসমুল হক, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, কফিলউদ্দিন আহমেদ, এসএম জাহাঙ্গীরসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।