অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।
তাকে ‘গলায় গামছা দিয়ে’ রাস্তায় নামানো দরকার বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
শনিবার এক মানববন্ধনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, “এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনো আইন মানে না। অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে শুধু ভিন্নমত পোষণের জন্য চাকরিচ্যুত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এটা তারা পারেন না।
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ল ব্রেকিং। অর্থাৎ আইন ভাঙার বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ।”
রিজভী বলেন, “আওয়ামী লীগের অনেক শিক্ষক আছেন যাদের নৈতিক স্খলন ঘটনার তদন্ত হয়েছে, তদন্তে সুপারিশ হয়েছে। তারপরেও তাদের চাকরি যায়নি। পিএইচডি-এমফিল গবেষণায় চৌর্যবৃত্তিতে লিপ্ত হয়েছে এ রকম অনেক শিক্ষকের চাকরি যায়নি। তারা বহাল তবিয়তে রয়েছে। আজকের পত্রিকায়ও এসেছে এসব খবর।”
সেখানে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ অবমাননার দায়ে মার্কেটংয়ের শিক্ষক মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরিচ্যুত করাটা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না রুহুল কবির রিজভী।
এজন্য উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর উনি আনন্দে আহ্লাদিত যে, ১০ টাকার মধ্যে একটি চাপ, একটি সিঙ্গারা, একটি সমুচা পাওয়া যায়। কি আনন্দিত তিনি!
“আর তিনি আইন ভাঙছেন। নৈতিক স্খলনের জন্য দায়ী এই ভাইস চ্যান্সেলর, এই ভাইস চ্যান্সেলরকে গলায় গামছা দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে আনা দরকার। না হলে সুশিক্ষা থাকবে না এবং প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ থাকবে না।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘দলীয়করণ ও আত্মীয়করণের’ অভিযোগ করে রাকসুর এক সময়ের ভিপি রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেখলাম- আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মেয়ে না হলে তার ভাতিজা, ভাইস চ্যান্সেলরের এলাকার লোক না হলে তার কোনো আত্মীয়-স্বজন, ভাতিজা, নাতি-নাতনি-ভাগনি- এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি পাচ্ছেন।
“কেন? ওরা যে প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ লোক। মেধা তালিকায় এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ তারা চাকরি পাচ্ছে না। নয়, দশ অথবা সেকেন্ড ক্লাস পেয়ে্ছে তাদের চাকুরি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা জানি, মেধা তালিকা যারা ফার্স্ট-সেকেন্ড তারা চাকরি পেতে পারেন। কিন্তু সেখানে তা না। ভাইস চ্যান্সেলরের যারা ঘনিষ্ঠ শিক্ষক তাদের মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হচ্ছেন, না হলে তাদের ভাগ্নি না হলে ছেলে শিক্ষক হচ্ছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে রিলেটিভ অ্যান্ড আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন কেন্দ্র।”
এই বিএনপি নেতা বলেন, “এসব করতে গিয়ে তারা বড় ধরনের দুর্নীতি করছে, বড় ধরনের নিয়ম ভঙ্গ করছে। আজকে শেখ হাসিনার শুধুমাত্র কৃপাভাজন হওয়ার জন্য, সরকারের পা চাটার জন্য এত শিক্ষক শুধু ভাইস চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, প্রক্টর এই ধরনের পদ আঁকড়ে রাখার জন্য ওরা নীতি বিসর্জন দিয়েছে, ওরা নৈতিকতা বিসর্জন দিয়েছে।
“এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে যদি ঘেরাও করে ছাত্ররা, যদি তাদেরকে টেনে নামায়-এটা অন্যায় নয়, এটা ন্যায়। অসত্যের বিরুদ্ধে, মিথ্যার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ন্যায়সঙ্গত। আজকে ছাত্রদেরকে ন্যায়সঙ্গত বিদ্রোহ করতে হবে শেখ হাসিনার পা চাটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রশাসনের বিরুদ্ধে।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য জোটের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একেএম ওয়াহেদুজ্জামান এ্যাপেলোকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে এই মানববন্ধন হয়।
সংগঠনের প্রধান অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুতফর রহমান, অধ্যাপক সিদ্দিুকর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, এগ্রিচালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের আবদুল করীম, শামীমুর রহমান শামীম, জাতীয়তাবাদী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।