বিশ্বে গত ২০ বছরে চরম আবহাওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। এতে বিশ্বব্যাপী মানুষের পাশাপাশি অর্থনীতিরও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। সামনে অপেক্ষা করে আছে আরও দুর্ভোগ।
সোমবার প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন একথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী এক দশকে পৃথিবীর জন্য তাপ প্রবাহ এবং খরা সবচয়ে বড় হুমকি হয়ে আছে।
আবহাওয়াকে উত্তপ্ত করে তোলা নানা গ্যাসের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। যার প্রভাবে নতুন নতুন অঞ্চলে দাবদাহ এবং খরা দেখা দেবে।
২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হওয়া দেশের তালিকায় এক নম্বরে আছে চীন (৫৭৭)। তারপরই যুক্তরাষ্ট্রের (৪৬৭) অবস্থান।
এরপর আছে যথাক্রমে ভারতে (৩২১), ফিলিপিন্স (৩০৪) ও ইন্দোনেশিয়া (২৭৮)। তালিকায় শীর্ষ ১০ দেশের ৮ টিই এশিয়ার।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস দিবস। দিবসটি উপলক্ষ্যে জাতিসংঘ এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দুই দশকে ৭,৩৪৮টি বড় বড় প্রকৃতিক দুর্যোগ পৃথিবীতে হানা দিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে ১০ লাখ ২৩ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় তিন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক রূপ নিয়েছে খরা, বন্যা, ভূমিকম্প, সুনামি, দাবানল এবং তাপদাহ।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিবের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি মামি মিজুতরি বলেন, ‘‘ভালো খবর হচ্ছে, দুর্যোগ আক্রান্ত অঞ্চলের বেশিভাগ জীবন রক্ষা করা গেছে। আর খারাপ খবর হচ্ছে, আরও বিস্তৃত অঞ্চলে বৈরী আবহাওয়ার কারণে অধিক সংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”
তিনি সব দেশের সরকারকে দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা দেওয়ার ব্যবস্থা আরও উন্নত করা এবং দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসের কৌশল বাস্তবায়নে অর্থ ব্যয় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
আগামী ১০ বছরে তাপপ্রবাহ বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন পরিবশে বিজ্ঞানীরা। এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা এত বেশি ছিল যে নতুন বিশ্বরেকর্ড হয়েছে। অতীতে কখনওই সেপ্টেম্বর মাসে তাপমাত্রা এত বেশি ছিল না।
আগামী পাঁচ বছর বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকবে এবং এমনকী গড় তাপমাত্রা সাময়িকভাবে প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়ে যেতে পারে।
বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়াকে সর্বোচ্চ সীমা ধরেছেন। তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি বাড়লে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসবে বলে সতর্ক করেছেন তারা।