ঢাকার শতকরা ৪৫ ভাগ মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে এবং বস্তি অঞ্চলে এই হার প্রায় ৭৪ শতাংশ বলে একটি গবেষণায় বলা হয়েছে।
গত জুলাই মাসের শুরু পর্যন্ত গবেষণা চালিয়ে এই চিত্র দেখেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), তারপর আরও তিন মাস কেটে গেছে।
গত ১৮ এপ্রিল থেকে ৫ জুলাইয়ের মধ্যে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। আইইডিসিআরের পক্ষে গবেষণাটি পরিচালনা করেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ-আইসিডিডিআর,বি। সহযোগিতায় ছিল উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ের ওই সময় পর্যন্ত ঢাকায় ৪৫ শতাংশ মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার পর তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল।
সোমবার গুলশানের লেইক শোর হোটেলে ঢাকায় কোভিড-১৯ এর প্রার্দুভাব ও বিস্তৃতি নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।
সেমিনারে বলা হয়, রাজধানী ঢাকার ২৫টি ওয়ার্ডে ১২ হাজার ৬৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশের করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে।
আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ শতাংশের বয়স ষাট বা তার বেশি। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ১৮ শতাংশ।
দ্বিতীয়বার কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার ‘কিছু তথ্যও বাংলাদেশে পাওয়া গেছে’ বলে সেমিনারে জানানো হয়।
সেমিনারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ের নানা তথ্য, উপাত্ত তুলে ধরেন।
গবেষণাটি চালানোর সময় আইইডিসিআরের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা।
বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, “এই তথ্য যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। এতদিন যেসব তথ্য দেওয়া হচ্ছিল তা ছিল যারা পরীক্ষা করাতে আসে তাদের ওপর ভিত্তি করে। বাড়িতে যারা ছিলেন তাদের কোনো তথ্য নেওয়া হয়নি।
“আমাদের এখানে রোগটা কতখানি ছড়িয়েছে, এই জরিপের মাধ্যমে বোঝা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি দশ জনে একজন আক্রান্ত। আমাদের তথ্যটাও কিন্তু কাছাকাছি ৯ দশমিক ৮। সুতরাং সারা বিশ্বের যে চিত্র আমাদেরও একই চিত্র।”
ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আক্রান্তদের ১ শতাংশ হাসপাতালে গেছেন।
“এর মানে হচ্ছে আমাদের এখানে আক্রান্তদের বেশিরভাগ মৃদু লক্ষণ-উপসর্গযুক্ত। জরিপে কোভিড-১৯ পজিটিভদের ৮২ শতাংশ লক্ষণ-উপসর্গহীন। তারা জানতই না তাদের করোনাভাইরাস পজিটিভ। এই ৮২ শতাংশকে কিন্তু আমরা চিনি না। তারা রোগটি ছড়াতে পারে। এ কারণে মাস্ক ব্যবহার করলে হয়ত আশপাশের মানুষের মধ্যে ছড়াবে না। এজন্য সাবধানতা বজায় রাখা জরুরি।”
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি ভার্চুয়াল মাধ্যমে সেমিনারে যুক্ত হন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কম।
“অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ভালো করেছে, ভালো আছে। এ পর্যন্ত ১ থেকে ১০৯টি ল্যাব হয়েছে, সেন্ট্রাল অক্সিজেন, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ অন্যান্য সব কিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
সেমিনারে ইউএসএআইডির বাংলাদেশ মিশনের পরিচালক ডেরিক এস ব্রাউন এবং আইসিডিডিআর,বির বাংলাদেশ নির্বাহী ডা. তাহমিদ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।