রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: যুক্তরাষ্ট্রকে আরও উদ্যোগী হতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

sheikh-hasina-stephen-beigun-151020-01

বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিজের দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, “আমরা অতি দ্রুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চাই। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমিতে পুর্নবাসনে সহযোগিতা করা।”

বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিভেন বিগান বৃহস্পতিবার গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাত করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী তাকে এ কথা বলেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বৈঠকের বিষয়ে জানান।

যুক্তরাষ্ট্রও রোহিঙ্গা সঙ্কটের ‘স্থায়ী সমাধান চায়’ জানিয়ে বিগান বলেন, তার দেশ এ বিষয়ে বাংলাদেশের জন্য সহযোগিতা অব্যহত রাখবে।

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।

গত বছর দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা আমাদের জন্য বাড়তি বোঝা। মিয়ানমারের কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, আমরা তাদের সাথে আলোচনা করছি। তাদের উচিত তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়া।”

বিপুল সংখ্যক বাস্ত্যুচ্যুত রোহিঙ্গার ক্যাম্পজীবন প্রলম্বিত হওয়ায় যে সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, সে কথাও বৈঠকে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “একটি চক্র রোহিঙ্গাদের বিভ্রান্ত করে সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত করার চেষ্টা করতে পারে। সুতারাং তাদের দ্রুত তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়া উচিত।”

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে।

মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি হলে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আবার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়া শুরু হবে বলেও বৈঠকে আশ্বাস দেন দেশটির উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বিগান বলেন, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সর্ম্পক বাড়াতে বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র।

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের মহামারী পরিস্থিতি এবং সেখানে দুই লাখ মানুষের মৃত্যুর কথাও উল্লেখ করেন বিগান।

তিনি বলেন, “আমরা ভ্যাকসিন সহজলভ্য করার খুব কাছাকাছি, আশা করি পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে ভ্যাকসিন বাজারে সহজলভ্য করা যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের এই উপমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘দুর্দান্ত স্থিতিশীলতা এবং অগ্রগতিরও’ প্রশংসা করেন বলে জানান ইহসানুল করিম।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানি খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চায় বলেও বৈঠকে জানিয়েছেন বিগান।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে, সে কথা মার্কিন উপমন্ত্রীকে বলেন শেখ হাসিনা।

দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তিনি বৈঠকে তুলে ধরেন।

অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Pin It