যুব বিশ্বকাপ আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পার্থক্য আকাশ-পাতাল। বাংলাদেশের যুব বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটাররা সেই চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠলেই কেবল তাদের জাতীয় দলে দেখতে চান রাসেল ডমিঙ্গো। বাংলাদেশের প্রধান কোচের হুঁশিয়ারি, তাড়াহুড়ো করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিলে তাদের ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
যে কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটেই বাংলাদেশ প্রথম বিশ্ব জয়ের স্বাদ পেয়েছে গত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। আকবর আলির নেতৃত্বে ট্রফি জয় করা দলটিতে একাগাদা দারুণ প্রতিভাবান ও সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার আছে। এই দলটিকে ঘিরে দারুণ ভবিষ্যতের ছবি আঁকছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
ডমিঙ্গো মনে করিয়ে দিলেন, সেই স্বপ্ন পূরণের পথটা সহজ নয়। ভবিষ্যত সম্ভাবনার রোমাঞ্চ থেকেই এই ক্রিকেটারদের কাউকে হয়তো খুব দ্রুতই জাতীয় দলে নেওয়ার দাবি উঠতে পারে নানা জায়গা থেকে। সেই আবেগের স্রোতে বাস্তবতার বাঁধ দিয়ে রাখলেন কোচ।
“অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটারদের গড়ে ওঠার জন্য যতটা সম্ভব সময় দেওয়া সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো একজন ক্রিকেটার, বিশেষ করে কোনো ব্যাটসম্যানকে খুব দ্রুতই দলে নেওয়া হলো, এরপর কয়েকটি ব্যর্থতায় আবার দুই-তিন বছরের জন্য ছুঁড়ে ফেলা হলো, এমন পরিস্থিতি কাম্য নয়। বরং এটা নিশ্চিত করতে হবে, সেই ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পারফর্ম করার মতো তৈরি হলেই কেবল যেন তাকে নেওয়া হয়।”
যুব পর্যায় থেকে তাদের জাতীয় পর্যায়ে পৌঁছানোর পথটাও বাতলে দিলেন ডমিঙ্গো। তার মতে, বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে, নিজেদের সমৃদ্ধ করে তবেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাদের পা রাখা উচিত।
“জাতীয় দলে জায়গা পাওয়াটা কঠিন হতে হবে। যে কোনো কাউকে জাতীয় দলে নেওয়া যাবে না। ঘরোয়া ক্রিকেটে বড় কিছু করে, ট্রেনিং ও ফিটনেসে শৃঙ্খলার প্রমাণ রেখে, জীবনাচরণ ভালো করে ও দলীয় সংস্কৃতিতে মানিয়ে রাখার মতো উপযুক্ত হতে হবে তাকে।”
উপমহাদেশের সংস্কৃতিতে তরুণ ক্রিকেটারদের হুট করেই জাতীয় দলে খেলিয়ে দেওয়ার প্রবণতা প্রবল। কিন্তু এমন কিছু করলে ফল উল্টো হতে পারে, সতর্ক করে দিলেন ডমিঙ্গো।
“অসাধারণ প্রতিভাবান কেউ না হলে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় থেকে কাউকে জাতীয় দলে নেওয়া উচিত নয়। কারণ, যুব পর্যায়ের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বড় পার্থক্য আছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় একজন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বোলারকে খেলা আর লর্ডসে জফ্রা আর্চার কিংবা ওয়াকায় মিচেল স্টার্ককে খেলার মধ্যে পার্থক্য অনেক। এটা অনেক বড় পদক্ষেপ।”
“এই ছেলেদের নিয়ে ধৈর্য রাখতে হবে। তাদেরকে উন্নতি করার সঠিক পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। দু-একটি সিরিজে দলের সঙ্গে রাখা, মাঝেমধ্যে জাতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে ট্রেনিং করানো, এভাবেই তৈরি করা। কিন্তু তার মানে এই নয় যে দলে নিয়ে নিতে হবে। ওদের নিয়ে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। কারণ তাড়াহুড়ো করলে সম্ভাবনাময় একটি ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।”