‘সেই এক রানই দেশের ক্রিকেটের চেহারা পাল্টে দিয়েছে’

image-357872-1603463541

দেশের ক্রিকেটের বাঁক বদলে যাদের অবদান রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হাসিবুল হোসেন শান্ত। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির ফাইনালে শেষ বলে এক রানের জন্য শান্তর যে ঐতিহাসিক দৌড়, তা আজও বাঙালির হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে আছে। ঐতিহাসিক সেই জয়ের ফলে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলার পাশাপাশি টেস্ট মর্যাদা পায়।

দেশের ক্রিকেটের পটপরিবর্তনে অবদান রাখা হাসিবুল হোসেন শান্ত ক্যারিয়ারের মধুর স্মৃতিময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন।

কেমন আছেন, এখন কী করছেন ?

হাসিবুল হোসেন শান্ত: আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। গত চার বছর ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অধীনে এজ লেভেলের ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করছি। করোনার কারণে এখন ক্রিকেট হান্টিং ক্যাম্প হচ্ছে না, বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রতিটি জেলা এবং বিভাগকে বলে দেয়া হয়েছে তাদের অধীনস্ত উদীয়মান সব ক্রিকেটারদের ব্যাটিং এবং বোলিংয়ের ভিডিও পাঠাতে। সেই ভিডিও দেখে সিলেকশন করছি। তরুণদের নিয়ে কাজ করে অনেক বেশি মজা পাচ্ছি।

আপনার পরিবারের কী অবস্থা?

হাসিবুল হোসেন শান্ত: আমার মেয়ে এবার ও লেভেল দেবে; আর ছেলেটা ছোট। সে এবার কেজিতে ভর্তি হবে। করোনার কারণে এখন তো স্কুল-কলেজ সব বন্ধ।

১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির ফাইনাল বাংলাদেশের ক্রিকেটের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। সেই ফাইনালে শেষ বলে এক রানের জন্য আপনার সেই ঐতিহাসিক দৌড় নিয়ে যদি কিছু বলেন।

হাসিবুল হোসেন শান্ত: আসলেই সেই সময়ে আমাদের সবার মধ্যেই একটা টার্গেট ছিল যে আইসিসি ট্রফিতে কোয়ালিফাই করতে হবে। আমাদের সেই টিমটাও অনেক ভালো ছিল, সবার মধ্যেই ভালো বোঝাপড়া ছিল। জেতার জন্য আমরা মরিয়া ছিলাম। এক বলে এক রান, আসলে চ্যাম্পিয়নশিপের একটা ব্যাপার ছিল। সেই এক রানের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছিল- আমাদের বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাওয়া, টেস্ট মর্যাদা পাওয়া; সেই ম্যাচে আমাদের একটাই টার্গেট ছিল যে জিতলে আমরা চ্যাম্পিয়ন হব।

তার আগেই আমরা কোয়ালিফাই করেছিলাম। হল্যান্ডের বিপক্ষে আকরাম ভাই অনেক ভালো ব্যাটিং করেছিলেন আর আমি ভালো বোলিং করেছিলাম। আমার কাছে মনে হয় ওই ম্যাচটাই আমাদের জন্য টার্নিং পয়েন্ট ছিল। সেই ম্যাচে না জিতলে আমরা কোয়ালিফাই করতে পারতাম না, আবার চ্যাম্পিনশিপেও আসতে পারতাম না। আমার মনে হয় ওই ম্যাচটা জেতার পরই আমাদের দেশের ক্রিকেটের পটপরিবর্তন হয়েছে। তারপর তো আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে আমরা সেমিফাইনাল জিতি। এরপর কেনিয়ার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওই টুর্নামেন্টে ভালো করা, বিশেষ করে ওই এক রানের জন্যই বাংলাদেশের ক্রিকেট আজ এখানে আসতে পেরেছে।

যখন মন খারাপ থাকে তখন কি সেই এক রানের ভিডিওটা দেখেন?

হাসিবুল হোসেন শান্ত: হ্যাঁ অবশ্যই। সেই ঐতিহাসিক লেগবাই। আসলে কিছু কিছু স্মৃতি আছে যা সব সময় আপনাকে আনন্দ দেয়। সেই মুহূর্তটাও সেরকম। মন খারাপ থাকলে দেখি। যতবারই দেখি শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। তবে অনেক বছর হয়েছে তো। এখন মন খারাপ হয় যখন দেখি আমাদের টিম খারাপ খেলে।

ক্লাব ক্রিকেটে আবাহনী মাঠে তো আপনার বেশ কিছু স্মৃতি আছে…?

হাসিবুল হোসেন শান্ত: আসলে সেই সময়ে আমাদের প্লেয়াদের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল, প্রত্যেকের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। আমরা আবেগ দিয়ে ক্রিকেট খেলতাম। আমাদের খেলাটায় অনেক জোকস ছিল। ফিল্ডিংয়ের সময়ে বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে হজমি-আচার খেতাম। আমাকে খাওয়ানোর জন্য আচারওয়ালা সেই মামুও পেছনে লেগে থাকত। আমি যেদিকেই ফিল্ডিং করতাম, তিনি সাইকেল নিয়ে সেদিকেই হাজির হতেন। দেখে আমি আর লোভ সামলাতে পারতাম না! আমাদের ক্রিকেটেও তখন পেশাদারিত্ব ছিল না। মজার ছলেই ক্রিকেট খেলেছি। এখন সেই আন্তরিকতা নেই। এখনকার খেলায় পেশাদারিত্ব চলে এসছে, টাকা-পয়সা বেশি। এখন সামান্য বিষয় নিয়ে প্লেয়ারদের মধ্যে রেষারেষিও তৈরি হয়।

মজার ছলেই তো জহুর এলাহী আপনার অঘটন ঘটাল…?

হাসিবুল হোসেন শান্ত: আসলে ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে আমি আবাহনীর হয়ে লিগে খুব ভালো বোলিং করেছিলাম। প্রতিটি ম্যাচেই উইকেট পেতাম। কলাবাগানের হয়ে জহুর এলাহী দুর্দান্ত ফর্মে ছিল। ওই ম্যাচে এলাহীকে আউট করার পর আমি আসলে ওকে গালি দেইনি। আমি শুধু বলেছি- আমি তোমাকে আউট করতে পেরেছি। এটা বলার পরই তাকিয়ে দেখি ওর ব্যাট আমার হাঁটুতে চলে এসেছে। ও কেন আমাকে ব্যাট ঘুরিয়ে মেরে দিল বুঝতেই পারলাম না। ব্যথায় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো অবস্থাও ছিল না। ক্ষোভ পুষে রেখে তো আর লাভ নেই। এরপর তো একসঙ্গে ওল্ড ডিওএইচএসের হয়ে খেলেছি।

সেই ঘটনার পর আপনিতো বেশ কিছুদিন ইনজুরিতে ছিলেন?

হাসিবুল হোসেন শান্ত: হ্যাঁ, আসলে সেই সময়ে ক্রিকেট বোর্ডে তেমন কোনো ফিজিও বা ট্রেনার ছিল না। যতটুকু পেরেছি নিজের মতো করেই কাভার করেছি। ট্রেনার ফিজিও যদি থাকত তাহলে আরও বেটার ট্রিটমেন্ট পেতাম, আরও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতে পারতাম। এতটা সময় খেলার বাইরে থাকতে হতো না।

সেই ঘটনার কারণেই কী আপনার ক্রিকেট ক্যারিয়ার বেশি লম্বা হয়নি?

হাসিবুল হোসেন শান্ত: সেটাতো অবশ্যই আছে। তাছাড়া জাতীয় পর্যায়ে ক্রিকেট খেলতে হলে লাইফস্টাইল যেমন হওয়া প্রয়োজন ছিল- সেই সময়ে আসলে বুঝিনি।

Pin It