এই সময়ে খাবার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে বিশেষ সচেতন হওয়া উচিত।
পিরিয়ডের সময় শরীর ও মনে দেখা দেয় পরিবর্তন। যার মূল কারণ হল হরমোনের ওঠানামা। খাবার হরমোনের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
পুষ্টি-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে পিরিয়ডের সময় যেসব খাবার বিরূপ প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কে জানানো হল।
দুগ্ধজাত খাবার: “পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে ক্যালসিয়ামের ভূমিকা সম্পর্কে জেনে থাকলেও এক্ষেত্রে দুধের তৈরি খাবার খুব একটা কার্যকর নয়” এমনটাই জানান যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ ইসাবেল স্মিথ।
দুধে প্রাকৃতিকভাবেই আরাসিডোনিক অ্যাসিড থাকে যা, প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন্স (এক ধরনের হরমোন)কে উদ্দীপিত করে। ফলে ব্যথার তীব্রতা বাড়ে।
পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে যদি নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধ খেতে থাকেন তাহলে খাদ্য তালিকা থেকে দুধ, দই বাদ দিতে হবে। এবং পুষ্টি উপাদান যেমন- সয়াবিন, শাক, বাদাম ও চিয়া বীজ খাওয়ার পরামর্শ দেন স্মিথ।
এছাড়া, পিএমএস’য়ের সমস্যা দূর করে যদি আইসক্রিম বা ঠাণ্ডা কিছু খেতে চান তাহলে তা যেন দুধবিহীন হয় সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
ক্যাফেইন: স্মিথ বলেন “পিরিয়ডের সময় শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বের হয় আয়রন যা শরীরে ক্লান্তি ও অবসাদ সৃষ্টি করে।”
তিনি আরও বলেন, “ক্যাফেইন শরীরের রক্তনালীকে সংকুচিত করে এবং এখানে জরায়ুও অন্তর্গত। ফলে ব্যথা আরো তীব্র হয়।”
তাই এই সময়ে কফি, চা ও সোডার পাশাপাশি ক্যাফেইনের অন্যান্য উৎস– চকলেট, কফি বা চকলেটের স্বাদের স্ন্যাক্স, পুষ্টিকর বার, মাল্টিভিটামিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ পানীয় এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।
যদি কোনোভাবেই এই ধরনের খাবার ছাড়া থাকতে না পারেন তাহলে সামান্য ক্যাফেইন সমৃদ্ধ বা ক্যাফেইন থাকেনা এমন পানীয় বেছে নিতে পারেন।
নোনতা খাবার: পিরিয়ডের সময় অনেককে দেখতে খানিকটা ফোলা লাগে। এর কারণ শরীরে পানি আসা।
স্মিথ সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “নোনতা খাবার শরীরে সোডিয়াম ও পানি সংরক্ষণ করে ফলে দেখতে খানিকটা ফোলাফোলা লাগে।”
নোনতা খাবার খুব বেশি পছন্দের হলে খাবার তালিকায় বাড়তি পানি যোগ করা উচিত। তবে সবচেয়ে ভালো হয় ওজন কমায় বা প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক- অ্যাস্পারাগাস, পার্সলে, বিট, লেটুস ও আদা সমৃদ্ধ পানীয় পান করা।
এছাড়াও, পছন্দের খাবারে কম সোডিয়াম সমৃদ্ধ বিকল্প খুঁজে বের করতে পারেন। এতে পেট দেখতে ফোলা লাগবে না।
কার্বোহাইড্রেইট সমৃদ্ধ খাবার: ‘পিরিয়ড শুরু হওয়ার দুএক সপ্তাহ আগ থেকে হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন ঘটে। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কমে।
হরমোনের এই পরিবর্তন শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় পানিভাব বাড়ায়, বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের আরেক পুষ্টিবিদ অ্যালিসা রামসে।
তিনি আরও বলেন, “নোনতা খাবারের মতো অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ আরও বেশি ফোলাভাব সৃষ্টি করে।”
‘রেড মিট’: পিরিয়ডের সময়ে দুর্বলতা দেখা দেয়। আর এই সময়ে আয়রন লাভের জন্য মাংস খাওয়ার উপকারিতার কথা শুনে থাকবেন।
তার মানে এই নয় যে, দুধের খাবার, বার্গার, মিটবল বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাবেন। কারণ, এতে থাকে অ্যারাচিডোনিক অ্যাসিড। এটা শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি পিরিয়ডের সময়কার ব্যথা বাড়িয়ে দেয়।
ছোলার বার্গার বা স্যামন মাছের বার্গার লৌহের পাশাপাশি অ্যান্টিইনফ্লামাটরি ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সরবারহ করে। তাই এমন ধরনের খাবার বেছে নেওয়া ভালো বলে পরমর্শ দেন স্মিথ।
এছাড়াও, এরসঙ্গে সবুজ শাকসবজি যোগ করুন। শক্তি বর্ধক লৌহও যোগ হবে।
চিনি-জাতীয় খাবার: প্রক্রিয়াজাত ও চিনি সমৃদ্ধ খাবার যেমন- কেক, বিস্কুট, চকোলেট বার, সোডা (নানান স্বাদযুক্ত দই, সস) ইত্যাদি খাবার ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সেরোটোনিনের মাত্রা কমিয়ে দেয় বলে জানান স্মিথ।
এছাড়াও, অতিরিক্ত চিনি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং মন মেজাজের ওপর প্রভাব ফেলে। তাছাড়া চিনিসমৃদ্ধ খাবার ক্লান্তিও বাড়ায়।
তাই এসময় চিনিসমৃদ্ধ খাবার এড়ানো ভালো।