করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি চলে যায় যে কারণে

Pic-5-samakal-5faf8e41aa357

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকেই ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদ নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছেন। অনেকে করোনামুক্ত হয়েও সেই ক্ষমতা সাময়িকভাবে হারিয়ে ফেলছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু করোনাভাইরাস নয়, যে কোনও ভাইরাসের সংক্রমণেই ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদক্ষমতা নষ্ট হতে পারে। কারণ কোভিডের মতো অন্য ভাইরাসগুলিও শ্বসনতন্ত্রের উপরের দিকে প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই সব তথ্য।

প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি মার্কিন ধনকুবের বিল গেটসের সংস্থা ‘দ্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন্স অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গ্যাভি)’-র একটি ফেসবুক পোস্টে কোভিডের মতো অন্য ভাইরাসগুলিও শ্বসনতন্ত্রের উপরের দিকে কীভাবে প্রভাব ফেলে তা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি অন্য ভাইরাসের প্রভাবেও কেন ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদক্ষমতা নষ্ট হতে পারে সে ব্যাপারে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তারা।

ব্রিটিশ রাইনোলজিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ক্লেয়ার হপকিন্স এবং ইউকে ইএনটি-র প্রেসিডেন্ট নির্মল কুমার সম্প্রতি একটি বিবৃতিতে বলেছেন, এটা অনেকেরই জানা ভাইরাসজনিত কারণে জ্বর ও সংক্রমণ হওয়ার পর রোগী যখন সংক্রমণ মুক্ত হয় তখনও তাদের নানাভাবে ভুগতে হয়। এগুলোকে ‘পোস্ট-ইনফেকশাস লসেস’ বলা হয়। ওই বিবৃতিতে তিনি আরও জানান, ২০০ এর বেশি ভাইরাস আছে যেগুলি শ্বসনতন্ত্রের উপরের দিকে সংক্রমণের মাধ্যমে ক্ষতি করে। তাই কোভিড রোগীরাও যে ঘ্রাণশক্তি বা স্বাদক্ষমতা হারাচ্ছেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নাকের নাসারন্ধ্র্রের ভিতরে ঘ্রাণশক্তি ব্যবস্থাকে যে বিশেষ ধরনের কোষগুলি সক্রিয় রাখে, কোভিড-১৯ ভাইরাস সেই কোষগুলিকেই সংক্রমিত করছে। সেই কোষগুলি তখন সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। ফলে তাদের যেটা মূল কাজ সেই ঘ্রাণশক্তিকে অক্ষুণ্ণ রাখার কাজে তাদের আর পাওয়া যায় না। সে জন্য ওই কোষগুলি আর জরুরি বার্তা পাঠাতে পারে না স্নায়ুগুলিকে। ফলে, কোভিড রোগীরা প্রাথমিকভাবে ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলেন। অন্য ভাইরাসের সংক্রমণেও এটা হতে পারে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সংক্রমণ শুরু হওয়ার ৫ মাস পরও খুব বেশি তাপমাত্রা বা জ্বর, সর্দি, হাঁচি, কাশির মতোই কোভিড রোগীরা প্রাথমিক পর্বে তাদের ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এটাকে বলা হয়‘অ্যানোস্মিয়া’। অনেক ক্ষেত্রে কোভিড রোগীদের স্বাদক্ষমতাও হারাতে দেখা গেছে। কেউ কেউ মিষ্টিকে নোনতা বলে মনে করছেন। কখনও মিষ্টিজাতীয় জিনিস তাদের কাছে তেতো লাগছে।

ব্রিটেনের একটি মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, কোভিড রোগীদের অর্ধেকই শুরুতেই ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলছেন। আবার ১৬ শতাংশ কোভিড রোগী সংক্রমণ মুক্ত হওয়ার পরেও তাদের ঘ্রাণশক্তি ফিরে পাননি। পরে বিভিন্ন গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়, কোভিড সংক্রমণের পর ‘ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদক্ষমতা হারানো খুব স্বাভাবিক’। প্রতি ১০ জন কোভিড রোগীর মধ্যে এক জনের চেয়েও বেশি ক্ষেত্রে দুটি লক্ষণই দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, অনেক গবেষণায় এটাও দেখা গেছে, কোভিড রোগীরা যে শুধুই ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলছেন তা-ই নয়; তারা কোনও একটি গন্ধের সঙ্গে অন্য ধরনের গন্ধকে গুলিয়েও ফেলছেন। কফির গন্ধও কারও কটূ লাগছে। কেউ আঁশটে গন্ধ পাচ্ছেন। কারও আবার নাকে পচা মাছের গন্ধ নাকে আসছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনার সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এটাও বলছেন, বিভিন্ন ধরনের স্নায়ুরোগ থেকেও অনেকে ঘ্রাণশক্তি হারাতে পারেন। তাই ঘ্রাণশক্তি হারালেই যে কোভিড সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ হবে তা খুব জোর দিয়ে বলা যাবে না।

Pin It