প্রতিদিন মাল্টিভিটামিন খাওয়ার প্রভাব

Vitamin

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধই খাওয়া উচিত নয়।

সুস্বাস্থ্য এক অমূল্য সম্পদ, তাই তা পাওয়ার জন্য করণীয় বিষয় নেহাত কম হবে না সেটাই স্বাভাবিক।

নিয়মিত শরীরচর্চা, সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ইত্যাদি থেকে মুক্তি নেই কারোরই।

সেই সঙ্গে বয়স বাড়ার সঙ্গে যোগ হবে আরও দায়িত্ব ও কর্তব্য। মাল্টিভিটামিন সেবন তাদের মধ্যে একটি।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল এই গুরুত্ব সম্পর্কে।

পুষ্টির ঘাটতি পূরণ

যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ ডা. জশ অ্যাক্স, ডিএনএম, ডিসিএনএস, ডিসি বলেন, “পুরো জীবনকালেই সুস্থ থাকতে হলে আপনার খাদ্যাভ্যাসে সুষম হতে হবে, তাতে থাকবে পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি। এগুলোই আপনাকে অধিকাংশ খনিজ ও পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করবে। তারপরও কিছু প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের যোগান ভোজ্য উৎস থেকে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, যে ঘাটতি পূরণ করা জরুরি।

বর্তমান সময়ে মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের একটা বড় অংশ হল প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেগুলো একদিকে ক্যালরি থাকে প্রচুর কিন্তু পুষ্টি উপাদানের বেলায় সেগুলো মাকাল ফল।

তাই সাপ্লিমেন্ট’য়ের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা সম্ভব নয়।

নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবন

যুক্তরাষ্ট্রের ‘মাইন্ডবডি’র ‘ন্যাশনাল থেরাপি প্র্যাকটিশনার অ্যান্ড ওয়েলনেস স্পেশালিস্ট’ লরেন ম্যাক-অ্যালিস্টার বলেন, “আমাদের পেশার অনেকেই পুষ্টি চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে ভোজ্য উৎসকে প্রাধান্য দিলেও মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকেও বিবেচনায় আনতেই হয়। সবসময় যা শরীরের এখনই প্রয়োজন তা ভোজ্য থেকে পাওয়া সম্ভব হয় না, ফলে ‘সাপ্লিমেন্ট’য়ের কথা ভাবতেই হয়।”

“আপনি কি ‘ভিগান’ নাকি ‘ভেজিটেরিয়ান’? গর্ভধারণ করছেন? ‘নার্সিং’ পেশায় আছেন? বয়স কি ৫০ এর বেশি?

একজন মানুষের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা, বয়স ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে বিশেষ পুষ্টি উপাদানের চাহিদা জড়িত। আপনার ঠিক কী প্রয়োজন তা নিয়ে নিশ্চিত না হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কর্মশক্তির যোগান

প্রতিটি মানুষেরই আছে নিজস্ব ব্যস্ততা আর দিন শেষে কমবেশি সবাই ক্লান্ত। কর্মব্যস্ত জীবনযাত্রায় টিকে থাকার প্রয়োজনে ‘মাল্টিভিটামিন’ অনেকাংশে জরুরি।

‘লাইফ এক্সটেনশন’য়ের ‘এডুকেশন সাইনটিস্ট’ ডা. ভেনেসা পেভি, এনডি বলেন, “কারোহাইড্রেইট, চর্বি আর প্রোটিনের মাঝে আটকে থাকা কর্মশক্তিকে কাজে লাগাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে ভিটামিন বি। আর মাল্টিভিটামিন থেকে পাওয়া যায় ঠিক সেটাই, যা পানিতে দ্রবণীয়। এই ভিটামিন বি কোষকে জ্বালানি যোগায় যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া শক্তি যোগাবে। পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে কার্যক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতেও ভিটামিন বি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।”

ক্যান্সারের ঝুঁকি

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়েলনেস এক্সপার্ট’ এমিলি পের্জ বলেন, “মাল্টিভিটামিন’য়ের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে এর কার্যকারীতা। চিকিৎসকের পরামর্শ মাফিক সেবন করা সঠিক মাত্রার মাল্টিভিটামিন প্রতিদিন যোগাবে ‘ফোলিক অ্যাসিড’, যা অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তকণিকাকে পুরো শরীরে ছুটে বেড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি অবসাদ ও রক্তশূন্যতা কাটায়, গর্ভবতী নারীদের ভ্রণের খাবার যোগায় এবং রোগ থেকে দূরে রাখে। বেশিরভাগ মানুষেই পর্যাপ্ত পত্রল সবজি খায় না, তাই ‘ফোলেট’য়ের ঘাটতি থেকে যায়। মাল্টিভিটামিন’য়ের মাধ্যমে সেই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।

হৃদযন্ত্রে শক্তি যোগায়

অসংখ্য মানুষের হৃদযন্ত্র পুরোপুরি স্বাস্থ্যবান না হওয়ার পরেও কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে।

ডা. অ্যাক্স বলেন, “এই অঙ্গটির সুস্বাস্থ্যের চিন্তা প্রতিটি মানুষের প্রধান চিন্তা হওয়া উচিত। হৃদযন্ত্রের জন্য সহায়ক খাদ্যাভ্যাস তো থাকবেই, পাশাপাশি ‘মাল্টিভিটামিন’য়ের মাধ্যমে যদি হৃদযন্ত্রকে বাড়তি শক্তি যোগানো যায় তবে তা আরও উপকারী হবে। ভিটামিন ডি থ্রি, ভিটামিন কে টু, ফোলেট এবং ভিটামিন বি টুয়েলভ সবগুলো হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।”

স্মৃতিশক্তি বাড়াতে

একটা সময় আপনার মস্তিষ্ক ও স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর, নিত্যনতুন সৃষ্টিশীল চিন্তা ঘুম কেড়ে নিত। কিন্তু এখন রাতের বেলা সকালের নাস্তায় কি ছিল তা মনে করতেই বেগ পেতে হয়, জানা বিষয়গুলোও মনে করতে বেগ পেতে হয়। স্বভাবতই বয়সের সঙ্গে মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমছে। তবে সঠিক ‘মাল্টিভিটামিন’ এই ক্ষয় কমাতে পারে।

ডা পেভি বলেন, “ভিটামিন বি ফাইভ বা প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড হল ‘অ্যাসিটাইলকোলিন’য়ের উৎপাদনের সহায়ক উপাদান। ‘অ্যাসিটাইলকোলিন’ হল একটি ‘নিউরোট্রান্সমিটার’ যা স্মৃতিশক্তির জন্য দায়ী। ভিটামিন বি সিক্স আর বি নাইন যথাক্রমে তৈরি করে ‘সেরোটনিন’ আর ‘ডোপামিন’ হরমোন, যা আমাদের মনে আনন্দ সৃষ্টি করে।”

“ভিটামিন বি টুয়েলভ আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এটি ‘মায়েলিন শিথ’ নামক আবরণের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে, যা মস্তিষ্কের কোষকে সুরক্ষা দেয়।”

সাবধানতা

মাল্টিভিটামিনের এতো উপকারিতা জানার পর সবাই হয়ত ছুটবেন এর পেছনেই। তবে খেয়াল রাখতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজেই মাল্টিভিটামিন নিয়ে ডাক্তারি করা প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ।

অতিরিক্ত মাত্রায় যেকোনো স্বাস্থ্যকর বস্তুও স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়, মাল্টিভিটামিন এর ব্যাতিক্রম নয়।

আবার মালি্টভিটামিনের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও আছে। যেমন প্রসাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়া যা স্বাভাবিক ঘটনা। এর কারণ হল যে উপাদানগুলো শরীরের জন্য অপ্রয়োজনীয়, তা প্রসাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। আর সেকারণেই প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে যায়।

Pin It