নতুন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, ভাস্কর্য আর মূর্তি- দুটো এক জিনিস নয়, বিষয়টি নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলামের হুমকি এবং তার পাল্টায় সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবির মধ্যেই প্রতিমন্ত্রীর এমন মন্তব্য এল।
রোববার দুপুরে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রথম অফিস করেন গত সপ্তাহে শপথ নেওয়া ফরিদুল হক খান। সেখানে এক মতবিনিময় সভায় তাকে ভাস্কর্য বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।
উত্তরে তিনি বলেন, “ভাস্কর্য আর মূর্তি এক জিনিস নয়। পাকিস্থানে যান, ভারতে যান, সারা বিশ্বে যে কোনো রাষ্ট্রে যান না কেন, সব জায়গাতে ভাস্কর্য আছে।”
“ভাস্কর্য যদি মূর্তি হয়, তাহলে টাকার ভেতরে বঙ্গবন্ধুর ছবি আছে, আগে যারা ছিলেন তাদের ছবি ছিল, সেগুলো পকেটে নিয়ে তো সবাই ঘুরে বেড়ায়।”
ভাস্কর্য আর মূর্তি নিয়ে ‘বোঝার ভুল’ আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মিশরে গিয়ে দেখেছি, সৌদি আরবেও আছে। বাংলাদেশে যারা এটা নিয়ে আলোচনা করছে, তাদের চিন্তা করতে হবে যে, মূর্তি আর ভাস্কর্য এক নয়।”
এ বিষয়গুলো সবাইকে বোঝাতে পারলে একটি সমাধান আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন জামালপুরের ইসলামপুরের এমপি ফরিদুল হক খান।
তিনি বলেন, “আমিতো নতুন এই মন্ত্রণালয়ে, এ বিষয় নিয়ে চিন্তা করব, ভাববো এবং পরামর্শক্রমে কীভাবে করলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে…. সার্বিক দিক থেকে এ সমস্ত বিষয় যাতে কেউ না করতে পারে, করার সুযোগ না পায়,…. সবকিছু চিন্তা করে অবশ্যই আমি করব এবং আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা চাই।”
ভাস্কর্য আর মূর্তি যদি আলাদা বিবেচনা করা হয়, তাহলে এর অর্থ কী এমন হতে পারে যে ভাস্কর্য রক্ষা করা যেতে পারে, আর মূর্তি… এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “না না মোটেই না। … সনাতন ধর্মের যারা আছেন, তারা তাদের ধর্ম পালন করবেন। এটা নিয়ে তো কোনোদিন কিছু হয়নি।”
১৯৯১ সালে হিন্দুত্ববাদীরা যখন ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙল, তখন উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন জানিয়ে ফরিদুল হক বলেন, সে সময় তার এলাকায় সনাতন ধর্মের একটি মূর্তিও তিনি ‘ভাঙতে দেননি’।
“আমরা যে ধর্মেরই হই না কেন, যার যার ধর্ম পালন করব। আমরা সকলেই কমবেশি জানি, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু দুষ্ট লোক থাকে, যারা তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের সব দুষ্ট চক্রকে কঠোর হস্তে দমন করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।”
হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী গত শুক্রবার হাটহাজারীতে এক মাহফিল থেকে হুমকি দেন, যে কোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়া হবে’, কেননা তার ভাষায়, তার ‘আব্বার’ ভাস্কর্যও যদি স্থাপন করা হয়, সেটা ‘শরিয়ত সম্মত হবে না’।
ভাস্কর্যের বিরোধিতা যারা করছেন, তাদের উদ্দেশে কী বার্তা দেবেন- এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমি আপনাদের কাছে স্পষ্ট করে বলেছি, এ বিষয়গুলো নিয়ে আমি বসব, আলোচনা করব, চিন্তা করব…।
“ইতোমধ্যে আপনারা শুনেছেন, আমাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভাই কিন্তু তার বক্তব্য দিয়েছেন।”
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা যারা করছেন, তাদের ‘অন্য উদ্দেশ্য’ রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের শনিবার বলেন, “ইসলাম আমাদের ধর্ম। এ ধর্মের বিধি-বিধানে ধর্মীয় ইস্যুতে বাড়াবাড়ির সুযোগ নেই। আসুন প্রকৃত ইসলাম চর্চা করি। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকি। ধর্মকে রাজনৈতিক ইস্যুতে ব্যবহার না করি।”
সেই প্রসঙ্গ টেনে ফরিদুল হক খান বলেন, “অতএব আপনারা (সাংবাদিক) একটু ধৈর্য্য ধরুন। আমরা অবশ্যই এগুলোর একটি সমাধানের জন্য… যে ধরনের কাজ করা প্রয়োজন, তা আলোচনা সাপেক্ষে করব ইনশাল্লাহ।”
‘অস্থির না হওয়ার’ পরামর্শ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “প্রত্যেকটা জিনিসকে সূক্ষ্মভাবে, নিজেদের বিবেক দিয়ে বিবেচনা করে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমরা কাজ করব।”