খেলাপির পথে সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা

image-371357-1607198265

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলেও কোনো ঋণ নতুন করে খেলাপি করা হচ্ছে না। ঋণ গ্রহীতাদের সক্ষমতা কমায় কিস্তি পরিশোধও আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ কমেছে দেড় হাজার কোটি টাকা। কিন্তু খেলাপি ঋণের আগের ধাপে রয়েছে আরও প্রায় সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা। আগামী জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এই ছয় মাসের মধ্যে এসব ঋণ আদায় বা নবায়ন না হলেই সেগুলো খেলাপিতে পরিণত হবে।

খেলাপি ঋণ ও প্রভিশনিং বিষয়ক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ প্রতিবেদনটি তৈরি করে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, খেলাপি ঋণের আগের ধাপ হিসাবে রয়েছে স্পেশাল ম্যানশন অ্যাকাউন্ট বা এসএমএ। কোনো ঋণ খেলাপি হওয়ার উপক্রম হলে এ হিসাবে স্থানান্তর করে বিশেষ তদারকি করা হয়, যাতে ঋণটি খেলাপি না হয়। কোনো ঋণের কিস্তি নিয়মিত পরিশোধিত না হলে ঋণটি এসএমএতে স্থানান্তর করা হয়। কিস্তি পরিশোধের দিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ঋণটি নিম্নমান হিসাবে খেলাপি হবে। মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে নয় মাস পর খেলাপি হবে।

এ হিসাবে যে সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা এসএমএতে রয়েছে সেগুলোর মধ্যে চলতি ঋণ জুনের পর থেকে এবং মেয়াদি ঋণ সেপ্টেম্বরের পর থেকে খেলাপি তালিকায় চলে যাবে। করোনার কারণে এখন ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের স্থবিরতা চলছে। ফলে গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমে গেছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করেছে। একই সঙ্গে ঋণ শোধে ব্যর্থতার কারণে কোনো ঋণকে নতুন করে খেলাপি না করার নির্দেশ দিয়েছে। এ সময়সীমা যদি আর না বাড়ে তাহলে জানুয়ারি থেকে কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। আর কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলেই নির্ধারিত সময় পর তা খেলাপি হবে।

এদিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) এসএমএতে থাকা ঋণ হিসাবগুলোকে খেলাপি হিসেবে মনে করে। তাদের মতে, এসএমএতে যেসব ঋণ হিসাব স্থানান্তরিত হয় সেগুলো নিয়মিত হয় খুবই কম। কখনও নিয়মিত ঋণে রূপান্তর হলেও পরে আবার খেলাপি হয়ে যায়। এ কারণে তারা এসব ঋণকে খেলাপি হিসেবেই মনে করে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এসএম মানেই এক ধরনের খেলাপি। আগের নিয়ম তিন মাসেই খেলাপি হতো। এখন সেটি ছয় মাস করায় একটু দেরিতে খেলাপি হবে। তবে করোনার প্রভাবে খেলাপি ঋণ বাড়বে। খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি থামাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংক ও উদ্যোক্তাদের সতর্ক হতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের স্থিতি ছিল ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিয়মিত ঋণ রয়েছে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। সাড়ে ৯৪ হাজার কোটি টাকা রয়েছে খেলাপি ঋণ। যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বাকি সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ বা অনিয়মিত ঋণ। যা বিশেষ হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। সরকারি খাতের প্রায় সব ব্যাংক ও কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে এ ঋণের পরিমাণ বেশি।

সূত্র জানায়, আগামী জানুয়ারি থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। এদিকে করোনার কারণে এখনও ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হয়নি। এর মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ হানা দিয়েছে। ফলে ঋণ পরিশোধ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে আগামী জুনের পর খেলাপি ঋণের আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Pin It