প্রতিনিয়ত বাণিজ্যঘাটতি বাড়ছিল। ফলে অর্থনীতিতে একধরনের অস্বস্তি তৈরি হচ্ছিল। করোনাকালীন সময়ে রপ্তানি কমে যাওয়ায় বাণিজ্যঘাটতি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। তবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে রপ্তানি বাণিজ্য। অন্যদিকে করোনার সময়ে আমদানি কম হওয়ায় বাণিজ্যঘাটতি কমেছে। চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রথম চার মাস জুলাই থেকে অক্টোবরে বাণিজ্যঘাটতি ৪৩ শতাংশ কমে এসেছে। অপরদিকে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতি থেকে এখন উদ্বৃত্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় কমেছে। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার কারণে বৈদেশিক বাণিজ্য প্রায় বন্ধ ছিল। ফলে বিলাসী ও প্রয়োজনীয় কোনো পণ্যই তেমন আমদানি হয়নি। আবার অভ্যন্তরীণ বাজারে বিনিয়োগের চাহিদা ছিল না বললেই চলে। এতে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিও কমেছে। এর সঙ্গে অর্থবছরের প্রথম থেকেই রপ্তানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে। করোনার শুরুতে যেভাবে রপ্তানি কমতে শুরু করেছিল তাতে সবাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল যে, বাণিজ্যঘাটতি আরো বাড়বে। তবে তেমনটা হয়নি। অন্যদিকে এ সময়ে দেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণও আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে; যা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাণিজ্যঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ৩২৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ২৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্যঘাটতি ছিল ৫৭২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অর্থাত্ এ সময়ে বাণিজ্যঘাটতি আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৪৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার কমেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ হলো ২১ হাজার ১৯০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) আমদানিতে ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময়ে ১ হাজার ৫৭৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারের আমদানি হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। আলোচ্য চার মাসে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ১০ শতাংশ। এসময়ে ১ হাজার ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলারের রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৬ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা।
এদিকে আলোচ্য সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সও বেড়েছে। রপ্তানি বাড়ায় এবং আমদানিজনিত চাপ কম থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে গেছে। সম্প্রতি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। লেনদেন ভারসাম্যের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৪০৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে চলতি হিসাবের ঘাটতি ছিল ১৫২ কোটি ১০ লাখ ডলার।
অন্যদিকে সেবা খাতের বাণিজ্যঘাটতিও কমেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে এ খাতের ঘাটতি ছিল ১১১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। চলতি বছরে তা কমে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে নেমে এসেছে। মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্যঘাটতি পরিমাপ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে কোটি ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাংলাদেশে এসেছে। তবে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১০৪ কোটি ডলার। এ হিসেবে চার মাসে এফডিআই কমেছে ৩০ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
উল্লেখ্য, রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় যেটুকু বেশি, তার পার্থক্যই বাণিজ্যঘাটতি। আর চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।