আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাভাবিকভাবে দেশ চলছিল। হঠাৎ করে ভাস্কর্য নিয়ে একটা রাজনীতি শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ভোলা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন ও জেলার মডেল মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। জেলা প্রশাসন ও গণপূর্ত বিভাগ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ভাস্কর্য নিয়ে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে যে মূলনীতির ওপর বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। জিয়াউর রহমান তা নষ্ট করেছে। এই রাষ্ট্র ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ক্ষমতায় এসে এই রাষ্ট্রীয় মূলনীতিকে তছনছ করেছে। বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ রেখে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ করেছেন। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। তিনি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দিয়েছেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, পৃথিবীর প্রথম বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় তাদের জাতির পিতার ভাস্কর্য রয়েছে। আমাদের মহানবীর জন্মস্থান সৌদি আরবে আছে মুষ্টিবদ্ধ হাত এবং ঘোড়ার ছবি। ইরানে বিখ্যাত কবি ওমর খৈয়াম, ফেরদৌস এর ভাস্কর্য রয়েছে। ইরাকে আলীবাবা চল্লিশ চোর এর বুদ্ধিমতী নারী মর্জিনা; তারও ভাস্কর্য আছে।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের নিয়ে আছে ন্যাশনাল মনুমেন্ট। তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্টের নামে ভাস্কর্য রয়েছে। তিউনেশিয়ায় সেখানেও ভাস্কর্য আছে। বাংলাদেশেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আগ থেকেই ভাস্কর্য আছে। তারপরেও ভাস্কর্য নিয়ে কেন বিতর্ক, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলার মাটি ও মানুষ থাকবে, ততদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির হৃদয়ের মনিকোঠায় বিরাজ করবেন। আজকে মাদরাসায় যারা পড়ান, সেখানেও তারা অন্যায় কাজ করে, কিন্তু সেগুলো নিয়ে সোচ্চার হয়না। সোচ্চার হয় ভাস্কর্য নিয়ে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বিজয়ের আনন্দ ক্ষণস্থায়ী, পরাজয়ের গ্লানি চিরস্থায়ী। ৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় লাভ করেছি। কিন্তু আমরা তা ভুলে গেছি। আর যারা পরাজিত তারা কিন্তু ভোলানি। তারা ওৎ পেতে আছে। যার কারণে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, নিষ্পাপ রাসেলকেও হত্যা করেছে। যাতে বঙ্গবন্ধুর রক্তের কেউ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে না পারে।
আজ যারা ভাস্কর্য বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন, তারা সবাই পড়ালেখা জানা লোক। তাদের বলছি, পৃথিবীর বহু ইসলামিক রাষ্ট্রে ভাস্কর্য রয়েছে। তা দেখে আসুন তার পর মন্তব্য করুন।
এ সময় তোফায়েল আহমেদ পদ্মাসেতুসহ দেশের উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে।ভোলায় প্রচুর গ্যাস সম্পদ মজুদ রয়েছে। এই গ্যাস ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই ভোলায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ভোলা থেকে এখন জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। আরও বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। কিছু দিনের মধ্যেই ভোলায় ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এ ছাড়া ভোলার বাগমারায় গড়ে তোলা হবে ইকোনোমিক জোন। ভোলা-বরিশাল-লক্ষ্মীপুর ব্রিজ হলে ভোলা হবে মংলা, পায়রা আর চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগ স্থল। তখন ভোলা হবে দেশের মধ্যে অন্যতম সেরা জেলা।
১৫ আগস্টের ঘটনা স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ এই সহচর বলেন, সেদিন জাতির পিতার দুই কন্যা দেশের বাইরে থাকায় তারা বেঁচে যান। আমরা তার জ্যেষ্ঠ কন্যার হাতে আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে দিয়েছি। সেই পতাকা হাতে নিয়ে নিষ্ঠার সাথে জেল, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করে বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও আপোষহীনভাবে বাংলাদেশকে পরিচালনা করে পৃথিবীর মধ্যে একটি গর্বিত জাতিতে পরিণত করেছেন।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করে চলছেন। তার নেতৃত্বে এই করোনার মধ্যেও আমরাও এশিয়ার মধ্যে এগিয়ে রয়েছি। ভারতের চেয়ে আমাদের মাথাপিছু আয় বেশি। মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদেরও তিনি সাহায্য করছেন। গরিব-দুখী মানুষ যাতে দুবেলা খেতে পারেন সে ব্যবস্থাও প্রধানমন্ত্রী করেছেন। ব্যবসায়ীরা যাতে আর্থিকভাবে সহায়তা পায় সেই ব্যবস্থাও করেছেন।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের হলরুমে অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. মাসুদ আলম ছিদ্দিক এর সভাপতিত্বে আরো বক্তৃতা করেন জেলা পুলিশ সুপার সরকার মো. কায়সার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মমিন টুলু, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোশারেফ হোসেন, জেলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী শরিফ উদ্দিন আহমেদ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন-মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার দোস্ত মাহমুদ,ডেপুটি কমান্ডার শফিকুল ইসলাম, ভোলা উপজেলা কমান্ডার মো. অহিদুর রহমান প্রমুখ। পরে দোয়া মোনাজাত করা হয়।