বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজয়ের ৪৯তম বার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ম্যুরাল উন্মোচন করা হয়েছে, যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের ঘটনা এবং ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের শতবর্ষ পূর্তি সামনে রেখে হলটির প্রাঙ্গণে ম্যুরালটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিধন্য ফজলুল হক মুসলিম হল প্রাঙ্গণে ‘বিজয় বাতায়ন’ নামে একটি স্থাপনাও তৈরি করা হয়েছে।
বুধবার বিজয় দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান এই দুটি স্মৃতি-স্মারক উদ্বোধন করেন।
শহীদুল্লাহ্ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. হুমায়ুন আখতারের পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী শিল্পী মো. গোলাম রসূল সোহাগ ম্যুরালটি তৈরি করেন। একই শিল্পী ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহ্ মো. মাসুমের পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানে ‘বিজয় বাতায়ন’ স্থাপনাটি তৈরি করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “এই দুটি স্মৃতি স্মারকে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক পটভূমি প্রতিফলিত হয়েছে। স্থাপনাগুলো ছোট হলেও এগুলো অল্প সময়ে অনেক কথা বলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন একটি দেখবেন তখন মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তারা অনুপ্রেরণা পাবেন।”
ম্যুরাল ও ‘বিজয় বাতায়ন’র ঐতিহাসিক তাৎপর্য বর্ণনা করতে গিয়ে উপাচার্য বলেন, “১৯৭১ সালে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছি, সেটির প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। আর ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্র আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষ করে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ফজলুল হক মুসলিম হলে তৎকালীন পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু এসএম হলের ছাত্র (অনাবাসিক) হলেও এই ফজলুল হক মুসলিম হল ও শহীদুল্লাহ্ হলের প্রাঙ্গণ তার পদচারণায় মুখরিত থাকত।
“ছাত্রনেতা শেখ মুজিব ও তার সহযোগীরা এই হলের প্রাঙ্গণে বসে ভাষা আন্দোলন ও জাতি গঠনের নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করতেন। অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে উপজীব্য করেই বাঙালি জাতিসত্ত্বা বিনির্মাণে এখান থেকে তারা ঐক্যবদ্ধ হতেন। তাদের অসামান্য আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীনতার ৪৯তম বছরে পদার্পণ করেছি। জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে নির্মিত এই স্থাপনা তাদের স্মৃতিকে জাগ্রত রাখবে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার, ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহ্ মো. মাসুমসহ হল দুটির আবাসিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।