যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান কিছু নীতি উল্টে দেওয়া শুরু করেছেন।
“যে সংকটগুলোর মুখে পড়েছি আমরা তা মোকাবেলার ক্ষেত্রে নষ্ট করার সময় নেই,” অভিষেকের পর হোয়াইট হাউসের দিকে যাওয়ার সময় এক টুইটে এমনটি বলেছেন বাইডেন।
বিবিসি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ১৫টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, এরমধ্যে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় সরকারের আরও তৎপর হওয়ার বিষয়টি প্রথমে রেখেছেন তিনি।
অন্যান্য আদেশের মাধ্যমে আবহাওয়া পরিবর্তন ও অভিবাসনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানও উল্টে দিয়েছেন তিনি।
এই নির্বাহী আদেশগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রেসিডেন্ট বাইডেন পদক্ষেপ নেবেন- শুধু ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুতর ক্ষতিগুলো উল্টে দিতেই না, পাশাপাশি আমাদের দেশের এগিয়ে যাওয়া শুরু করতেও।”
বিবৃতিতে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের চার লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলার জন্য ধারাবাহিক কিছু পদক্ষেপ কার্যকর করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের সব দপ্তর ও স্থাপনায় মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক হবে।
মহামারী মোকাবেলায় নেওয়া পদক্ষেপগুলো সমন্বয় করতে নতুন একটি দপ্তর স্থাপন করা হবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত করবে যুক্তরাষ্ট্র।
ডব্লিউএইচওর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফের যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মহামারী মোকাবেলায় সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’, তিনি এমনটি বলেছেন বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইকে তার প্রশাসনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন।
২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু করতে একটি নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করেছেন তিনি। গত বছর এই চুক্তি থেকে আনু্ষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন ট্রাম্প।
বিতর্কিত কিস্টোন এক্সএল পাইপলাইনের ক্ষেত্রে দেওয়া প্রেসিডেন্টের অনুমোদনও প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসী আমেরিকানরা ও পরিবেশবাদীরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই অনুমোদনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিল।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জেন সাকি জানিয়েছেন, প্রথম বিদেশি নেতা হিসেবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে শুক্রবার ফোন করবেন বাইডেন, তখন কিস্টোন পাইপলাইনের বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।
প্রস্তাবিত পাইপলাইনটি বেসরকারি অর্থায়নে নির্মাণের কথা ছিল। এর ব্যয় ধরা হয়েছিল আট বিলিয়ন ডলার। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে কানাডার আলবার্টা থেকে দৈনিক আট লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল ভারী অপরিশোধিত তেল নেব্রাস্কায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
২০১৫ সালে এই পাইপলাইন নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস অনুমোদন দিলেও তাতে ভিটো দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, কিন্তু তার সিদ্ধান্ত উল্টে দিয়েছিলেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাইডেন মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর দেয়াল নির্মাণে তহবিল ছাড়ে সহায়তা করা ট্রাম্প প্রশাসনের ‘জরুরি ঘোষণা’ বাতিল করেছেন। এর পাশাপাশি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কিছু দেশের ওপর আরোপ করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তার অন্যান্য নির্বাহী আদেশগুলো বর্ণ ও লিঙ্গ সমতা বিষয়ক বলে জানিয়েছে বিবিসি।