তাসকিন আহমেদের বাঁ হাতে চোটের জায়গাটা এখনও কাপড়ের মতো কিছু একটা দিয়ে মোড়ানো। সেটি নিয়েই তিনি বেশ আগ্রাসী বোলিং করলেন নেটে। অনুশীলনে শরিফুল ইসলামের আগুন ঝরানো বোলিং তো এখন নিয়মিত দৃশ্য। নেটে মেহেদি হাসানও অফ স্পিনে বেশ ভোগালেন ব্যাটসম্যানদের। এক পাশের নেটে লম্বা সময় বোলিং করে গেলেন তাইজুল ইসলাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডের আগে অনুশীলনে চলল যেন নিজেদের মেলে ধরার প্রতিযোগিতা। শেষ পর্যন্ত সুযোগ মিলবে কজনের ?
সিরিজ জয় করা ওয়ানডে শেষে অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছিলেন, ‘কিছু পরিবর্তন নিশ্চিতভাবেই আসবে।’ তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে যে ‘নিশ্চিত’ বলে কিছু নেই, সেটি আরেক দফায় নিশ্চিত হয়ে যায় পরের দিনই। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হোসেন একটি অনুষ্ঠানে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, খুব বেশি পরিবর্তন আনা হবে না শেষ ম্যাচে।
একাদশ নিয়ে স্বয়ং বোর্ড সভাপতির এভাবে কথা বলা, সেটিও এরকম একটি আপাত উত্তেজনাহীন সিরিজ নিয়ে, বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে এসব বিরল। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটা একরকম ‘সূর্য পূর্ব দিকে ওঠা আর পশ্চিম দিকে অস্ত’ যাওয়ার মতোই নিত্য দিনের ঘটনা। সভাপতির দায়িত্বে নাজমুল হাসানের সাত বছরের মেয়াদে তার একাদশ নিয়ে কথা বলা, একাদশে হস্তক্ষেপ, ম্যাচের আগে ‘প্রিভিউ’ দেওয়া, ম্যাচের পর ‘রিভিউ’, মাঠের ক্রিকেটের কৌশল কাটাছেঁড়া করতে দেখা গেছে অসংখ্যবার।
বোর্ড সভাপতি যখন বলেন, খুব বেশি পরিবর্তনের সুযোগ নেই, বাংলাদেশের বাস্তবতায় তখন টিম ম্যানেজমেন্টের ভিন্ন কিছু করার থাকে সামান্যই। তাই আগের পরিকল্পনা যেমনই থাকুক, পরিবর্তন এখন খুব বেশি হচ্ছে না ধরে নেওয়াই নিরাপদ। আগের কথা থেকে একটু সরে এসে তামিমও সেরকম ইঙ্গিতই দিলেন রোববার।
শেষ ম্যাচের একাদশ বাছাই বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে অধিনায়ক তামিম ও কোচ ডমিঙ্গোর জন্য।
“আমরা খুব অল্প কিছু করতে পারি। তবে যারা আসবে, আমি নিশ্চিত, তারাও ম্যাচ জেতাতে পারে, অতীতে যখন সুযোগ পেয়েছে, ভালো করেছে। আমাদের ড্রেসিং রুমে তাড়না প্রচণ্ড, সবাই মাঠে নেমে ভালো করতে চায়।”এমনিতে প্রথম দুই ম্যাচে দলের যা পারফরম্যান্স, তাতে পারফরম্যান্সের কারণে একাদশে পরিবর্তনের সুযোগ সামান্যই। হয়তো আঙুল তোলা যেতে পারে নাজমুল হোসেন শান্ত ও রুবেল হোসেনের দিকে।
তিন নম্বরে খেলার সুযোগ পেয়ে শান্ত প্রথম দুই ম্যাচে হতাশ করেছেন। বড় রান তাড়া ও রান রেটের চাপ না থাকার পরও মেলে ধরতে পারেননি নিজেকে। করেন ১ ও ১৭। দুই ম্যাচেই আউট আলগা শটে।
তবে এত আলোচনার জন্ম দিয়ে যাকে তিন নম্বরে নামানো হলো, তাকে তিন ইনিংস খেলার আগেই বাদ দেওয়ার সম্ভাবনা কমই। শান্ত তাই থাকছেন বলেই ধরে নেওয়া যায়।
দলের দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্সেও রুবেল প্রথম ম্যাচে ছিলেন বিবর্ণ। পরের ম্যাচে একটু নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন বটে, কিন্তু কার্যকারিতা ও ধার ততটা চোখে পড়েনি। পারফরম্যান্স হয়তো বাদ দেওয়ার মতো নয়, তবে শেষ ম্যাচে অন্য কাউকে বাজিয়ে দেখতে হলে রুবেলকে বিশ্রাম অন্তত দেওয়াই যায়। সেখানে তাসকিন আহমেদ, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনদের বিবেচনা করা হবে।
টানা দুই ম্যাচ খেলার পর তরুণ হাসান মাহমুদকে বিশ্রাম দেওয়া যেতে পারে। শরিফুলকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ দেওয়ার উপযুক্ত মঞ্চ হতে পারে খর্বশক্তির এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লড়াই।
মুস্তাফিজুর রহমানকে টেস্ট দলের বিবেচনায় রাখার সম্ভাবনা কম। সেদিক থেকে শেষ ম্যাচে তাকে বিশ্রাম দেওয়ার সম্ভাবনাও হয়তো কম। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে বিশ্রাম দিলে সেখানেও সুযোগ দেওয়া যেতে পারে শরিফুলকে।
একাদশে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ থাকবে হয়তো মেহেদি হাসানকে নিয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সে এই অলরাউন্ডারকে নিয়ে ক্রমেই বাড়ছে দেশের ক্রিকেটের আশা। সম্ভাব্য ‘অল্প’ পরিবর্তনের মধ্যে কি তার জায়গা হবে?
সব মিলিয়ে সিরিজের শেষ ম্যাচের ফল নিয়ে আগ্রহ যেমনই থাকুক, একাদশ নিয়ে কৌতূহল থাকবে প্রবল।