ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য প্রস্তুতি ম্যাচ, বিসিবি একাদশের বেশ কজনের জন্য এটি দল নির্বাচনী ম্যাচ। মাঠে থাকা দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন ও হাবিবুল বাশারের সামনে সুযোগটি দারুণভাবে কাজে লাগালেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ। নতুন বলে গতি-বাউন্স আর পুরনো বলে খানিকটা রিভার্স সুইংয়ের ঝলক দেখিয়ে তার শিকার ৩ উইকেট। রিশাদ হোসেন আপাতত টেস্ট দলের ধারেকাছে নেই। তবে ৫ উইকেট নিয়ে এই লেগ স্পিনারও ছাপ রাখলেন নিজের অগ্রগতির।
বিসিবি একাদশের দারুণ বোলিংয়ের দিনে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রস্তুতি ভালো হলো কেবল ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের। সাড়ে চার ঘণ্টা উইকেটে কাটিয়ে ক্যারিবিয়ান অধিনায়কের রান ৮৫। সামান্য রির্ভাস সুইং করা খালেদের ডেলিভারি তাকে পেতে দেয়নি সেঞ্চুরি।
প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট ২৫৭ রানে। বিসিবি একাদশ দিন শেষ করেছে কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৪ রান নিয়ে।
বিসিবি একাদশের ম্যাচ শুরুর ১১ জনে ছিলেন না রিশাদ। পানির বোতল হাতে তখন অতিরিক্ত ফিল্ডারের কাজ করছিলেন। তবে এই ম্যাচে নেই সুনির্দিষ্ট একাদশের ব্যাপার। রিশাদ মাঠে নামেন লাঞ্চের একটু আগে। দিনশেষে তিনিই সফলতম বোলার ৭৫ রানে ৫ উইকেট নিয়ে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আদর্শ প্রস্তুতির সুযোগ না দিতে এই ম্যাচের বিসিবি স্কোয়াডে রাখা হয়নি কোনো বাঁহাতি স্পিনার বা স্পেশালিস্ট অফ স্পিনার। ম্যাচের উইকেটও দেওয়া হয়নি স্পিন সহায়ক। পিচ ছিল ঘাসে ভরা, সবই যদিও মরা ঘাস। সেই উইকেটেও অনভিজ্ঞ রিশাদের লেগ স্পিন, দুই অনিয়মিত স্পিনার শাহাদাত হোসেন ও সাইফ হাসানের আনকোরা অফ স্পিন ভোগালো ক্যারিবিয়ানদের।
বাদামী ঘাসের উইকেটে টার্ন খুব বেশি পাননি রিশাদ। টার্ন তার শক্তির জায়গা নয়ও। গতিবৈচিত্র আর টপ স্পিন দিয়েই মূলত ধরেছেন শিকার। দুই বাঁহাতি শেন মোজলি ও কাইল মেয়ার্সকে বোল্ড করেন দারুণ ডেলিভারিতে। বাকি ৩ উইকেটে ব্যাটসম্যানদের অবদানই বেশি।
উইকেটে সহায়তা যা কিছু ছিল, তা কাজে লাগিয়ে সকালে বেশ প্রাণবন্ত বোলিং করেন খালেদ। উইকেট না পেলেও বেশ আগ্রাসী ছিলেন এই পেসার। প্রথম পানি পানের বিরতি পর্যন্ত এক প্রান্ত থেকে টানা সাত ওভার বোলিং করেন। বিরতির পরও করেন আরেকটি। তার টানা স্পেল ছিল ৮-২-২২-০। আরেক প্রান্তে পেসার মুকিদুল ইসলামও খারাপ করেননি।
দুই পেসারকে সামলে প্রথম সেশনটা দারুণ কাটিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্র্যাথওয়েট ও জন ক্যাম্পবেল উদ্বোধনী জুটিতে তোলেন ৬৭ রান। প্রথম সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ছিল ১ উইকেটে ৮৯। দ্বিতীয় সেশনেই তারা হারায় ৫ উইকেট।
খালেদের অফ স্টাম্প ঘেষা বাড়তি লাফানো দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে শুরু হয় ম্যাচ। বাড়তি বাউন্সে তিনি কয়েকবার অস্বস্তিতে ফেলেন ব্র্যাথওয়েট-ক্যাম্পবেলকে। ব্র্যাথওয়েটের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে অল্পের জন্য বল স্লিপের হাতে যায়নি দুইবার।
মুকিদুলের বলে দুর্দান্ত এক অন ড্রাইভে চার মেরে শুরুর অস্বস্তি ঝেরে ফেলেন ব্র্যাথওয়েট। খালেদকে স্কয়ার ড্রাইভে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে চার মেরে ক্যাম্পবেল পান প্রথম বাউন্ডারির দেখা।
তৃতীয় পেসার শাহিন আলমের আলগা বোলিংয়ে ক্যারিবিয়ানদের রানের গতি বাড়ে আরেকটু। তরুণ এই পেসারকে পরপর দুই ওভারে কাভার ড্রাইভে চার মারেন ক্যাম্পবেল, পরের ওভারে ছক্কা। প্রথম ৩ ওভারে ২২ রান দেওয়ার পর সরিয়ে দেওয়া হয় শাহিনকে।
ক্যাম্পবেলের সৌজন্যে দলের রান বাড়তে থাকে দ্রুত। ব্র্যাথওয়েটকে ২২ রানে রেখে তিনি পৌঁছে যান ৪৪ রানে। দ্রুত রান তোলার তাড়নাই শেষ পর্যন্ত কাল হয় তার। শাহাদাতকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি মিড অনে। শেষ হয় ৭ চার ও ১ ছক্কার ইনিংস।
ব্র্যাথওয়েট খেলেন তার মতোই ধীরে-সুস্থে। রানের চেয়ে তার মনোযোগ বেশি ছিল উইকেটে সময় কাটাতে। বাজে বল কাজে লাগাতেও ভুল করেননি।
লাঞ্চের একটু আগে অবশ্য তাকে ২৫ রানে ফেরানোর একটা সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। নিজের বলে ক্যাচ ছাড়েন রিশাদ।
( দুই নির্বাচকের সামনে দারুণ বোলিং করেছেন খালেদ আহমেদ )
অধিনায়ক এক প্রান্তে থাকলেও লাঞ্চের পর শুরু হয় অন্যদের আসা-যাওয়া। রিশাদের টপ স্পিনারের মতো দারুণ একটি ডেলিভারিতে বোল্ড হন বাঁহাতি শেন মোজলি। খালেদের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালিয়ে বিদায় নেন এনক্রুমা বনার, উইকেটের পেছনে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন নুরুল হাসান সোহান।জার্মেইন ব্ল্যাকউড গিয়েই শট খেলতে শুরু করেন। ঝুঁকির সেই পথে টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। রিশাদের একটি শর্ট বল পুল করতে গিয়ে তুলে দেন আকাশে। স্লিপ থেকে শর্ট ফাইন লেগে দৌড়ে সহজ ক্যাচটি নেন ইয়াসির আলি চৌধুরি।
পরের ব্যাটসম্যান কাভেম হজ রানই করতে পারেননি। খালেদের বাড়তি লাফানো বল হজের গ্লাভসে ছোবল দিয়ে যায় গালিতে রিশাদের হাতে। ১ উইকেটে ১১০ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান হয়ে যায় ৫ উইকেটে ১৩১।
ব্র্যাথওয়েটকে এরপর কিছুটা সঙ্গ দেন জশুয়া দা সিলভা। তবে থিতু হওয়ার পর উইকেট ছুঁড়ে আসেন জশুয়াও (২০)। সাইফকে তুলে মারতে গিয়ে কিপার-ব্যাটসম্যান ধরা পড়েন লং অনে।
বিপর্যয়ের মধ্যে পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নেন আটে নামা কাইল মেয়ার্স। উইকেটের চারপাশে খেলে দারুণ কিছু বাউন্ডারি আদায় করে নেন এই বাঁহাতি। ব্র্যাথওয়েট যথারীতি ছিলেন টিকে। দুজনে মিলে সপ্তম উইকেটে যোগ করেন ৫৩ রান।
৩৯ বলে ৮ চারে ৪০ রান করা মেয়ার্সকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন রিশাদ। তবে আক্রমণের সেই ধারা ধরে রাখেন নয়ে নামা আলজারি জোসেফও। ৩ চার ও ২ ছক্কায় এই ফাস্ট বোলার করেন ২৫। রিশাদকে দুটি ছক্কা মারার পর উইকেটও উপহার দিয়ে ফেরেন তিনি।
এরপর ব্র্যাথওয়েটের ১৮৭ বলের ইনিংস থামান খালেদ। শেষ উইকেটটি নিয়ে রিশাদ পূর্ণ করেন ৫ উইকেট।
বাংলাদেশের টেস্ট দলের জন্য নির্বাচনী মহড়ার আরেকটি ধাপ শুরু হয় বিসিবি একাদশ ব্যাটিংয়ে নামার পর। সাইফ হাসান ও সাদমান ইসলামের মধ্যে বেশি ভালো করবেন যিনি, প্রথম টেস্টে তামিম ইকবালের সঙ্গী হওয়ার লড়াইয়েও এগিয়ে থাকবেন তিনি।
শেষ বিকেলে রাকিম কর্নওয়ালের বলে লং অফ দিয়ে ছক্কা মেরেছেন সাইফ। দুজনই দিন শেষ করেছেন নির্বিঘ্নে। দ্বিতীয় দিনে তাদের পালা নিজেদের মেলে ধরার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৭৯.১ ওভারে ২৫৭ (ব্র্যাথওয়েট ৮৫, ক্যাম্পবেল ৪৪, মোজলি ১৫, বনার ২, ব্ল্যাকউড ৯, হজ ০, জশুয়া ২০, মেয়ার্স ৪০, জোসেফ ২৫, রোচ ৫*, গ্যাব্রিয়েল ৫; খালেদ ২১-৫-৪৬-৩, মুকিদুল ১৪-৫-৩৬-০, শাহিন ৮-০-৩৯-০, শাহাদাত ৫-১-২৯-১, রিশাদ ২৩.১-৩-৭৫-৫, সাইফ ৮-১-২৬-১)।
বিসিবি একাদশ: ৮ ওভারে ২৪/০(সাইফ ১৫*, সাদমান ৩*; রোচ ৩-২-৫-০, গ্যাব্রিয়েল ৪-২-৯-০, কর্নওয়াল ১-০-৯-০)।