পুরান ঢাকা মানেই জিহ্বায় জল আনা সুস্বাদু সব খাবারদাবার। তবে এখানকার যত সুস্বাদু খাবার রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে কদর বেশি বিরিয়ানির। অনুষ্ঠান কিংবা উৎসব যেকোনো কিছুতেই এ খাবারের স্বাদ নিতে ব্যাকুল থাকেন অনেকে। আবার অনেকেই সকালের নাস্তাও সেরে নেন বিরিয়ানি দিয়ে।
রাজধানীর দামিনামি বিভিন্ন এলাকায় নতুন বিরিয়ানির দোকান গড়ে উঠলেও তেমন জমাতে পারেনি কেউ। তবে এটির আসল স্বাদ পেতে হলে যেতে হবে পুরান ঢাকায়। রাত যত বাড়ে তত জমে উঠে এখানকার দোকানের কাচ্চি ও চিকেন বিরিয়ানি।
ঐতিহ্যবাহী বিরিয়ানির দোকানগুলো পুরান ঢাকায় অবস্থিত। এখানকার কাজী আলাউদ্দিন রোড, নাজিমুদ্দিন রোড, উর্দু রোড, বংশাল, সিদ্দিকবাজার, চকবাজার, রায়সাহেব বাজার, নবাবপুর, কোতোয়ালি, ইসলামপুর, ওয়ারী, মালিটোলা ও মৌলভীবাজার এলাকায় বিরিয়ানির দোকানগুলো গড়ে উঠেছে। পুরান ঢাকার অনেকেই সকালের নাশতা, দুপুর ও রাতের খাবার সারেন বিরিয়ানি দিয়ে। আর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিরিয়ানির স্বাদ নিতে আসা লোকজনের ভিড় জমে দুপুর ও রাতের খাবারের সময়।
স্বাদের জন্য কাজী আলাউদ্দিন রোডের হাজির বিরিয়ানি, হানিফ বিরিয়ানি, নাজিমুদ্দিন রোডের মামুন বিরিয়ানি, ইসলামপুরের কাশ্মীর বিরিয়ানি হাউস, বিক্রমপুরে কাচ্চি বিরিয়ানি, মৌলভীবাজার রোডের নান্না মিয়ার বিরিয়ানি, উর্দু রোডের রয়েল বিরিয়ানি, সুরিটোলার রহিম বিরিয়ানি বিখ্যাত। এ ছাড়া জনসন রোডের স্টার হোটেল, কালামস কিচেন, ক্যাফে ইউসুফ, ইসলামিয়া রেস্তোরাঁ, আল-ইসলাম রেস্টুরেন্ট, মতিঝিল ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, স্টার হোটেল, বাবুর্চিখানা ও নর্থ সাউথ রোডের হোটেল আল-রাজ্জাকেরও কদর কম নয়। সকাল থেকে শুরু হয়েছে সারারাত খোলা থাকে এসব দোকান।
এসব দোকান ও হোটেলে ‘হাফ প্লেট’ কাচ্চি ও চিকেন বিরিয়ানি ১১০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। ‘ফুল প্লেট’ ১৫০ থেকে ৩৮০ টাকা পর্যন্ত। কাচ্চি বিরিয়ানির পাশাপাশি মোরগ-পোলাও, খাসির রেজালা ও টিকিয়াও মিলবে। এ ছাড়া ডেজার্ট হিসেবে ফিরনি, দধি ও বোরহানি পাওয়া যায়।
সরেজমিনে পুরান ঢাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বিরিয়ানির দোকানে ভোজনরসিকদের ভিড়। তবে বেশিরভাগ বিরিয়ানির দোকানের আয়তন ছোট হওয়ায় অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে খাওয়ার অপেক্ষা করছেন। আবার কেউ কেউ প্যাকেটে করে বিরিয়ানি বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন।
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আলাউদ্দিন রোডের হানিফ বিরিয়ানির দোকানে পরিবার নিয়ে খেতে এসেছেন রাজ্জাক মিয়া। তিনি বলেন, ‘হানিফ বিরিয়ানি আরও কয়েকবার খেয়েছি। এ বিরিয়ানির স্বাদের তুলনা হয় না। তাই মাঝে মধ্যেই খেতে আসি পরিবার নিয়ে। তবে এখানকার দোকানগুলোর আয়তন ছোট হওয়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বেশিরভাগ সময়।’
পুরান ঢাকার বিভিন্ন বিরিয়ানি দোকানের মালিকেরা জানান, ১৯৩৯ সালের দিকে পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোডে বিরিয়ানির দোকান দেন হাজি মোহাম্মদ হোসেন। তারপর তার ছেলে হাজি গোলাম হোসেন বাবার ব্যবসার হাল ধরেন। ধীরে ধীরে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে হাজির বিরিয়ানির নামডাক।
ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী মিনিফা মিম বন্ধুদের নিয়ে হাজির বিরিয়ানি খেতে এসেছেন। তিনি বলেন, বেশিরভাগ সময় বন্ধুদের নিয়ে আমি বিরিয়ানি থেকে আসি। আমার বাসা পুরান ঢাকাতে তাই বিরিয়ানিটাই আমার বেশি পছন্দ। বেশিরভাগ সময় তো সকালের নাশতাও বিরিয়ানি দিয়ে করা হয় আমদের।
হাজির বিরিয়ানির কর্মীরা বলেন, সকালে একটু কম চাপ থাকলেও ১২টার পর থেকে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে। এই ক্রেতাদের অধিকাংশই পুরান ঢাকার বাসিন্দা। ক্রেতারা শুধু খেয়েই যান না, বাসা বাড়িতে পারিবারের জন্যও নিয়ে যান।