সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণহারে গাছ কাটা হবে না এবং মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে আগামী বর্ষায় সেখানে আরও অন্তত ১ হাজার গাছ লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব ও ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়)’ প্রকল্পের পরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণহারে গাছ কাটা হবে এমন প্রচারণা চালিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে অন্য কেউ লাইন ধরে বিভিন্ন গাছে ক্রস চিহ্ন দিয়ে রেখেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
শনিবার (০৮ মে) বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা নিয়ে খণ্ডিত তথ্য প্রচার করে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন প্রকল্প পরিচালক হাবিবুল ইসলাম।
পরিস্থিতি ঘোটালে করতে অন্য কেউ উদ্যানের বিভিন্ন গাছে ক্রসচিহ্ন দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যতদূর আমরা জানতে পেরেছি আন্দোলনের স্বার্থে অনেকগুলো গাছে কে বা কারা ওই রকম ক্রস চিহ্ন দিয়ে রাখছে। বিষয়টা এমন ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে এগুলো সব লাইন ধরে কাটার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। আসলে ঘটনা তা নয়।
গণহারে উদ্যানের গাছ কাটা হবে না জানিয়ে হাবিবুল ইসলাম বলেন, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে গিয়ে স্বল্প সংখ্যক গাছ কাটা পড়বে। যখনই যেই গাছ কাটা পড়বে তার বিপরীতে ১০টা গাছ রোপণ করা হবে। আসছে বর্ষাতেই উদ্যানে গাছ লাগানো শুরু হবে ও অন্তত এক হাজার গাছ লাগানো হবে।
‘আমরা গাছের বৈচিত্র্যতা আনতে চাইছি। আমাদের পরিকল্পনা আছে- এখন যেমন গরমে কৃষ্ণচূড়া ফুল হচ্ছে। এগুলো তো সারা বছর ফুল হয় না। আবার অনেক গাছ আছে যেগুলো অন্য মৌসুমে ফুল হয়। সব রকম গাছের সমাহার করা হবে। যাতে কোনো না কোনো গাছে ফুল থাকে সারা বছরই, পুরো উদ্যান জুড়ে। ’
তিনি বলেন, এখন গাছের বিন্যাসটা যেমন ঠিক নেই, তেমনি গাছের উচ্চতাও ঠিক নেই। স্থাপনা অনুযায়ী উচ্চতার গাছ হবে। আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে নির্মিত স্থাপনাগুলো যাতে গাছের আড়ালে না পড়ে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ে নান্দনিক স্থাপনার পাশাপাশি গাছে গাছে গোটা এলাকা ঢেকে দেওয়া হবে জানিয়ে হাবিবুল ইসলাম বলেন, পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সৌন্দর্য আসবে। কাজের মাঝ পথে একটু দৃষ্টিকটু লাগতে পারে।
তিনি বলেন, একটু সময় দিতে হবে। একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে এবং মনে রাখতে হবে সরকার একেবারেই বেখেয়ালে কোনো কাজ করে না, কাজটা গুছিয়ে করে।
ভাত-রুটির হোটেল নয়, ‘ফুড কিয়স্ক’ হচ্ছে
উদ্যানে ঘুরতে আসা লোকদের টয়লেট বা স্যানিটেশন, সাময়িক বসা এবং হালকা স্ন্যাক্স, চা-কফি সুবিধার জন্য পুরো উদ্যানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ৭টি ‘ফুড কিয়স্ক’ তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম বলেন, একটা কথা বারবার বলা হচ্ছে যে এখানে খাবারের দোকান করা হচ্ছে। এগুলো ভাত রুটির দোকান না।
হাবিবুল ইসলাম বলেন, উদ্যানে ঘুরতে এসে এখানকার নানা স্থাপনা দেখতে দেখতে একজন মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন, তার একটু পানির পিপাসা পেতে পারে বা তার টয়লেট ফ্যাসিলিটির প্রয়োজন হতে পারে। তখন যাতে তিনি একটা জায়গায় বসে বিশ্রাম নিতে পারেন। এজন্য পুরো উদ্যানে ৭টি ‘ফুড কিয়স্ক’ তৈরি করা হবে। যেখানে পানি ও হালকা স্ন্যাক্সেরও ব্যবস্থা থাকবে।
বাংলাদেশে কোথাও বেড়াতে গেলে অনেক সময় ভালো শৌচাগার থাকে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফুড কিয়স্কগুলোর পেছনের দিকে নারী এবং পুরুষদের জন্য পৃথক টয়লেট ফ্যাসিলিটি থাকবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ, আধুনিক নগর উপযোগী সবুজের আবহে আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তোলা ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ’ (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
হাবিবুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘোরার পরিবেশ নেই। উদ্যানের একদিক দিয়ে প্রবেশ করে অন্য দিক দিয়ে নিরাপদে বের হয়ে যাওয়ার পরিবেশও নেই। এখানে ভবঘুরে ও নানা রকমের মতলববাজ লোকের আনাগোনা।
তিনি বলেন, আমরা চাইছি একটা মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে পুরো উদ্যানটাকে একটা আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে। যেখানে পাকিস্তান শাসনবিরোধী ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রাম ও ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত ভাস্কর্য স্থাপন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন, পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ভাস্কর্য স্থাপন, ইন্দিরা মঞ্চ নির্মাণ, ওয়াটার বডি ও ফাউন্টেইন নির্মাণ, ভূগর্ভস্থ ৫০০ গাড়ির কার পার্কিং ও শিশু পার্ক নির্মাণসহ বিভিন্ন নির্মাণ কাজ চলমান।