আগামী বাজেটে পণ্য আমদানিতে অগ্রিম আয়করে (অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স বা এআইটি) বড় পরিবর্তন আসছে। চার স্তরের পরিবর্তে ৬ স্তরে এআইটি আদায় করা হবে। সর্বোচ্চ হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ করা হচ্ছে। স্থানীয় শিল্পকে সহায়তা দিতে কাঁচামালের কর কমানো হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য, অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এক ধরনের কর, যা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আমদানিকৃত পণ্য থেকে আদায় করা হয়। ভোগ্যপণ্য আমদানিতে এই কর আদায় করা হয় না। অনিবন্ধিত আমদানিকারকদের করের আওতায় আনতে ২০০৭ সালে এই কর ব্যবস্থা চালু করা হয়।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, উৎসে কর ও অগ্রিম আয়কর থেকে সিংহভাগ আয়কর আদায় হয়। তাই আগামী বাজেটে এ দুটি খাতকে অধিকতর যৌক্তিকীকরণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যেমন দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা বাড়াতে অগ্রিম আয়করে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে বিলাসী পণ্যে। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগের মতোই ১৮৯টি আইটেমে কর থাকছে না।
বর্তমানে পণ্যভেদে ৪ স্তরে অগ্রিম আয়কর আদায় করা হয়। এগুলো হচ্ছে ০, ২, ৩ ও ৫ শতাংশ। আগামী বাজেটে এটিকে ৬ স্তরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে ০, ১, ২, ৩, ৫, ২০ শতাংশ। এর বাইরে স্টিল আইটেমে টনপ্রতি ৫০০ টাকা এবং ভুটান থেকে নির্দিষ্ট আইটেমের পণ্য আমদানিতে এআইটি দিতে হয় না।
আগামী বাজেটে সমুদ্রগামী জাহাজের অগ্রিম আয়কর ১ শতাংশ করা হচ্ছে। বর্তমানে এটি ২ শতাংশ আছে। এছাড়া ইথাইল অ্যালকোহল, স্পিরিট, আঙ্গুরের ওয়াইন ও মার্ক, হুইস্কি, রাম অ্যান্ড টাফিয়া, জিন অ্যান্ড জেনেভা, ভদকা, মদজাতীয় পণ্য এবং সুগন্ধি আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ২০ শতাংশ করা হচ্ছে। স্থানীয় সিমেন্ট শিল্পের ক্লিংকার আমদানিতে উৎসে কর ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হচ্ছে।
এছাড়া জীবিত প্রাণী যেমন গরু, ছাগল, মহিষ, মুরগি ও একদিন বয়সি মুরগির বাচ্চা, হাঁস, টারকি, স্বাদু পানি ও সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ির মতো খাদ্যসামগ্রীকে আগের মতোই অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্যের তালিকায় রাখা হয়েছে। তালিকায় আরও আছে আলু, পেঁয়াজ, বাদাম, ডাল, ভুট্টা, আটা-ময়দা, সয়াবিন বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, সরিষার বীজ, শাকসবজির বীজ, সুগার বিট, ওয়েল কেক, পশু খাদ্য ও ভিটামিনসামগ্রী, ইউরিয়া সার, জিংক সালফেট, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, তুলা, কম্পিউটার প্রিন্টার ও কালি, প্রিন্টারের যন্ত্রাংশ মোমিরা কার্ডসহ মোট ১৮৯ আইটেমের পণ্যকে অব্যাহতির তালিকায় রাখা হয়েছে।
অবশ্য এ তালিকা থেকে দেশে উৎপাদিত বিদেশি ফল ও সবজি বাদ দেওয়া হয়েছে। যেমন ক্যাপসিকাম, ব্রুকলি, গাজর। এসব পণ্য আনতে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হবে।
আর ২ শতাংশ অগ্রিম কর বহাল রয়েছে যেসব পণ্যে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রসুন, ক্লিংকার, কেরোসিন, জেট ফুয়েল, ফার্নেস ওয়েল, বিউটেন, প্রপেন, ডিজেল, পেট্রোলিয়াম, বিটুমিন, রড, এঙ্গেল, বার, মোবাইল ফোন, মোবাইল ফোনের সার্কিট বোর্ড, মাদার বোর্ড, কিপ্যাড, এয়ারফোন, মাইক্রোফোনসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি এবং পশম ছাড়া ভেড়ার চামড়া।
এর বাইরে চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, মটরডাল, সব ধরনের ডাল, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ভুট্টা, আটা-ময়দা, লবণ, পরিশোধিত তেল, চিনি, কালো গোলমরিচ, দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, পাট, তুলা, সুতাসহ সব ধরনের ফল সরবরাহের ক্ষেত্রে ভিত্তিমূল্যের ওপর ২ শতাংশ হারে উৎসে কর বহাল থাকছে।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও গবেষণা সংস্থা বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) চেয়ারম্যান আবুল কাশেম খান বলেন, কোনো কর অগ্রিম নেওয়ার যৌক্তিকতাই নেই। হোক সেটা অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বা আগাম কর (এটি)। এ করোনা পরিস্থিতিতে সেটা তো আরও ভয়াবহ। এটি বা এআইটি নেওয়া হলে ব্যবসার ক্যাশ ফ্লো কমে যায়। তখন ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
ঠিকাদার-সরবরাহকারীদের কর বাড়ছে : পণ্য সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর হারে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। যেমন ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর হার ৩ শতাংশ করা হচ্ছে। বর্তমানে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত উৎসে করের দুটি স্লাব আছে। ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ২ শতাংশ এবং ১৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৩ শতাংশ।
এছাড়া আগামী বাজেটে ৫০ লাখ টাকা থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত উৎসে কর হার ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। বর্তমানে ৫০ লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ৪ শতাংশ উৎসে কর বহাল আছে। আর এক কোটি টাকার বেশি সরবরাহের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কর বহাল আছে। আসন্ন বাজেটে ২ কোটি টাকার বেশি সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর ৭ শতাংশ করা হচ্ছে।