রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করার পাশাপাশি ছোঁয়াচে রোগ থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা যোগায় ভিটামিন ডি।
সূর্যালোকের সংস্পর্শে শরীরে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়। মাশরুম, সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম ভিটামিন ডি’র উৎস। এছাড়া ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধের সাহায্যে এই ভিটামিনের অভাব পূরণ করা যায়।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সাহায্য করে এই ভিটামিন।
তবে ভিটামিন ডি’র স্বল্পতার কারণে আরও নানান সমস্যা হতে পারে যেগুলো হয়ত অনেকেরই জানা নেই।
শ্বাস প্রশ্বাসের জটিলতা বৃদ্ধি পেতে পারে
শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে ভিটামিন ডি’য়ের সম্পর্ক রয়েছে। এর ঘাটতির কারণে শ্বাসনালীতে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। অপর্যাপ্ততা অনেক সময় অ্যাজমা বা হাঁপানির সমস্যা হতে পারে।
২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২১ হাজার জন প্রাপ্ত বয়স্ক হাঁপানি রোগীর ২৫ শতাংশ ভিটামিন ডি’য়ের স্বল্পতায় ভুগছিল এবং এদের সুস্থতার জন্য নিয়মিত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হয়েছে।
ইজরাইলের ‘মেয়ার মেডিকেল সেন্টার’য়ের ‘অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিকাল ইমিউনোলজি’ বিভাগের করা এই গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে, ‘ইট দিস’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, কারও শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে বা শ্বাসনালীর সংক্রমণ দেখা দিলে সম্পূরক হিসেবে ভিটামিন ডি’র অভাব আছে কিনা তা পরীক্ষা করে সেই মতো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার উচিত।
মূত্রনালীর সংক্রমণ
ভিটামিন ডি ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে যেমন- ঠাণ্ড-কাশি ইত্যাদি।
‘বিএমএজে আর্কাইভস অব ডিজিজ ইন চাইল্ডহুড’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায়, ভিটামিন ডি’য়ের স্বল্পতা শিশুদের মূত্রনালীর সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায় এবং এটা নারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
২০১৩ সালে তুরষ্কের ‘আদিয়ামান ইউনিভার্সিটি স্কুল’য়ের গবেষকদের করা এই গবেষণার ফলাফল থেকে আরও জানা যায়, যে সকল নারীর মূত্রনালীতে পুনরায় সংক্রমণ দেখা দিয়েছে তাদের দেহে এই ভিটামিনের স্বল্পতা ছিল।
অকালে জন্ম ঝুঁকি
অকালে অজন্মের ঝুঁকি অর্থাৎ ৩৭ সপ্তাহের আগেই গর্ভের শিশুর জন্ম প্রতিরোধ করা যেতে পারে ভিটামিন ডিয়ের মাধ্যমে।
‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’ সাময়িকীতে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ পিটার্সবার্গ’, ‘গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ’ ও ‘ম্যাগি উইমেনস রিসার্চ ইন্সটিটিউট’য়ের মিলিত গবেষণায় ২ হাজার গর্ভবতীকে পরীক্ষা করে দেখা যায়, যাদের উচ্চ মাত্রায় ২৫-হাইড্রোক্সি ভিয়ামিন ডি রয়েছে তাদের মাঝে অকালে সন্তান প্রসবের ঝুঁকি কমেছে।
গবেষকরা দেখেছেন যে, অকালে সন্তান জন্মদানের জন্য দায়ী ‘প্লাসেন্টা’য় বসবাসকারী ব্যাক্টেরিয়া কমাতে সহায়তা করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি
এটা সবচেয়ে ঝুঁকিকর। ভিটামিন ডি ও হৃদরোগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কে রয়েছে।
অস্ট্রিয়া’র ‘মেডিকেল ইউনিভার্সিটি অফ গ্রাজ’য়ের গবেষকদের মতে, যেসব রোগীর দেহে ভিটামিন ডি’য়ের ঘাটতি রয়েছে তাদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি।
২০০৯ সালে প্রকাশিত এই গবেষণার অনুসারে ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’য়ের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হৃদরোগের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পাঁচগুন বাড়ায়।
সুস্থ থাকতে নিয়মে মেনে চলার পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা ও প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।