মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ তার দলের নেত্রী খালেদা জিয়াকে ‘প্রতিহিংসার কারণেই’ সরকার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছে না।
মঙ্গলবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে এখনো অসুস্থ অবস্থায় আছেন। এই সরকার কত বড় প্রতিহিংসা পরায়ণ এবং তাদের যে পায়ের নিচে মাটি নেই। আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতালের ডাক্তাররা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, বাইরে নিয়ে যাও। তারা (সরকার) বাইরে যেতে দিচ্ছে না।
“এটা হচ্ছে তাদের দুবর্লতা, তাদের রাজনীতি যে দেউলিয়াপনা এবং জনগণ থেকে যে বিচ্ছিন্নতা তারই প্রমাণ। এই সরকার সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা দুর্নীতি পরায়ণ সরকারে পরিণত হয়েছে, এ সরকার জনগণের উপরে অত্যাচারি একটা সরকারে পরিণত হয়েছে, ফ্যাসিবাদী সরকারে পরিণত হয়েছে।”
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের নানা দিক তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পরে সবাই ভেবেছিল যে বিএনপি শেষ হয়ে যাবে, বিএনপিকে আর দেখা যাবে না। কারণ আসল নেতাই চলে গেছেন।
“কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি একজন গৃহবধু ছিলেন তিনি পতাকাকে তু্লে ধরছেন। কিসের পতাকা? স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পতাকা, গণতন্ত্রের পতাকা যেটাকে ধারণ করে এদেশের মানুষ বেঁচে আছে।”
‘বিএনপিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। উনি কারাগারে বলেই গণতন্ত্র এখন কারাগারে, গণতন্ত্র বন্দি হয়ে আছে।
“আমাদের অসংখ্য নেতা প্রাণ হারিয়েছেন, গুম হয়ে গেছেন, আমাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা, ৩৫ লক্ষের বিরুদ্ধে মামলা। তারপরও কিন্তু বিএনপিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বিএনপি আছে, চলছে এবং অত্যন্ত সোচ্চার হয়েই আছে।”
তিনি বলেন, ‘‘ আসুন আমরা সমস্ত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে আমাদের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে আদর্শ, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের যে আদর্শ তাকে সামনে নিয়ে, তার সেই যুদ্ধ করার যে মানসিকতা তাকে সমানে নিয়ে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে আপোষহীন মনোভাব গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার জন্য।
“তাকে পুঁজি করে তার নেতৃত্বে এবং ১৩ হাজার মাইল দূরে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যাকে আমরা সবাই তারুণ্যের অহংকার বলি, যার নেতৃত্বে আমরা আন্দোলন করছি, সংগ্রাম করছি তাকে নিয়েই আমাদের হারিয়ে যাওয়া যে গণতন্ত্র তাকে ফিরিয়ে আনতে পারবো।”
সবাইকে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “যে দানব আমাদের অধিকারগুলো হরণ করে নিয়েছে, যে দানব শুধুমাত্র লুন্ঠনের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে ধবংস করে দিয়েছে।
“সেই দানবকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সরকার আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে আন্দোলন, আন্দোলন এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।”
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের পরিচালনায় আলোচনা সভা শুরু হয়।
পরে মোস্তাফিজুর রহমান অসুস্থ হয়ে গেলে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি গোলাম সারোয়ার সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল হাই শিকদার, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি গোলাম সারোয়ার, বিথীকা বিনতে হোসাইন, ইয়াসীন আলীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।