আজ পহেলা আষাঢ়। বৈষ্ণব কবির ভাষায়-‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবস’। বহু যুগের ওপার থেকে ভেসে আসা স্মৃতি-সৌরভ। যেন গান হয়ে ভেসে ওঠে : বাদল দিনের প্রথম কদমফুলে।
১৪২৮ বঙ্গাব্দের বর্ষার প্রথম দিনপঞ্জিকার অনুশাসনে আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। আষাঢ় নামটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। এ মাসের মধ্য দিয়েই বাংলার প্রকৃতিতে আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় প্রিয় ঋতু বর্ষার।
আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন
আষাঢ়ে প্রকৃতি রূপ-রঙে হয়ে ওঠে ঢল ঢল। তাপদাহে চৌচির মাঠ-ঘাট খাল-বিল বনবিথিকায় জেগে ওঠে নবীন প্রাণের ছন্দ। সময়-অসময়ে ঝমাঝম বৃষ্টি, কর্দমাক্ত পথঘাট, চারিধারে অথৈ থৈ থৈ পানিতে আবহমান বাংলার রূপ হয় অপরূপ রূপবতী সলিল দুহিতা। ফুলে ফুলে শোভিত হয় প্রকৃতি। তাল তমাল শাল পিয়াল আর মরাল কপোতের বন বীথিকায় চোখে পড়ে বকুল, কদম, জারুল, পারুল, কৃষ্ণচূড়া ও রাধাচূড়াসহ অসংখ্য ফুল।
গ্রীষ্মের রুদ্র প্রকৃতির গ্লানি আর জরাকে ধুয়ে মুছে প্রশান্তি স্নিগ্ধতা ও সবুজে ভরে তোলে আষাঢ়। প্রকৃতি প্রেমিক মানুষের কাছে তাই বর্ষা নিয়ে আসে অভিনব ব্যঞ্জনা। আর বাঙালি মননে সবচেয়ে বেশি রোমান্টিকতার সুর বেজেছে এই বর্ষায়। গানে-কবিতায়-সাহিত্যজুড়ে তারই প্রতিফলন ঘটেছে নানা ভাবে।
বহুকাল আগে মহাকবি কালিদাস তার ‘মেঘদূত’ কাব্যে আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে বিরহ কাতর যক্ষ মেঘকে দূত করে কৈলাশে পাঠিয়েছিলেন তার প্রিয়ার কাছে। কালিদাস তাঁর ‘মেঘদূত’ কাব্যে বর্ষা বন্দনা করেছিলেন এভাবে ‘আষাঢ়ষ্য প্রথম দিবসে মেঘমাসৃষ্টসানুং/বপ্রক্রীড়াপরিণতগজ প্রেক্ষণীয়ং দদর্শ।’ আরো আগে বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতি লিখেছিলেন: এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর।/ এ ভরা ভাদর/ মাহ ভাদর/ শূন্য মন্দির মোর।
‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ দিয়ে প্রণয় নিবেদন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবি নজরুল ইসলামের কাছে বর্ষাকে মনে হয়েছে ‘বাদলের পরী’। তিনি লিখেছেন: ‘রিমঝিম রিমঝিম ঘন দেয়া বরষে/কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরষে।’
শুধু রবীন্দ্রনাথ কিংবা নজরুল নন, বাংলা সাহিত্যের খ্যাত-অখ্যাত বহু কবিই বর্ষার রূপ-ঐশ্বর্যে মোহিত ও মুগ্ধ, বর্ষার আবাহনে উচ্ছ্বসিত ও মুখর। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ আষাঢ়কে বলেছেন, ‘ধ্যানমগ্ন বাউল-সুখের বাঁশি’।