কলকাতা: ভারতের বাঙালি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একবার নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। আর তাই একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বার ক্ষমতা দখলের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখ এখন দিল্লি।
আর তার জোর প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন। ২০২৪-এ ভারতে লোকসভা ভোট। সেই ভোটের তিন বছর আগেই বিজেপিবিরোধী সর্বভারতীয় স্তরে মহাজোটকে একটি কাঠামো দেওয়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।
তবে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে মমতার এমন উদ্যোগ দেখা গিয়েছিল। সেবার সফল হননি। ভারতবাসী দ্বিতীয়বারের জন্য আস্থা রেখেছিলেন মোদীর ওপর। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন। চলমান পরিস্থিতিতে মোদী ইমেজ অনেকটা খর্ব হয়েছে। পাশাপাশি মমতার ঈর্ষণীয় সাফল্যবিরোধী দলগুলোকে অক্সিজেন যুগিয়েছে। তাই অনেক আগেই মোদীবিরোধী মহাজোটের পরিকল্পনা ও রূপায়ণের প্রস্তুতির সূত্রপাত হয়েছে।
এ নিয়ে মঙ্গলবার (২২ জুন) ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) সুপ্রিমো শারদ পাওয়ারের দিল্লির বাসভবনে বসতে চলেছে ১৫টি বিজেপিবিরোধী দলের বৈঠক। সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ হলো এ প্রক্রিয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস আর নিছক অংশগ্রহণকারী নয়। বস্তুত ক্যাপ্টেনের ভূমিকায় নিতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এ বৈঠকে শারদ পাওয়ার ও যশবন্ত সিনহার যৌথ চিঠি আমন্ত্রণপত্র হিসেবে পাঠানো হয় বিরোধীদের কাছে। অর্থাৎ মহাজোটের উদ্যোগীদের। প্রসঙ্গত বিজেপি ছেড়ে যশবন্ত সিনহা একুশের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল দলে নাম লেখান। তিনি মমতার দূত হয়ে বিরোধী মঞ্চ গঠনের অন্যতম দায়িত্বে রয়েছেন।
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- ১৫টি বিজেপিবিরোধী দলের জোটের নাম কী হবে? ‘রাষ্ট্রমঞ্চ’ হতে পারে এমন জল্পনা শুরু হয়েছে। এর কারণ ২০১৮ সালে সাবেক বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহাবিরোধী দলগুলোকে নিয়ে একটি মঞ্চ গঠন করেছিলেন। যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘রাষ্ট্রমঞ্চ’। এমনকি বিরোধীদের পাঠানো চিঠিতে ওই রাষ্ট্রমঞ্চের পক্ষ থেকেই জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। যদিও সর্বোচ্চ নেতৃত্বদের সর্বসম্মতিতেই মহাজোটের কাঠামো ও নাম চূড়ান্ত হবে বলে খবর জানা গেছে।
আপাতত এ জোটে জাতীয় দল কংগ্রেসের (আইএনসিসি) ভূমিকা কী হবে সেটা নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে সোনিয়া গান্ধীর দলকে কোনো নেতৃত্বে দেওয়া হবে না। কংগ্রেস এ জোটের নিছক অংশগ্রহণকারী সদস্য হিসেবেই থাকতে পারে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিপুল পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে এভাবে হঠাৎ মহাজোটের প্রস্তুতি শুরু হওয়ায় রীতিমতো উদ্বেগে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বরা। জোটের পাল্টা স্ট্র্যাটেজি কী হবে তার পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেছে। ফলে লোকসভা ভোটের তিন বছর বাকি থাকতে থাকতে আগাম প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে ভারতের রাজনৈতিক মহলে।