সর্বোচ্চ ইন্টারনেট গতির নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে জাপান। প্রতি সেকেন্ডে ৩১৯ টেরাবিট গতিতে ডেটা স্থানান্তর করতে পেরেছেন দেশটির প্রকৌশলীরা। এর আগের সর্বোচ্চ ইন্টারনেট গতির রেকর্ড ছিল ১৭৮ টেরাবিট/সেকেণ্ড।
আগের রেকর্ড অর্জনের এক বছর পার না হতেই নতুন রেকর্ড অর্জিত হল এ খাতে। জুনে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ফাইবার অপটিক কমিউনিকেশন’–এ এক গবেষণা জমা পড়েছিল। সেখান থেকেই জানা যায়, নতুন বিশ্ব রেকর্ডের কথা। ওই গবেষণার ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট নিউ অ্যাটলাস।
তিন হাজার কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত এক ফাইবার অপটিক কেবলে রেকর্ডটি গড়েছেন গবেষকরা এবং বিদ্যমান কেবল কাঠামোর সঙ্গেও এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ সংক্রান্ত আগের রেকর্ডের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ গতি দেখা গেছে নতুন রেকর্ডে।
নতুন ইন্টারনেট গতি আদতে কতোটা দ্রুতগতির তা দুটি উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হবে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বর্তমানে চারশ’ গিগাবিট প্রতি সেকেণ্ড গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে। সেই তুলনায় এই গতি প্রায় আটশ’গুণ। অন্যদিকে, জাপান, নিউ জিল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসীরা বাসায় যে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, সেটির সর্বোচ্চ গতি ১০ গিগাবিট প্রতি সেকেণ্ড।
গবেষকরা নতুন মাইলফলক অর্জনে বিদ্যমান ফাইবার অপটিক কাঠামোকে আরও উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছিলেন। গতানুগতিক মানের কোরের বদলে গবেষকরা এমন চারটি কোর ব্যবহার করেছিলেন যা গ্লাস টিউবের তৈরি। ডেটা পাঠানোর জন্য ওই চার কোরকে ফাইবারে স্থাপন করে নিয়েছিলেন তারা। কাজটি করতে ‘ওয়েভলেংথ ডিভিশন মাল্টিপ্লেক্সিং’ (ডব্লিউডিএম) নামের এক কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল। এরপর সিগনালকে একাধিক ওয়েভলেংথে ভাগ করে নেওয়া হয়েছিল এবং তা ওই একই সময়ে সম্প্রচার করা হয়েছিল। বাড়তি ডেটা বহনে তৃতীয় ব্যান্ডও ব্যবহার করেছিলেন গবেষকরা।
নতুন প্রক্রিয়ায় স্থানান্তরের কাজ শুরু হয় ৫৫২ চ্যানেল ক্যাম লেজার বিভিন্ন ওয়েভলেংথে পাঠানোর মধ্য দিয়ে। এরপর এই আলোতে ‘ডুয়াল পোলারাইজেশন মডিউলেশন’ প্রয়োগ করা হয়। এতে করে কিছু ওয়েভলেংথকে বিলম্ব করে দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সিগনাল রাশি সাজানো সম্ভব হয়। এরপর ওই সিগনাল রাশি ফাইবারের চার কোরের একটিতে ব্যবহার করা হয়। অপটিকাল পরিবর্ধক পর্যন্ত পৌঁছানোর আগে ডেটা ৭০ কিলোমিটার ফাইবারের মধ্য দিয়ে পার হয়। গতানুগতিক রামান পরিবর্ধন প্রক্রিয়ায় নিজের স্থানান্তর অব্যাহত রাখার আগে সিগনাল মূলত দুই ধরনের ফাইবার পরিবর্ধকের মধ্য দিয়ে পার হয়, এর একটি থুলিয়ামের, আর অন্যটি ইরবিয়ামের।
জাপানের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি’র (এনআইসিটি) তথ্য অনুসারে, এর পরের ধাপে নতুন ফাইবার অপটিকের মধ্য দিয়ে সিগনাল নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং জাপানি গবেষকদের দলটি এ প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে তিন হাজার এক কিলোমিটার দূরত্বে ডেটা পাঠাতে পেরেছেন।
সুরক্ষা আবরণের ব্যাপারটিকে আমলে নিলে চার-কোর অপটিকাল ফাইবারের সঙ্গে গতানুগতিক এক-কোর ফাইবারের ব্যাসরেখার মিল রয়েছে। ফলে হিসেবে অনেকটা সহজেই নতুন পদ্ধতিটি বিদ্যমান কাঠামোতে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
জাপানের এনআইসিটি জানিয়েছে, তারা ‘দীর্ঘ দূরত্বের ওয়াইড-ব্যান্ড সম্প্রচার প্রক্রিয়া তৈরি অব্যাহত রাখবেন এবং নিম্ন-কোর-কাউন্টের ফাইবার এবং অন্যান্য নতুন এসডিএম ফাইবারে সম্প্রচার সক্ষমতাকে কীভাবে বাড়ানো যায় তা অনুসন্ধান অব্যাহত রাখবেন।
“এ ছাড়াও, আমরা সম্প্রচারকে আন্তঃসাগরীয় দূরত্বে বর্ধিত করার জন্য কাজ করব।” – বলেছেন তারা।