কঠোর লকডাউনেও মানুষের আচরণের পরিবর্তন হয়নি। অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মানেনি, মাস্ক পরেনি। এ কারণে কঠোর বিধিনিষেধ সত্ত্বেও সংক্রমণ ও মৃত্যুতে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই নেই। একটি আইসিইউ বেডের জন্য এখনই ৪০ জন গুরুতর করোনা রোগীকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তার ওপর এবার এসেছে লকডাউন শিথিলের ঘোষণা। করোনা ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের বিধিনিষেধ ১১ আগস্ট থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তুলে নেওয়া হচ্ছে। এমন অবস্থায় পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেই আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশঙ্কা, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে সামনের দিনগুলোতে মহাবিপদ অপেক্ষা করছে। অর্থনীতি সচল রাখতে লকডাউন শিথিল করায় আগামীতে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়তে পারে।
লকডাউন শিথিলের কারণে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে জনচলাচল বৃদ্ধি পেলে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখীর আশঙ্কা প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, লকডাউন কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। লকডাউন দিয়ে সীমিত সময়ের জন্য করোনা সংক্রমণ রোধ করা যায়। টিকা-গ্রহীতারাও নিরাপদ নন। টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর ভ্যাকসিনের কাজ শুরু হয়। তাই এখন স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক পরতেই হবে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। মাস্ক না পরলে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে। ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক দেশে অনেকেই টিকা নেননি, কিন্তু তারা মাস্ক পরছেন। দেশের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে চরম অবহেলা দেখা যাচ্ছে। গত ৩০ দিনে সংক্রমণের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে উল্লেখ করার মতো বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি।
করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, চলমান লকডাউন যেমনই হোক, সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। তবে ঠিকমতো লকডাউন বাস্তবায়িত হলে করোনা সংক্রমণের হার ২০ শতাংশের নিচে নেমে আসত। এখন শনাক্তের হার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে। তিনি বলেন, এখন ব্যাপকভিত্তিক টিকা দিতে হবে। একই সঙ্গে সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। শনাক্তের হার ২ থেকে ৩ শতাংশে নেমে না আসা পর্যন্ত মুখে মাস্ক পরতেই হবে। লকডাউন শিথিল হলেও এখনো জনসমাবেশ ও পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হবে। রেস্টুরেন্টে অর্ধেক সিট ফাঁকা রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, লকডাউন দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। লকডাউন দেওয়ায় সংক্রমণ কিছুটা কমবে। তবে লকডাউন পুরোপুরি কার্যকর হলে সংক্রমণ আরও কমত। এখন জরুরি স্বাস্থ্যবিধি মানা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা এবং সবাইকে টিকার আওতায় আনা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, যেহেতু লকডাউন ১১ আগস্ট শেষ হচ্ছে। তাই সংক্রমণ রোধ করতে স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। আর ব্যাপক হারে গণটিকা দিতে হবে। তিনি বলেন, দিনের পর দিন লকডাউন দিয়ে রাখা যায় না। দেশের অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। তাই লকডাউন শিথিল হলেও সবাইকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।
সোসাইটি অব মেডিসিনের সাধারণ সম্পাদক ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘লকডাউনে আমাদের আচরণের পরিবর্তন হয়নি। আচরণ পরিবর্তন না হলে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, টিকাও দিতে হবে। যারা মাস্ক পরবে না, তাদের জেল-জরিমানাসহ কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’