মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। গতবারের মতো এবারও বাংলাদেশ ১৩৫ নম্বরে। তবে গত প্রতিবেদনে ১৩৭টি দেশের মধ্যে ১৩৫তম ছিল, আর এবার ১৩৯টি দেশের মধ্যে। বিশ্বের নানা দেশের গড় ইন্টারনেট গতির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে ওকলা নামের প্রতিষ্ঠান। এক মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে পরবর্তী মাসের মাঝামাঝি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে ইন্টারনেটের এই দুর্বল গতির জন্য স্পেকট্রামের স্বল্পতা আর নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্তহীনতাকে দায়ী করছে মোবাইল অপারেটররা। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে তারা এই দাবি করেন।
গত জুলাইয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গড় গতি ছিল সেকেন্ডে ১২ দশমিক ৬ মেগাবিট (এমবিপিএস), যা আগের মাসের (১২ দশমিক ৪৮ এমবিপিএস) চেয়ে সামান্য বেশি। আপলোডের গড় গতি অবশ্য কিছুটা কমেছে। জুলাইয়ে ৭ দশমিক ৬৫ এমবিপিএস ছিল, আর জুনে ছিল ৭ দশমিক ৯৮ এমবিপিএস। ওকলার মোবাইল ইন্টারনেট গতির তালিকায় বাংলাদেশের পর আছে আর চারটি দেশ। জিম্বাবুয়ে, ফিলিস্তিন, ভেনেজুয়েলা ও আফগানিস্তান। আফগানিস্তান গত প্রতিবেদনে ১৩৭টি দেশে ১৩৭তম ছিল। নতুন প্রতিবেদনেও সবশেষে ১৩৯টি দেশের মধ্যে ১৩৯তম অবস্থানে। বাংলাদেশের সামনে থাকা চারটি দেশ হলো সোমালিয়া ১৩৪তম, ঘানা ১৩৩তম, তানজানিয়া ১৩২তম ও সুদান ১৩১তম।
ওকলার প্রতিবেদনে মোবাইল ইন্টারনেটের গড় গতির তালিকায় শীর্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটিতে জুলাইয়ে ডাউনলোডের গতি ছিল ১৯০ এমবিপিএস। আর আপলোডের গতি ছিল ২৬ দশমিক ৫৪ এমবিপিএস। অন্যদিকে ব্রডব্যান্ডের তালিকায় শীর্ষ দেশ মোনাকো। দেশটির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গড় গতি ২৫৬ দশমিক ৭ এমবিপিএস এবং আপলোডের গড় গতি ছিল ১৫৬ এমবিপিএসের সামান্য বেশি। মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ডাউনলোড গতির বৈশ্বিক গড় যথাক্রমে ৫৫ দশমিক শূন্য ৭ এবং ১০৭ দশমিক ৫ এমবিপিএস।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবে, জুন মাস শেষে দেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৯ লাখে। একই হিসাবে ব্রডব্যান্ডের গ্রাহকসংখ্যা ১ কোটির কিছু বেশি।
এদিকে মোবাইল ফোন-সেবার মান নিয়ে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন শীর্ষ তিনটি অপারেটরের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এর আগে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন এমটবের সেক্রেটারি জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফরহাদ একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার তৈমুর রহমান, গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) হোসাইন সাদাত বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকেরা নিজেদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে মোবাইল নেটওয়ার্কের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জবাবে অপারেটররা গতানুগতিকভাবে স্পেকট্রাম স্বল্পতার অভিযোগ তোলেন। স্পেকট্রাম নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বিটিআরসিকে দেওয়া হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিটিআরসিকে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্তহীনতাকে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন অপারেটররা।
মোবাইল ইন্টারনেট গতির তালিকায় শেষের দিক থেকে তৃতীয় বাংলাদেশ
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, অব্যবহূত মোবাইল ডাটা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও তা ঠিকমতো দেওয়া হয় না। উপজেলা পর্যায়ে নেটওয়ার্কের অবস্থা খুবই দুর্বল। তাছাড়া কিছু কিছু এলাকায় এখনো নেটওয়ার্ক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। কল সেন্টারের সেবার মানও নাজুক। অনেক সময় সমস্যার কথা বলতেই তিন থেকে চার মিনিট চলে যায়। এর পরও সমস্যার সমাধান নিয়ে মনমতো উত্তর পাওয়া যায় না। অপারেটরদের পক্ষ থেকে গতানুগতিক উত্তর দেওয়া হলেও কবে নাগাদ ভালো সেবা মিলতে পারে, তার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।