প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ছেন দক্ষিণাঞ্চলের অগ্নিদগ্ধ রোগীরা। বার্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালনকারী একজন নার্স জানান, ইউনিটটি চালু না থাকায় অগ্নিদগ্ধ রোগীরা মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েন। অনেক রোগী বন্ধ না জেনেই এখানে এসে ফেরত যাচ্ছেন। বিত্তবানরা চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গেলেও হতদরিদ্ররা এখানে এসে আহাজারি করছেন। অর্থের অভাবে ঢাকায় যেতে না পারা রোগীরা শেবাচিমের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
তবে সার্জারি বিভাগে ভর্তি হওয়া অগ্নিদগ্ধ রোগীরা জানান, সেখানে চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। বড় চিকিৎসকেরা প্রতিদিন একবার কোনোরকম রাউন্ডে এসে ওষুধ লিখে দেন। কিন্তু এরপর আর তাদের দেখা মেলে না। ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সরাই রোগীদের একমাত্র ভরসা। তাই ভর্তি হয়ে কয়েক দিন ভোগান্তির শিকার হয়ে বাধ্য হয়েই হাসপাতাল ত্যাগ করতে হচ্ছে রোগীদের।
গত বছরের এপ্রিল মাসে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. এম এ আজাদের রহস্যজনক মৃত্যুর পর থেকেই কার্যত অচল হয়ে পড়ে বিভাগটি। সর্বশেষ চিকিৎসক ঐ বছরের ১৫ মে চলে যাওয়ার পর থেকে ইউনিটটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১২ মার্চ হাসপাতালের নিচতলায় আটটি শয্যা নিয়ে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ চালু করা হয়েছিল। বিভাগে আট চিকিৎসক ও ১৬ নার্সের পদ রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিটটি ৩০ বেডে উন্নীত করা হয়। সপ্তাহে দুই দিন কমপক্ষে ১০ জন রোগীর অপারেশন করা হতো এ ইউনিটে। চালু থাকা পাঁচ বছরে ৫ হাজারেরও বেশি রোগী বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিয়েছেন। গত বছর ইউনিটটি বন্ধ করে দেওয়া হলেও দায়িত্বরত নার্স ও কর্মচারীরা রুটিনমাফিক ঐ ওয়ার্ডেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম জানান, অগ্নিদগ্ধ যেসব রোগী আসছেন তাদের সার্জারি ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর অবস্থা গুরুতর দেখলে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি জানান, ১ হাজার বেডের এই হাসপাতালে চিকিৎসকসহ জনবল রয়েছে অর্ধেকেরও কম। এ জনবল দিয়েই ২ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ২ হাজার শয্যায় উন্নীত করতে নতুন করে জনবলকাঠামো পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, বিভাগে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত এক বছরে ৩৪১টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক এ বি এম মোমতাজ উদ্দিন জানান, এসব অগ্নিকাণ্ডে ৩১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতিসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।