খাদ্যাভ্যাসে প্রদাহনাশক খাবার হিসেবে পানীয়র কথা সম্ভবত কারও মাথায় আসে না।
‘এক্সারসাইজ উইথ স্টাইল ডটকম’ ওয়েবসাইটের পরামর্শদাতা যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ ক্রিস্টেন গিলাস্পি বলেন, “খাদ্যাভ্যাস ও প্রদাহনাশক ক্ষমতা, এই দুইয়ের মধ্যকার সম্পর্কটা প্রায় সবারই জানা।”
‘ইট দিস নট দ্যাট’ ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “খাবার প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই, তবে পানীয়-ও কম যায় না।”
এই পুষ্টিবিদ প্রদাহ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বাড়ায় এমন কয়েকটি পানীয় সম্পর্কে জানান।
গ্রিন টি: ‘অ্যান্টি-ইফ্লামাটরি’ বা প্রদাহনাশক গুণাগুণ সমৃদ্ধ পানীয়র মধ্যে এটাই সম্ভবত সুপরিচিত। আর এর পেছনে যথাযথ কারণও আছে।
গিলাস্পি বলেন, “গ্রিন টি’তে আছে শক্তিশালী ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’, যার নাম ‘পলিফেনলস’। শরীরের ওপর মুক্ত মৌলের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে প্রদাহের আশঙ্কা কমায় এই পানীয়। এতে আরও মেলে ‘ইসিজিসি’ নামক উপাদান যা অন্য কোনো চায়ে থাকে না। আর এই উপাদান এই চায়ের ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’য়ের সক্রিয়তা বাড়ায়।”
চেরি ফলের রস: গিলাস্পি বলেন, “সম্প্রতি প্রদাহনাশক পানীয়র তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চেরি ফলের রস বা শরবত। এতেও আছে ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ যা মুক্ত মৌলের ক্ষতির মাত্রা কমায়। বিশেষত, ‘অস্টিও-আরথ্রাইটিস’য়ের আক্রান্তদের প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে এই শরবতের উপকারিতার পেছনে আছে অনেকগুলো বৈজ্ঞানিক গবেষণার স্বীকৃতি।”
কিছু বিশেষজ্ঞের দাবি, ‘টার্ট চেরি জুস’ ভালো ঘুম আনে।
পানি: যুক্তরাষ্ট্রের আরেক পুষ্টিবিদ ক্যাটরিনা লার্সেন বলেন, “অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি এই যে, শুধু পানিরও প্রদাহনাশক গুণ আছে যথেষ্ট। শরীর থেকে দূষিত ও বিষাক্ত উপাদান বের করে দিতে পানির প্রয়োজন। আর শরীরে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে ওই বিষাক্ত উপাদানগুলোই প্রদাহ সৃষ্টি করবে। আর দীর্ঘদিনের পানিশূন্যতা পক্ষান্তরে প্রদাহ সৃষ্টির আশঙ্কা বাড়ায়।”
আদার রস: যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যালান্সড ওয়ান সাপ্লিমেন্ট’য়ের সনদপ্রাপ্ত পুষ্টিবিদ ট্রিস্টা বেস্ট পরামর্শ দেন যে, “আদার রস অবশ্যই আপনি গ্লাস ভরে খাবেন না। সামান্য পরিমাণ আদার রস সার্বিক স্বাস্থ্য ও কোমরের পরিধি কমানোতে হবে পরম বন্ধু।”
বেস্ট বলেন, ‘পেট কমাতে আদার রস অনন্য, আর তার কারণ হল এতে থাকা ‘জিঞ্জেরল’ ও ‘শোগাল’। এই দুই উপাদান শরীরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’য়ের প্রভাব সৃষ্টি করে। ফলে মুক্ত মৌলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীর রক্ষা পায়।”
তিনি আরও বলেন, “মুক্ত মৌলের প্রভাবে শরীরের ওপর ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ বেড়ে যায়। পাশাপাশি বাড়ে স্থূলতাও। এই ক্ষতি হয় একেবারে কোষে। আর এই কোষগুলো তখন শরীরের স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মাধ্যমে ‘হোমিওস্টেসিস’ বজায় রাখার ক্ষমতা হারাতে থাকে। যার প্রেক্ষিতে বিপাকক্রিয়া, কর্মশক্তি ও অন্যান্য দিক দিয়ে শরীর ক্রমেই দুর্বল হতে থাকে।”
আনারসের রস: গিলাস্পি বলেন, “প্রদাহ নিয়্ন্ত্রণে সহায়ক এমন একাধিক উপাদান আছে আনারসে। ‘গ্রিন টি’র মতো এতে থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা মুক্ত মৌলের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়, পক্ষান্তরে প্রদাহ।”
এছাড়াও এতে আছে ‘ব্রোমেলাইন’ নামক একটি ‘এনজাইম’ আর সেটাও প্রদাহ থেকে সুরক্ষা দেয়।
কিছু বিশেষজ্ঞের গবেষণার দাবি, ‘ব্রোমেলাইন’ এনজাইম হতে পারে ‘ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লামাটরি ড্রাগস (এনএসএআইডি)’য়ের সমমানের, কার্যকর প্রদাহ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। তবে আনারসের রস পান করতে হবে চিনি ছাড়া।
হলদি দুধ: যেমন নাম পানীয়টাও তেমনি। হলুদ মেশানো দুধে আরও মেশানো হয় আদা, গোলমরিচ, দারুচিনি ইত্যাদি।
লার্সেন বলেন, “প্রদাহনাশক গুণ আসে হলুদ, গোলমরিচ ও দারুচিনি থেকে। উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আসা দুধ এই পানীয়র জন্য বেশি উপকারী।”
হলুদে আছে ‘কারকিউমিন’- একটি ‘পলিফেনল’ যা মুক্ত মৌলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অ্যাক্টিভিটি’ তৈরি করে।
গোলমরিচে মেলে ‘পিপেরিন’ যা শরীরের ‘কারকিউমিন’ গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ায় ২০০০ শতাংশ। প্রদাহনাশক গুণের জন্য দারুচিনিও পরিচিত। পাশাপাশি পানীয়র স্বাদ বাড়ায়।
জামু: যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যালান্সড ওয়ান সাপ্লিমেন্ট’য়ের সনদপ্রাপ্ত পুষ্টিবিদ ট্রিস্টা বেস্ট জানান নতুন একটি পানীয়র ব্যাপারে।
ইন্দোনেশিয়ার এই পানীয়র নাম ‘জামু’। যেখানে থাকে হলুদ, আদা, মধু, লেবু ইত্যাদিসহ আরও নানান উপকরণ।
ঔষধি পানীয় হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে অন্যান্য দেশেও এর চাহিদা বাড়ছে। ঘরে বসেই এই পানীয় বানিয়ে নিতে পারেন, আর প্রদাহ নিয়ন্ত্রক গুণাগুণের জন্যেই এই পানীয় পরিচিত।