এই রোদ, এই বৃষ্টি। প্রকৃতির মধুর এই খামখেয়ালিপনায় শিমুল তুলার মত ভেসে বেড়ানো মেঘেদের দল আর কাশফুলের সফেদ ছোঁয়ালাগা সুখকর বাতাসের সুবাস বলে দিচ্ছে আবারো এসেছে শারদীয় দুর্গোৎসব।
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রাণের এ উৎসবকে বরণ করে নিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মন্দিরগুলোতে ঢাকঢোল বাজিয়ে পালিত হচ্ছে বর্ণিল দুর্গোৎসব। রঙিন প্যান্ডেল, দুর্গা মায়ের লাল শাড়ি, সরস্বতী মায়ের সাদা, লক্ষ্মী মায়ের হলুদ শাড়ি এবং প্রতিমাজুড়ে নানান রঙের ছড়াছড়ি থাকে বলেই মহামিলনের এ উৎসব উদযাপনে পোশাকের প্রতি সবারই থাকে বাড়তি আগ্রহ।
এ সময়ের আবহাওয়াতে বৃষ্টি ও গরমের বিষয়টি বিবেচনা করে অধিকাংশ ফ্যাশন হাউজই আরামদায়ক কাপড়ে শারদীয় পোশাকের সম্ভার সাজিয়েছে। সুতি, লিনেন, হাফ সিল্ক, জয়সিল্ক, ধুপিয়ান, সিফন, জর্জেট ও সিল্ক কাপড়ের পোশাকগুলোতে উৎসবরে আমেজ ফুটিয়ে তুলতে লাল, সাদা, নীল, পিচ, কমলা, হলুদ, ব্রাউন, লাইট অলিভ, ফিরোজা, গেরুয়াসহ বিভিন্ন উজ্জল রঙের ব্যবহার করা হয়েছে।
পাশপাশি কাজের মাধ্যম হিসাবে এসেছে হাতের কাজ, চুনরি, স্ক্রিনপ্রিন্ট, ব্লকপ্রিন্ট, বাটিক, অ্যাপলিক, প্যাচওয়ার্ক, কারচুপি ইত্যাদি। আর শারদীয় আয়োজনকে অনিন্দ্যসুন্দর করতে থিম হিসাবে বেছে নেয়া হয়েছে মন্দির ও প্রতীক, দেবী ও দেবীর অলংকার, মুকুট, শতরঞ্জি, দেবীর নান্দনিক রূপের সঙ্গে গ্রাফিক্যাল জ্যামিতিক ফর্মের সমন্বয়ে দুর্গা মোটিফ, মন্ত্র ও আল্পনা।
শারদীয় দুর্গোৎসবে বড়দের জন্য শাড়ি-পাঞ্জাবির পাশপাশি এখন অনেকে বেছে নিচ্ছেন থ্রি-পিস, কামিজ, স্কার্ট-টপস, ফ্রক, বেবি শাড়ি-রেডি ব্লাউজ, ওড়না, আনস্ট্রিচ ড্রেস, টি-শার্ট, শার্ট, ধুতি, উত্তরীয় ইত্যাদি। কেউ কেউ বিশেষ ম্যাচিং পোশাকও বেছে নিচ্ছেন স্বামী-স্ত্রী কিংবা পরিবারের সবার জন্য। তবে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে বড়দের পোশাকের সাজাটা হয় তাদের পছন্দমতো।
দশমীর দিন যে শাড়িটা পরা হয়, তার পাড়টা হতে পারে বাহারি। জমিন সাদা বা লাল রঙের হতে পারে। শাড়ির পাড়ে লেইস, আলগা পাড়, ব্লক, চুমকির কাজও থাকতে পারে। পূজার শাড়িতে চুমকির কাজটা তুলনামূলক বেশ ভালো লাগে। লাল-সাদা ঢাকাই জামদানি পূজার দিনে পরলে চমৎকার দেখায়। এছাড়া লাল পাড়ে গরদের আবেদন চিরন্তন। মসলিন বা সিল্কের শাড়িও পরা যেতে পারে। শাড়িতে কম কাজ থাকলেও ব্লাউজটা হতে পারে বাহারি। লম্বা হাতার, কুঁচি দেওয়া ব্লাউজ পরলে ভালো দেখাবে। ঘটিহাতাও চমৎকার লাগবে।
আর খানিকটা কম বয়সীরা শাড়ির পাশাপাশি বেছে নিতে পারেন সালোয়ার-কামিজ কিংবা জিন্স-ফতুয়া, টপস ও কুর্তাকে। কয়েক দশক আগেও যে ধুতি ছিল ওতপ্রোত, সেই ধুতির জায়গা নিয়েছে পায়জামা বা আরো এগিয়ে বললে জিন্স। আগে উল্লেখ করলেও বললে অত্যুক্তি হবে না, লাল-সাদার সনাতনী ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার স্বাচ্ছন্দ্য মেলবন্ধনে সবুজ, নীল ও বেগুনিসহ অনেক রঙ এসে ধরা দেয় এই উৎসবে। তাই পূজায় সকালে পোশাকটা হওয়া চাই উজ্জ্বল রঙের।
সকালে অর্চনা এবং সন্ধ্যায় ঘোরাঘুরিতে পোশাকে ভিন্নতা থাকাটা জরুরি। সকালে সুতি কাপড়ের পোশাকে বেশি আরামদায়ক হবে, কারণ আবহাওয়া গরম। আর এই পোশাকগুলো শারদীয় পূজার সময় যেমন মানিয়ে যাবে তেমনি পুরো শরৎজুড়েও দিব্যি পরতে পারবেন। পূজা শুধু পোশাকি হলে চলবে না, অশুভ শক্তির প্রতীক অসুরদের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবী দুর্গা দেবকুলকে যেমন রক্ষা করেছেন অন্যায় ও অশুভ শক্তির হাত থেকে তেমনি দুর্গা মায়ের ন্যায় ও শুভশক্তির জয়কে মনের গহীনে ঠাঁই দিতে হবে। তবেই না হাসিমুখে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কৈলাসধামে ফিরে যাবেন মা দুর্গা।