কেউ বলে মিনি কক্সবাজার, কেউ বলে রূপসী কন্যা, কিন্তু সবার কাছেই ঝাউ বাগান নামেই পরিচিত কর্ণফুলী নদীর মোহনায় আনোয়ারা উপজেলার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে অবস্থিত ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পারকি সমুদ্রসৈকত। সাগরের গর্জন আর ঢেউয়ের মিতালী এবং সাগরের নীল পানি তীরের ঝাউবনের টানে প্রতিদিন শত শত পর্যটক ভিড় করছেন এ সৈকতে। সৈকতের বালুচরে লাল কাঁকড়ার ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য কিংবা দূরে গভীর সমুদ্রে নোঙর করা কিংবা সমুদ্র পথে চলতে থাকা ছোট-বড় জাহাজের সারি আর পারকি সৈকতে আটকা পড়া দানবাকার ক্রিস্টাল গোল্ড জাহাজকে ঘিরে এই সৈকতের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।
তবে রাত্রি যাপনের সুব্যবস্থা না থাকায় এখানে আসা পর্যটকদের সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগেই গন্তব্যে ফিরে যেতে হয়। তাই সাগর কন্যার রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের সুবিধার্থে পারকি সমুদ্রসৈকতকে অত্যাধুনিক পর্যটন স্পট বানাতে ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্স। সরকারের এই মেগা প্রকল্প বদলে দেবে পুরো পারকি সমুদ্রসৈকতের চেহারা। আধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্সের কাজ শেষ হলে প্রতিদিন ভোরে সমুদ্রসৈকতের সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ হবে পর্যটকদের জন্য।
চট্টগ্রাম শহর থেকে পারকি সৈকতের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার হলেও টানেলের মধ্যদিয়ে আনোয়ারা পয়েন্ট থেকে পারকির দূরত্ব হবে মাত্র আট কিলোমিটার। টানেল ব্যবহার করে খুব সহজেই পর্যটকরা ১৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যেতে পারবেন পারকি সমুদ্রসৈকতে। টানেলকে ঘিরে শিল্পকারখানা এবং আবাসনের পাশাপাশি খুলবে পর্যটন শিল্পের নতুন দুয়ার। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে পারকি সমুদ্রসৈকত। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান, বৃদ্ধি পাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন। ফলে পর্যটন খাত থেকে সরকারের আয় বৃদ্ধি পাবে। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৭১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগে ১৩ দশমিক ৩৬ একর জমিতে বিশ্বমানের পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে শুরু হয়েছিল এ প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৬২ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল দুই বছর। ২০২০ সালের নভেম্বরে মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দ্বিতীয় দফায় এর মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। বর্তমানে এ প্রকল্পের বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের মূল কাজ ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের মধ্যে মোট ১৭টি স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। ১৪টি আধুনিক কটেজ রয়েছে। এরমধ্যে চারটি ডাবল ডুপ্লেক্স কটেজ এবং ১০টি সিঙ্গেল কটেজ। চার তলাবিশিষ্ট একটি মালটিপারপাস ভবন।
পর্যটন করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী অসীম শীল বলেন, প্রকল্পের কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। কোভিডের কারণে নির্মাণ কাজে একটু ধীরগতি ছিল। আশা করি, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের মূল কাজ শেষ হবে।
আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল বাস্তবায়নে আনোয়ারা পরিণত হতে যাচ্ছে বিশ্বমানের পর্যটন স্পটে। বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে পারকি সমুদ্রসৈকত একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।