ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দামকে নিয়ন্ত্রন করতে চলতি বছরেরের সেপ্টেম্বরেই এক দেশ এক রেট প্যাকেজ চালু করেছিলো টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। সংস্থাটির নির্দেশনা অনুযায়ী প্যাকেজের সব শর্ত মেনে কার্যক্রম শুরু করলেও এক মাস যেতে না যেতেই সেই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর আইএসপিএবির ।
জানা যায়, এক দেশ এক রেট প্যাকেজ শিরোনামে পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার মুল্য বেধে দেয় বিটিআরসি। ১৪ আগষ্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বিটিআরসির আইএসপিদের জন্য যে ট্যারিফ প্রবর্তন করে সেখানে যথাক্রমে ৭দিন সেবা বিঘ্নিত হলে ৫০ শতাংশ ১৪ দিনে ২৫ শতাংশ এবং ২০ দিন বিঘ্নিত হলে গ্রাহক কোন মুল্যই প্রদান করবে না। কিন্তু পরবর্তীতে ১৪ আগষ্টের নির্দেশনার পরিবর্তে ৫ অক্টোবর আরেক নির্দেশনায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানায় ১ দিন সেবা বিঘ্নিত হলে ৫০ শতাংশ, ২ দিনে ৫০ শতাংশ এবং ৩দিন বিঘ্নিত হলে গ্রাহক কোন মুল্যই দিবে না।
১৪ই আগষ্টের সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও ৫ অক্টোবরের সিদ্ধান্তকে মেনে ব্যবসা পরিচালনা করতে নারাজ ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা। আর তাই বিটিআরসির কাছে এক দেশ এক রেট প্যাকেজের দাম পূণঃনির্ধারনের জন্য নিজেদের মত করে নতুন একটি প্রস্তাবনা দাখিল করে এই ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন।
ইত্তেফাক অনলাইনের হাতে আসা ওই চিঠিতে দেখা যায়, চলতি মাসের ১০ তারিখ আইএসপিএবির পক্ষ থেকে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে দাম বাড়ানোর এই আবেদন করা হয়। আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘এক দেশ এক রেট’ বাস্তবায়নে জটিলতা এবং অপারগতা শিরোনামে ১নং প্যারায় ১৪ আগষ্ট বিটিআরসি কর্তৃক প্রকাশিত এক নোটিশের বরাত দিয়ে বলা হয় ওই চিঠিতে প্রথমে আইএসপিদের জন্য যে ট্যারিফ প্রবর্তন করে সেখানে যথাক্রমে ৭দিন সেবা বিঘ্নিত হলে ৫০ শতাংশ ১৪ দিনে ২৫ শতাংশ এবং ২০ দিন বিঘ্নিত হলে গ্রাহক কোন মুল্যই প্রদান করবে না।
চিঠিতে আরো বলা হয়, এই গ্রেড অফ সার্ভিস বিবেচনা করে আইএসপিদের পক্ষে ৫ এমবি ৫০০ টাকা, ১০ এমবি ৮০০টাকা এবং ২০ এমবি ১২শ টাকায় প্রদান করা সম্ভব ছিলো। কিন্তু ৫ অক্টোবর বিটিআরসি কর্তৃক প্রকাশিত এক নোটিশে বর্ণিত শর্তানুযায়ী গ্রেড অফ সার্ভিস প্রদানের ক্ষেত্রে এই ‘এক দেশ এক রেট’ এ ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তাবনা হলো, ২ এমবি ৫০০ টাকা, ৫ এমবি ৮০০ টাকা এবং ১০ এমবি ১২শ টাকা পূণনির্ধারণ করে দেয়া হয়।
দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গে আইএসপিএবি মহাসচিব ইমদাদুল হক ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, এক দেশ এক রেট প্যাকেজ চালু করার সময় টাকার বিষয়ে আমাদের কাছে কোন শর্ত দেয়নি বিটিআরসি, তাই আমরা রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু যখনই এই শর্ত জুড়ে দেওয়া হলো, তখন দেখলাম বর্তমানে বাস্তবতার ক্ষেত্রে এইউ নির্দেশনা মেনে চলা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব।
ইমদাদুল বলেন, অনেক সময় দেখা যায় আমাদের দেশে উন্নয়নমূলক কাজের সময় ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন্স ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক কোম্পানী বা এনটিটিএনগুলোর ভু-গর্ভস্থ ক্যাবল যখন কাটা যায় তখন ২ থেকে ৩ দিন লেগে যায় সেই লাইন ঠিক করতে। কিন্তু এখানে আমাদের আইএসপিদের কিছু করার থাকে না। এনটিটিএনগুলোর কারণে দেখা যায় ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেট পায় না। এছাড়াও আমাদেরকে আইআইজির উপরেও নির্ভর করতে হয়। কারণ তারা সারাদেশে ইন্টারন্যাশনাল ব্যন্ডউইথ পরিবহন করে সারাদেশের আইএসপিদের পৌছে দেয়। সেখান থেকেও সমস্যা হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা মুলত সিমিউ-৪, সিমিউ-৫ সাবমেরিন ক্যাবল থেকে এবং ভারত থেকে স্থল পথে আসা আইটিসির ব্যান্ডউইথের উপর আমরা নির্ভরশীল। এরমধ্যে বছরে প্রায় ৪ বারের মত সিমিউ-৪ মেইনটেনেন্স করতে হয়। এইসময়ে অন্য দুটি গেটওয়েতে চাপ পড়ে যায় এবং ব্যবহারকারীদের ২-৩ দিন ইন্টারনেট সংযোগে ব্যাঘাত ঘটে। এইসব যায়গায় কিন্তু আমরা কাউকেই এক টাকাও কম দিতে পারবো না। কিন্তু আমাকে যদি এসব সমস্যার কারণে পুরোমাসের টাকা গ্রাহকের কাছে জরিমানা দিতে হয়, তাহলে তো আমরা ব্যবসা করতে পারবো না। সেইজন্যেই আমরা সরকারের কাছে এই আবেদন করেছি। যাতে এই বিষয়গুলো পুনরায় বিবেচনা করা হয়।
ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইনফোলিংক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিফ আহমেদ ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, এটা যদি হিসেব করতে হয়, তাহলে তো সকল ধাপের হিসেব করে করতে হবে। কারণ, শুধু আইএসপি নয়, ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে এনটিটিএন, আইআইজি প্রতিষ্ঠানও ইএস কাজ করে। সেক্ষেত্রে এই বিলের টাকার সমন্বয়, তাদের সাথেও করতে হবে।
ব্যবহারকারী কতটুকু ব্যবহার করতে পারেনি সেই হিসেব করে টাকা কাটার দাবী জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, এই ভাবে ১দিন ৩দিনের টাকা না কেটে একটা হিসেব করে টাকা কাটার নিয়ম করা যায়। কারণ ৩দিন ব্যবহারকারী লাইন পেলোনা, যার কারণে সে পুরো মাসের বিল দিবে না। এখন এই বাকী দিন আমি কিভাবে তাকে কানেকশন দিবো, আদৌ দিবো কি না তাতো নির্দেশনায় বলা নেই। আবার যদি তাকে সার্ভিস দিতেই হয় সেক্ষেত্রে কোন মানের সার্ভিস সে পাবে তাও কিন্তু উল্লেখ করা নেই।
এই বিষয়ে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র কাছে জানতে চাইলে, আমরা চিঠি পেয়েছি। তবে এখনও এই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিষয়টি পর্যালোচনার মধ্যে আছে, নির্দেশনা হলে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিবো।
তবে নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্বশীল সুত্রে জানা গেছে, আইএসপিএবির এই প্রস্তাবকে আমলে নিয়ে ইতোমধ্যেই বিটিআরসি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। কিন্তু সংস্থাটির চেয়ারম্যান বিদেশে থাকার কারণে কমিশন বৈঠক না হওয়ায় এই নির্দেশনাটি জারি করা হয়নি। চেয়ারম্যান দেশে এলেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত সকলকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
সুত্র আরো জানায়, নতুন নির্দেশনায় বিটিআরসির ১৪ আগষ্টের সিদ্ধান্তের পর একই বিষয়ে ৫ অক্টোবর যেই পুনঃসিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেই সিদ্ধান্তকে আমলে নিয়ে নতুন করে পর্যালোচনা করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন নির্দেশনায় ৫দিন সেবা বিঘ্নিত হলে ২৫ শতাংশ, ১০ দিনে ৫০ শতাংশ এবং ১৫ দিন সেবা বিঘ্নিত হলে গ্রাহকের কাছ থেকে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কোন মুল্য গ্রহণ করতে পারবে না বলে উল্লেখ করা হতে পারে।