সাধারণ নারী কোটায় মেধাতালিকায় প্রথম হয়েও জমি না থাকায় এবার পুলিশে চাকরি পাচ্ছেন না খুলনার মিম আক্তার।
খুলনার পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে শনিবার তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পুলিশ ভেরিফিকেশনে স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় তাকে চাকরি দেওয়া যাচ্ছে না। খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে মিমের পরিবার।
মিম খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গায় ৩ নম্বর আবাসিক এলাকার ১ নম্বর রোডের ডাক্তার বাবর আলীর বাড়ীর ভাড়াটিয়া। তার বাবা রবিউল ইসলাম শহরে একটি ভাড়া দোকানে লেপতোশক বিক্রি করেন।
মিম বলেন, “পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে সাধারণ নারী কোটায় আবেদনের পর ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর তিন দিন শিরোমণি পুলিশ লাইন্সে শারীরিক যোগ্যতা যাচাই হয়। যাচাইয়ে আমি উত্তীর্ণ হই।
“এরপর ৮ তারিখে লিখিত পরীক্ষা হয় খুলনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এ পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হই। এরপর মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। পরে জানতে পারি আমি মেধাতালিকায় প্রথম হয়েছি।
মিম বলেন, পরে খুলনা জেলা পুলিশ লাইন্সে সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেখানেও উত্তীর্ণ হন মিম। তারপর ১২ নভেম্বর রাতে ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে।
“সেখানে ১৩ তারিখ সকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। তারপর বাড়ি ফিরে আসি। তারা বলেছিলেন, ফল পরে জানানো হবে।”
এরপর পুলিশ ভেরিফেকিশেন শুরু হয়। সোনাডাঙ্গা থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও সিটিএসবি থেকে তদন্তে যায় পুলিশ।
মিমি বলেন, “ভূমিহীন সার্টিফিকেট জমা দিয়েছি। তারা বলেছিলেন, ৫ ডিসেম্বর আমাকে জানাবেন।
“এরপর ফোন দিয়ে ৭ তারিখে জেলা পুলিশ লাইন্সে ফিঙ্গার প্রিন্টের জন্য ডাকা হয়। সেখানে পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে আসি। সেখান থেকে বলা হয়, পরে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর আর কিছুই জানানো হয়নি আমকে।
মিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “যারা আমার সাথে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে এসেছিল তাদের ফোন করে চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু আমাকে কিছু না জানানোর কারণে আমি শুক্রবার জেলা পুলিশ লাইন্সে গিয়েছিলাম। তারা কিছুই জানেন না জানিয়ে এসপি স্যারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
“শনিবার খুলনার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে গিয়েছি। পুলিশ সুপার স্যারকে পাইনি। দুই-তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভির আহম্মেদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তিনি বলেছেন, তোমার সব ঠিক আছে। তবে স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় তোমাকে চাকরিটা আমরা দিতে পারছি না।”
মিমের বাবার পৈত্রিক বাড়ি বাগেরহাট। সেখানেও তাদের কোনো জমি নেই বলে জানান মিম।
মিময়ের বাবা রবিউল ইসলাম বলেন, “আমার মেয়ের জন্ম খুলনায়। এখানে আমার নিজস্ব জমি নেই। ১৯৮৮ সাল থেকে ভাড়াটিয়া হিসেবে খুলনায় বসবাস করে আসছি। গত ১৭ মাস ধরে বাবর আলীর বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বাস করছি।
“আমার পৈত্রিক বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারি উপজেলার বড়বাড়িয়া গ্রামে। গ্রামের বাড়িতেও আমার নামে কোনো জমি নেই। ভূমিহীন বলে আমার মেয়ের চাকরিটা হচ্ছে না।”
এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর আহম্মেদ।
তিনি বলেন, “মেয়েটা সব দিক দিয়েই পারফেক্ট। মেধাতালিকায় প্রথম হয়েছে। তবু পুলিশের রুলসের কারণে আমরা তাকে নিতে পারছি না। জন্ম এখানে হলে বা জন্ম সনদ এখানে থাকলেই হবে না। স্থায়ী ঠিকানা লাগবে। আইনের বাইরে আমরা কিছু করতে পারি না। ঘটনাটি বরিশালের আসপিয়ার ঘটনার মতই।”
‘স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় পুলিশে চাকরি না পাওয়ার শঙ্কায় আসপিয়া’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার খবর প্রকাশিত হয়। আসপিয়ার পরিবারেরও জমি নেই। চাকরির পরীক্ষায় কয়েকটি স্তর পার হয়ে তিনি জানতে পারেন, স্থায়ী ঠিকানা না থাকলে পুলিশে চাকরি হয় না।