হারিছ চৌধুরীই কি মাহমুদুর রহমান নামে মারা গেলেন, তদন্তে নেমে তার কূল-কিনারা করতে পারল না পুলিশও, তাই আরও তদন্ত চালাতে হচ্ছে।
আর তাই বাংলাদেশে আইনের চোখে পলাতক হারিছ চৌধুরীর ছবি এখনও ঝুলছে ইন্টারপোলের রেড নোটিসে, যদিও মৃত্যু নিশ্চিত হলে এই তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার কথা।
অবশ্য অনলাইনে মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ায় মৃত দেখাচ্ছে হারিছ চৌধুরীকে। মৃত্যুর তারিখ বলা হয়েছে ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর।
উইকিপিডিয়া যে কেউ সম্পাদনা করতে পারে বলে এর তথ্যনির্ভরতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। মৃত্যুর তথ্যের উৎস হিসেবে বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনকে দেখানো হয়েছে উইকিপিডিয়ায়।
বলা হচ্ছে, মাহমুদুর রহমান নামে ঢাকায় থাকা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে এভারকেয়ার হাসপাতালে, আর তাকে দাফন করা হয়েছে ঢাকার সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের জালালাবাদের কমলাপুর এলাকায় জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসায় কবরস্থানে।
গত কয়েকদিন ধরে এমন খবরে পুলিশও নামে তদন্তে, কেননা ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলার মামলায় যাবজ্জীবন সাজা নিয়ে পলাতক হারিছ চৌধুরীর নামটির সঙ্গে ইন্টারপোলের রেড নোটিস সম্পর্কযুক্ত।
পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)।
এই ব্যুরোর এআইজি মহিউল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু হলে ‘রেড নোটিস’ তুলে ফেলতে হবে। সেই কারণে তারা সিআইডিকে চিঠি দিয়েছিলেন। কারণ মামলাটির তদন্ত সংস্থা সিআইডির আবেদনেই রেড নোটিস তোলা হয়েছিল।
তদন্তে কী মিলেছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তারা সিলেটে (হারিছের এলাকা) তদন্ত করে আমাদের যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেটা স্পষ্ট না। ফলে রেড নোটিস বলবৎ থাকবে উল্লেখ করে তাদের (সিআইডি) চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিসানুল হক বলেন, তারা হারিছ চৌধুরীর বিষয়ে ‘অধিকতর তদন্ত’ করছেন।
“আমাদের তদন্ত চলমান আছে,” বলেন তিনি।
তার উপর তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ মামলার ফেরারী আসামি। তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলাও রয়েছে।
যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম মহাসচিবের পদেও ছিলেন হারিছ।
সিলেটে ভোটে হারলেও খালেদা জিয়ার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর হারিছকে করেন বিশেষ সহকারী। ২০০১ সালে করেন রাজনৈতিক সচিব।
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর লাপাত্তা হয়ে যান হারিছ। তখন অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় তার তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি গাড়ি অন্যকে ব্যবহার করতে দেওয়ায় আরেক মামলায় তার ৫৯ বছরের কারাদণ্ডাদেশও হয়।
২০১৮ সালে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে হারিছেরও সাত বছরের সাজা হয়। ওই বছর তার আগেই গ্রেনেড হামলার মামলায় হারিছের সাজার রায় হয়।
হারিছ বিদেশে পালিয়ে আছেন বলে মামলাগুলোর তদন্তকারীরা তখন বলে আসছিলেন। হারিছের স্ত্রী-সন্তানরাও যুক্তরাজ্যে থাকছিলেন।
গত বছরের শেষ দিকে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে হারিছের কথিত মৃত্যুর খবর আসে। তবে কোথাও বলা হচ্ছিল, হারিছ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মারা গেছেন। কোথাও বলা হয়, হারিছ মারা গেছেন লন্ডনে।
গত ৬ মার্চ দৈনিক মানবজমিনের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, হারিছ ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালেই মারা যান গত ৩ সেপ্টেম্বর। তার আগে ১১ বছর মাহমুদুর নামে ঢাকার পান্থপথের একটি ফ্ল্যাটে থাকছিলেন তিনি।
মাহমুদুর রহমান পরিচয়ে হারিছকে ঢাকার সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের জালালাবাদের কমলাপুর এলাকায় জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসায় কবরস্থানে ৪ সেপ্টেম্বর দাফন করা হয় বলেও দাবি করা হয়।
মাহমুদুর রহমান নামে একজনকে কবর দেওয়ার কথা জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জানালেও সেটা কি হারিছ চৌধুরীর কবর, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি অনুসন্ধানে।
কবর কেনা হয়েছিল ফুলন নেছার নামে
গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর বিকালে ঢাকার মিরপুরের কাছেই বিরুলিয়া ইউনিয়নের জালালাবাদের কমলাপুর এলাকায় জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসার কবরস্থানে দাফন করা হয় মাহমুদুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আশিকুর রহমান কাশেমী এই তথ্য জানিয়ে বলেন, “মাহমুদুর রহমান নামেই দাফন হয়েছে। হারিছ চৌধুরীকে আমরা কখনও দেখি নাই, তার নামও শুনি নাই।”
যেখানে মাহমুদুর রহমানের কবর হয়েছে, সেই জায়গাটি ফুলন নেছা নামে এক নারীর জন্য কেনা ছিল বলে জানান অধ্যক্ষ আশিকুর।
ফুলন নেছা ঢাকার মিরপুরের ব্যবসায়ী জাফর ইকবাল মাসুমের মা। আশিকুর মিরপুরের একটি মাদ্রাসা ও মসজিদের সঙ্গে যুক্ত, আর সেই সূত্রে তার সঙ্গে জাফরের পরিচয়।
অধ্যক্ষ আশিকুর বলেন, ২০১৬ সালে ব্যবসায়ী মাসুম তার সাভারের মাদ্রাসা কমপ্লেক্সের ভেতরে একটি কবরের জায়গা বরাদ্দ নেন। সেটি তিনি নেন তার মা ফুলন নেসা লস্করের জন্য নিয়ত করে। এরপর গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর তাকে ফোন করে জানান যে ওই কবরে তিনি মাহমুদুর রহমান নামে একজনকে দাফন করতে চান।
সেই পরিপ্রেক্ষিতে ওই কবরে মাহমুদুরের দাফন হয় বলে জানান আশিকুর।
তিনি বলেন, ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে একটি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি প্রাইভেটকারে করে কয়েকজন এসে মাদ্রাসায় জানাজা শেষে মাহমুদুরকে দাফন করেন। এসময় মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা জানাজা ও দাফন কাজে অংশ নেন।
তিনি বলেন, পরে মৃত ব্যক্তির মেয়ে আরেকটি কবরের জায়গা রাখার জন্য দুই দফায় পাঁচ লাখ টাকা ‘সদকায়ে জারিয়া’ হিসেবে দিয়েছেন মাদ্রাসায়। সেখানে ঠিকানা লেখা হয় ঢাকার উত্তরা।
ঠিকানা জোগাড় করে গত বুধবার মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় জাফর ইকবাল মাসুমের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তিনি কিংবা তার পরিবারের কেউ বাসায় নেই। ‘লস্কর বাড়ি’ নামে তিন তলা ওই বাড়িটি তাদের নিজেদের। দীর্ঘদিন ধরেই তারা ওই এলাকায় রয়েছেন।
ওই বাড়ির নিচতলার ভাড়াটিয়া জানান, জাফর ইকবাল ও তার মা গত সোমবার গ্রামের বাড়িতে গেছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তথ্য পাওয়া গেল, জাফর ইকবাল মাসুম বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর শ্যালক।
ওই বাড়ির আশপাশে অনেকগুলো অবাঙালি (বিহারি) পরিবারের বাস। তাদের একজন ফরিদ উদ্দীন জানান, অনেক দিন থেকেই তারা জানেন যে ওটা হারিছ চৌধুরীর শ্বশুরবাড়ি।
বাড়ির নিচতলায় সম্প্রতি একটি খাবারের দোকান খুলেছেন মাসুম। বাড়ির চৌহদ্দী ঘিরে কয়েকটি দোকানও ভাড়া দেওয়া রয়েছে।
জাফর ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করা না যাওয়ায় এটা জানা যায়নি, মৃত মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক ছিল? কেনইবা তিনি কবরের জায়গা দিলেন?
‘মৃত্যু সনদের’ ঠিকানায় জীবিত মাহমুদুর
মাহমুদুর রহমান নামে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে দেওয়া একটি মৃত্যু সনদ দৈনিক ‘মানবজমিন’ এ ছাপা হয়েছে। সেই সনদটি ঠিক বলেই নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সেই সনদে রোগীর অভিভাবক হিসেবে ‘আব্দুল হাফিজ’ নামে এক ব্যক্তির নাম রয়েছে।
গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বরের ওই মৃত্যুসনদে মাহমুদুর রহমানের ঠিকানা লেখা হয়, ঢাকার উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডের একটি বাসার ২বি ফ্ল্যাট।
ঠিকানা ধরে বৃহস্পতিবার ওই ভবনটিতে গিয়ে এর তত্ত্বাবধায়ক কামরুল হাসানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখানে ২বি নম্বরের কোনো ফ্ল্যাট নেই, আর সেখানে আব্দুল হাফিজ বলেও কেউ নেই। তবে এবি-২ নম্বরের একটি ফ্ল্যাট আছে। সেই ফ্ল্যাটের মালিকের নাম মাহমুদুর রহমান এবং তিনি জীবিত আছেন।
ইন্টারকমের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে দোতলা থেকে নেমে আসেন ওই ফ্ল্যাট মালিক মাহমুদুর রহমানের স্ত্রী ফরিদা মাহমুদ রিপা। তিনি জানান, তার স্বামী অসুস্থ থাকায় তাকেই নামতে হল।
হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুসনদে এই বাসার ঠিকানা ও মালিকের নাম মিলে যাওয়ায় তারা শুধু বিব্রতই নন, উদ্বিগ্নও বলে জানান রিপা।
রিপা বলেন, তিনি কিংবা তার স্বামী দুইজনের কেউই হারিছ চৌধুরীকে চেনেন না ।
তিনি বলেন, “গত সোমবারই এক সাংবাদিকের মাধ্যমে জানলাম, এক ব্যক্তি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তির জন্য আমাদের বাসার ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। কারা করেছেন, কেন করেছেন, সেটা আমরা জানতাম না। পরবর্তীতে খবরে বিষয়টি দেখতে পাই।
“এরপর দেখলাম, তিনি আমার স্বামীর নামও ব্যবহার করেছেন। আমার স্বামীর নাম শাহ মোহাম্মদ অনুপম মাহমুদুর রহমান অ্যাপোলো। নামটা অনেক বড় হওয়ায় বেশিরভাগ লোকই তাকে মাহমুদুর রহমান নামে চেনেন। তবে তার যাবতীয় সার্টিফিকেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম এস এম এ মাহমুদুর রহমান রয়েছে।”
মাহমুদুর রহমান অ্যাপোলো একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। বর্তমানে দেশে এই ফ্ল্যাটেই আছেন। তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে স্ত্রী রিপা বলেন, “তিনি তিন দিন যাবত পিঠে ব্যথার কারণে অসুস্থ। তার চিকিৎসা চলছে এবং তিনি বিশ্রামে আছেন।”
বাড়ির বিষয়ে রিপা বলেন, “এই জায়গাটা আমার শ্বশুরের। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি এই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। উনি ২০০১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। ২০০৪ সালে আমার বিয়ে হয়। তখন থেকে এইখানেই থাকছি। ২০১২ সালে ডেভেলপারের মাধ্যমে এই ভবনটি তৈরি হয়। এখানে মোট আটটি ফ্ল্যাট আছে। তার মধ্যে আমার শ্বশুরের তিন ছেলের তিনটি ফ্ল্যাট বাদে বাকিগুলো কোম্পানি অন্যদের কাছে বিক্রি করেছে।”
মাহমুদুরের মৃত্যুর সঙ্গে তার স্বামীকে জড়িয়ে ফেলার বিষয়ে কোনো ধরনের সন্দেহ করছেন কি না- প্রশ্নে রিপা বলেন, “আসলে সন্দেহ করার মতো তেমন কাউকে পাচ্ছি না। বিল্ডিংয়ে প্রতিদিন অনেক লোক যাতায়াত করে, এখানে যেহেতু একটা অফিস আছে। এর মধ্যেই কেউ এ ধরনের কাজের সাথে যুক্ত কি না, সেটা এখনও বুঝতে পারছি না।”
কোনো তথ্য যাচাইয়ের জন্য পুলিশ এসেছিল কি না- জানতে চাইলে তিনি রিপা না সূচক জবাব দেন। ভবনের কেউ কিংবা স্বামীর পরিবারের কেউ রাজনীতিতে যুক্ত নন বলেও জানান তিনি।
হাসপাতালের ফরমে অভিভাবক হিসেবে যে আব্দুল হাফিজ নাম লেখা ছিল, সেই নামে কাউকে চেনেন না বলে জানান রিপা।
মাহমুদুরের পাসপোর্টে বিএনপি নেতার নম্বর
মাহমুদুর রহমান নামে যে পাসপোর্টের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সেটি সঠিক বলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
আর মাহমুদুর রহমানের যে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকাশিত হয়েছে, তার নম্বর জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডারে রয়েছে বলে যাচাই করে দেখা গেছে। আর সেই নম্বরধারী ব্যক্তির বাসস্থান ঢাকার পূর্ব/মধ্য মনিপুর এলাকায়।
উইকিপিডিয়ায় হারিছ চৌধুরীকে দেখাচ্ছে মৃত।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দেশে ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্র যখন তৈরি হয়, তার আগে থেকে নিরুদ্দেশ ছিলেন হারিছ চৌধুরী।
পাসপোর্টে দেখা যায়, মাহমুদুর রহমান তার আগের পাসপোর্ট মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০১৮ সালে নতুন পাসপোর্ট নেন। তার এই পাসপোর্ট হয়েছে আগের জাতীয় পরিচয়ত্র নম্বর অনুসারে।
পাসপোর্টে মাহমুদুরের স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া হয়েছে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল পৌরসভার পাদ্রী বাংলা রোডে।
পাসপোর্টে মাহমুদুর রহমানের বাবার নাম আবদুল হাফিজ ও মায়ের নাম রোকেয়া বেগম। স্ত্রীর নামের জায়গায় জোসনা বেগম উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে ওই এলাকায় এই নামে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। হারিছ চৌধুরীর স্ত্রীর নামও জোসনা বেগম, তিনি থাকেন যুক্তরাজ্যে।
পাসপোর্ট করার সময় ‘পুলিশ ভ্যারিফিকেশন’ হয়, অর্থাৎ পুলিশ আবেদিন ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করে প্রতিবেদন দেন।
এই কাজটি পুলিশের বিশেষ শাখা করে থাকে। মাহমুদুরের পাসপোর্ট নিয়ে দায়িত্বশীল এসবি কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে কেউ কিছু বলতে চাননি।
জরুরি যোগাযোগের জন্য পাসপোর্টে ইকবাল আহমেদের নাম দেওয়া হয়েছে। সম্পর্কের জায়গায় লেখা রয়েছে ‘ছেলে’, অর্থাৎ ইকবাল আহমেদ পাসপোর্ট গ্রহীতার ছেলে। একটি ফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে সেখানে।
বুধবার সেই ফোন নম্বরে কল করলে ধরেন সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা ইকবাল আহমেদ তপাদার।
ইকবাল আহমেদ বলেন, হারিস চৌধুরীর সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। আগে নিয়মিত যোগাযোগ হত।
“তিনি আমাদের এলাকার লোক, একই দল করি, সে জন্য তার সাথে সম্পর্ক ছিল। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হত। তবে ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর কোনো যোগাযোগ নেই।”
‘হারিছ চৌধুরী নাম পরিবর্তন করে মাহমুদুর রহমান নাম ব্যবহার করে পাসপোর্ট বানিয়েছেন’- এমন তথ্য তিনি পত্রিকায় দেখেছেন। তবে এই পাসপোর্টে তার ফোন নম্বর কীভাবে এল, এটা তারও প্রশ্ন।
ইকবাল বলেন, “আমার ফোন নম্বরটি তো অনেকেরই জানা। কেউ হয়ত ব্যবহার করে থাকতে পারে। তবে এই মাহমুদুর রহমানকে আমি চিনি না। আর পাসপোর্ট তৈরিকালে যাচাইয়ে কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করেনি।”
মানবজমিনের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, হারিছ চৌধুরী নাম বদলে মাহমুদুর রহমান নাম নিয়ে প্রায় ১১ বছর ধরে গ্রিন রোডের একটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকছিলেন। সেখানে সবাই তাকে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহমুদুর হিসেবে চিনতেন।
ছদ্মনামে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং পাসপোর্টও তিনি বানিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর ছড়ালেও বিএনপি নেতাদের কেউ প্রকাশ্যে তা নিয়ে মুখ খুলছেন না।