গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের দায়ে ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনসহ ৪৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং তাদের ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে আদালত।
এর মধ্যে রফিকুল আমিনকে ১২ বছর কারাদণ্ড এবং ২০০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে।
আর হারুন-অর-রশীদকে ৪ বছর কারাদণ্ড এবং সাড়ে ৩ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।
দশ বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এ মামলায় ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটির প্রায় ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল এ মামলায়।
তাতে অভিযুক্ত ৪৬ আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম বৃহস্পতিবার এই রায় দেন।
এক হাজার পৃষ্ঠার রায়ে বলা হয়, ডেসটিনির যেসব সম্পত্তি ও ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা ইতোমধ্যে অবরুদ্ধ করা হয়েছে, সেগুলো রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হল।
আর আসামিদের কাছ থেকে আদায় করা জরিমানার টাকা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪৫ (বি) ধারা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ বাবদ ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সকল শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের সমান হারে ভাগ করে দিতে হবে।
সেজন্য সরকারকে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে রায়ে। কমিটির চেয়ারম্যান হবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা, একজন উপ- মহা পুলিশ পরিদর্শক, একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট এবং সমবায় বিভাগের রেজিস্ট্রিার।
গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের এক মামলার রায়ের জন্য ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনকে বৃহস্পতিবার আদালতে নেওয়া হয়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিগ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের এক মামলার রায়ের জন্য ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনকে বৃহস্পতিবার আদালতে নেওয়া হয়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিমামলার তথ্য অনুযায়ী, মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। তাতে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।
এই এমএলএম কোম্পানির এমডি রফিকুল আমীনকে এ আইনের সর্বোচ্চ সাজা ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলেও গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হারুনের সাজা কেন কম হল, সেই ব্যাখ্যাও আদালত দিয়েছে।
বিচারক বলেন, “হারুন-অর-রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের কারণে তাকে সর্বনিম্ন দণ্ডে দণ্ডিত করা হল।”
হারুনের অবরুদ্ধ সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাবে অবমুক্ত (রিলিজ) করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে। তবে জরিমানার তিন কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকা তাকে পরিশোধ করতে হবে।
সাবেক এ সেনাপ্রধানের আইনজীবী এ রায়ের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আপিল করার কথা বলেছেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী একে একটি ‘মাইলফলক রায়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আসামিদের মধ্যে রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসেন কারাগারে ছিলেন। রায় ঘোষণার আগে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।
হারুন-অর-রশিদ, দিদারুল আলম, জেসমিন আক্তার, জিয়াউল হক ও সাইফুল ইসলাম জামিনে থেকে আদালতে হাজির হন।
রায়ে আদালত বলে, আসামিদের মধ্যে যারা এ মামলায় যতদিন হাজতবাস করেছেন, ততদিন সাজার মেয়াদ থেকে বাদ যাবে।
জামিনে থাকা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ দিদারুল আলমের সাজার ৮ বছর মেয়াদ আগেই খাটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেজন্য তাকে রায়ের পর আদালত থেকেই চলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। আর রায়ে তাকে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হলেও বিচারক তা মওকুফ করে দেন। ফলে ওই টাকা তাকে আর দিতে হবে না।
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন অর রশিদসহ বাকি ছয় আসামিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
মামলায় বাকি ৩৯ জন আসামি পলাতক রয়েছেন। গ্রেপ্তার হলে বা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে, তার পর থেকে তাদের সাজার মেয়াদ হিসাব করা হবে।
রায় ঘোষণার পর দুর্নীতি দমন কমিশনের বিশেষ পিপি মীর আব্দুস সালাম সাংবাদিকদের বলেন, “এটি একটি মাইলফলক রায়। মাল্টিপারপাস কোম্পানি গঠন করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা আত্মসাৎ এবং তা পাচার করায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে।”
অন্যদিকে সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে তার আইনজীবী এম মাইনুল ইসলাম বলেন, “হারুন-অর-রশিদ ডেসটিনির কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি। তার অ্যাকাউন্টে একটি টাকাও যায়নি। ডেসটিনির কোনো সম্পত্তি বা টাকা-পয়সা তিনি লেনদেন করেননি।
“তাকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তা বেআইনি। আমরা এই রায়ে ক্ষুব্ধ। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা মহামান্য হাইকোর্টে আপিল করব।”
রায়ের পর হারুনকে নিশ্চুপ থাকতে দেখা যায়, তিনি কোনো কথা বলেননি। এজলাসে উপস্থিত রফিকুল আমীনসহ অন্য আসামিরাও নিশ্চুপ ছিলেন।
হারুন অর রশিদকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ার আবেদন করেন তার আইনজীবী। আদালত কারা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
রায়ের পর হারুন আদালতের বেঞ্চে বসে ছিলেন প্রায় দুই ঘণ্টা। কয়েকজন বন্ধু-স্বজনের মাঝে তাকে বার কয়েক চোখ মুছতে দেখা যায়।
পরে রাতে খবর আসে, হৃদরোগের কারণে তাকে কারা তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গ্রাহকের আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় বৃহস্পতিবার ঢাকার জজ আদালত ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনকেও কারাদণ্ড দিয়েছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিগ্রাহকের আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় বৃহস্পতিবার ঢাকার জজ আদালত ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনকেও কারাদণ্ড দিয়েছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
কার কী সাজা
ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন: ১২ বছর কারাদণ্ড, ২০০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ বছর কারাদণ্ড
ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন: ১০ বছর কারাদণ্ড, দেড় কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড
ডেসটিনির প্রেসিডেন্ট এম হারুন-অর-রশীদ: ৪ বছর কারাদণ্ড, সাড়ে ৩ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাস কারাদণ্ড
উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন ও সাঈদ-উর-রহমান: ১০ বছর করে কারাদণ্ড, ১৮০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ২ বছর ৬ মাসের সাজা
সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন: ৯ বছরের কারাদণ্ড, ৩০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ বছর কারাদণ্ড
ইরফান আহমেদ সানী: ৯ বছরের সাজা, ১৫০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ২ দুই বছর ৬ মাস কারাদণ্ড
ফারাহ দীবা, ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়বুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস: ৮ বছর করে কারাদণ্ড, ৪০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ড
জমশেদ আরা চৌধুরী: ৮ বছরের কারাদণ্ড, ৩৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ২ বছরের সাজা
জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, আকবর হোসেন সুমন: ৯ বছর কারাদণ্ড, ১২৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আড়াই বছর করে কারাদণ্ড
মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, মো. সাইদুল ইসলাম খান রুবেল ও মজিবর রহমান: ৮ বছরের কারাদণ্ড, ১২৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আড়াই বছর করে কারাদণ্ড
সুমন আলী খান: ৯ বছরের কারাদন্ড, ১২৫ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও আড়াই বছর কারাদণ্ড
শিরীন আকতার ও রফিকুল ইসলাম সরকার: ৮ বছরের কারাদণ্ড, ১২৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও আড়াই বছর করে সাজা
লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. দিদারুল আলম: ৮ বছর কারাদণ্ড, ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড
সুনীল বরণ কর্মকার: ৮ বছরের কারাদণ্ড, ৫ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড
ফরিদ আক্তার: ৮ বছর কারাদণ্ড, আড়াই কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও দুই বছর কারাদণ্ড
এস এম শহিদুজ্জামান চয়ন: ৮ বছরের কারাদণ্ড, পাশাপাশি ১৫ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছর কারাদণ্ড
আব্দুর রহমান তপন: সাত বছরের কারাদণ্ড, ১ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড
মেজর সাকিবুজ্জামান খান: ৫ বছরের কারাদণ্ড, ১ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সাজা
এস এম আহসানুল কবির বিপ্লব ও এএইচএম আতাউর রহমান: ৮ বছর করে কারাদণ্ড, ১০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও দুই বছর সাজা
জিএম গোলাম কিবরিয়া মিল্টন: ৮ বছরের কারাদণ্ড, ৫ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের সাজা
আতিকুর রহমান: সাত বছর কারাদণ্ড, ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও দুই বছর সাজা
খন্দকার বেনজীর আহমেদ, একেএম সফিউল্লাহ ও দেলোয়ার হোসেন: ৭ বছর করে কারাদণ্ড, ১ কোটি টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের সাজা
জেসমিন আক্তার মিলন: ৫ বছরের কারাদণ্ড, ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছর সাজা
সফিকুল হক: ৭ বছরের কারাদণ্ড, ১ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সাজা
ড. এম হায়দারুজ্জামান: ৬ বছরের কারাদণ্ড, ১০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর ছয় মাস কারাদণ্ড
মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন: ৬ বছর কারাদণ্ড, পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড
কাজী ফজলুল করিম: ৫ বছর কারাদণ্ড, ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড
মোল্লা আল আমিন: ৪ বছরের কারাদণ্ড, ১০ লাখ জরিমানা, অনদোয়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড
সফিকুল ইসলাম: সাত বছরের কারাদণ্ড, ১০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছর ছয় মাস কারাদণ্ড
জিয়াউল হক মোল্লা ও ফিরোজ আলম: ৫ বছর করে কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড
ওমর ফারুক: ৫ বছরের কারাদণ্ড, ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড
সিকদার কবিরুল ইসলাম: ৫ বছরের কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সাজা
আদালতের বাইরে বিক্ষোভ
একদল লোক এদিন নিজেদের ডেসটিনির গ্রাহক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ দেখান। ডেসটিনির প্রেসিডেন্ট ও এমডিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন তারা।
বিক্ষোভকারীরা রায়ের পর বলেন, এই রায় তারা ‘প্রত্যাখ্যান’ করছেন। রফিকুল আমীনসহ কর্মকর্তাদের ‘মুক্তি দিয়ে’ গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হোক, এটাই তারা চান।
চাঁদপুর থেকে আসা মুনসুর আলম নামে একজন নিজেকে ডেসটিনির গ্রাহক পরিচয় দিয়ে বলেন, “রফিকুল আমীন মুক্তি পেলে ডেসটিনি আবার দাঁড়াবে এবং এর মাধ্যমে আমরা বিনিয়োগ করা অর্থও ফেরৎ পাব।”
মামলা বৃত্তান্ত
২০০০ সালে ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড নামে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি দিয়ে এই গ্রুপের যাত্রা শুরু। পরের বছরে বিমান পরিবহন, আবাসন, মিডিয়া, পাটকল, কোল্ড স্টোরেজ, বনায়নসহ বিভিন্ন খাতে ৩৪টি কোম্পানিতে ডেসটিনির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়।
পরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে চার হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে এ কোম্পানির বিরুদ্ধে।
দুদকের উপ পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসিটিনির কর্তাব্যক্তিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রজেক্টের অর্থ আত্মসাতের দুটি মামলা করেন।
তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৫ মে দুদক আদালতে উভয় মামলার অভিযোগপত্র দেয়। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্লানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলার ১৯ জনকে আসামি করা হয়। হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমিন দুই মামলাতেই আসামি।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ প্রোজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।
আর ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রোজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাত করা হয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন, তারপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হত।
দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এ রকম ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়। আত্মসাৎ করা চার হাজার ১১৯ কোটি টাকার মধ্যে ৯৬ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগও আনা হয় দুই মামলায়।
এর মধ্যে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২০২ জনের সাক্ষ্য শুনে রায় দিল আদালত। ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা এখন সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।
কিন্তু জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ এবং ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ তুঙ্গে উঠলে ২০১২ সালে হারুন ও রফিকুল আমীনকে কারাগারে যেতে হয়।
পরে ‘স্বাস্থ্য ও সামাজিক অবস্থা’ বিবেচনায় হারুন জামিন পেলেও রফিকুল আমীন কারাগারেই ছিলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার আদালতে বহুল আলোচিত এই মামলার রায় হয়। তাতে ৪৬ আসামিরই সাজা হয়।
হারুনকে দেওয়া হয় চার বছরের কারাদণ্ড। সেইসঙ্গে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয় তাকে। এই অর্থ দিতে না পারলে তাকে আরও ছয় মাস কারাভোগ করতে হবে।
জামিনে মুক্ত থাকা হারুন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর অন্য আসামিদের সঙ্গে তাকেও গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ হয়।
তবে বিকালেই কারা হেফাজতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইই) হাসপাতালে ভর্তি করাতে দেখা যায়।
জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, “উনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু আর বলতে চাননি কারা কর্তকর্তাদের কেউ।
বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম খান বলেন, “বিকেলের দিকে কার্ডিয়াক প্রবলেম নিয়ে হাসপাতালে এলে তাকে সিসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।”
সাবেক সেনাপ্রধান হারুন (৭৪)একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম গঠনের সময় সদস্য সচিব ছিলেন। ডেসটিনি কেলেঙ্কারির পর তাকে ওই পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে ১০ বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ডেসটিনির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে ২০১২ সালে কারাগারে যেতে হয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুনকে। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।