সরকার পতনের ‘যুগপৎ আন্দোলন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে গণসংহতি আন্দোলনের পর বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গেও বিএনপির ঐকমত্য হয়েছে।
বুধবার দল দুটির মধ্যে সংলাপের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধাণ সম্পাদক সাইফুল হক।
ঢাকার তোপখানা রোডে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুপুর সোয়া একটা থেকে পৌণে দুই ঘন্টাব্যাপী এই সংলাপ হয়। পরে দুই দলের প্রধান সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, এখন আমরা যারা একমত হচ্ছি তারা আমরা যৌথভাবেই আন্দোলন শুরু করব এবং নিজের নিজের জায়গা থেকে আন্দোলন শুরু করব।
“আন্দোলন যুগপৎ হবে এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ধারা নির্ধারিত হবে যে শেষ পর্যন্ত সেটা কিভাবে রুপ নিচ্ছে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, আমরা রাজনৈতিক দলগুলো একজোট হয়ে কাজ করলে আমরা অবশ্যই এই দুঃশাসনকে পরাজিত করে জনগণের বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হব।”
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক বলেন, “আজকে আলোচনায় বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এই যুগপৎ ধারায় আন্দোলনের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
“ভবিষ্যতে এটাকে আমরা আরও জোরদার করব এবং আন্দোলনের কাজটাকে আমরা আরও সমন্বিত করব।”
মানুষ বিরোধী দলগুলোর ঐক্য দেখতে চায় দাবি করে তিনি বলেন, “এই দুঃশাসন থেকে রেহাই পাবার জন্য বিরোধী দলগুলোকে জনগণের পক্ষে একটা কার্য্কর-সমন্বিতভাবে যুগপৎ ধারায় মাঠের একটা কার্য্কর ঐক্য দেখতে চায়।”
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণআন্দোলন ও গণসংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে যদি পদত্যাগে বাধ্য করা না যায় মানুষের ভোটের অধিকার বলি, গণতান্ত্রিক অধিকার বলি, অথবা একটা তদারকির সরকার, অবাধ গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন অথবা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ কোনোটাই নিশ্চিত করা যাবে না।”
এসব নিয়ে আলোচনায় আন্দোলন গড়ে তুলতে ঐক্যমত্য হয়েছে বলে জানান বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এই নেতা।
“দেশবাসীকে আমরা আহ্বান জানাতে চাই, আজকে বিরোধী দলগুলো যে উদ্যোগ নিয়েছে মানুষ তার নিজ নিজ জায়গা থেকে এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়াবেন এবং তারা আন্দোলনের সাথী হবেন।”
যুগপৎ আন্দোলন অর্থ বিএনপি-বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করবে না, তবে একই লক্ষ্য অর্জনে তারা কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করলেও তাতে সমন্বয় থাকবে।
বিএনপি ২০ দলীয় জোটে রয়েছে, যেখানে তাদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামী দল রয়েছে। আবার গণফোরামসহ ভিন্ন কয়েকটি দলকে নিয়ে জাতীয় ফ্রন্টও গড়ে তারা, যদিও তা এখন নিষ্ক্রিয়।
বাম গণতান্ত্রিক জোট থেকে বেরিয়ে আসা জোনায়েদ সাকির দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকা আসম আবদুর রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গঠনের প্রক্রিয়া রয়েছে।
‘সংবিধান সংস্কার প্রসঙ্গে’
সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির অবস্থান তুলে ধরে দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “শুধুমাত্র সরকার পরিবর্তনের জন্য আমাদের এই আন্দোলন নয়।
“পুরো রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, পরিবর্তন, একই সঙ্গে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কারসহ এখানে রাষ্ট্র প্রশাসনের গণতান্ত্রিক যে সংস্কার এবং আমাদের এখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যেভাবে নাগরিকদের ওপরে একটা সহিংস ভূমিকায় আবির্ভূত হয় এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে যেভাবে দলীয় বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা হয়-এই জায়গাগুলোর ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন।”
এসময় বিচার বিভাগের ওপর সরকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে বলেও অভিযোগ করেন এই বাম নেতা।
তিনি বলেন, “সামগ্রিকভাবে নির্বাহী বিভাগ এখন যেভাবে বিচার বিভাগ বা আইন প্রণয়ন বিভাগসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ওপরে যেভাবে তারা (সরকার) কর্তৃত্ব করে এটা আধুনিক রাষ্ট্রের এটা সাধারণ যে ভারসাম্য তার পরিপন্থি।
“এই সমস্ত বিষয়ে আমরা গুণগত পরিবর্তন, সাধারণ নির্বাচনের পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি। পুরো রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থার একটা গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রয়োজন।
“আমরা আজকের আলোচনায় সংকট উত্তরণে আমাদের দলেরে ৩১ দফা বিএনপির নেতৃ্বৃন্দের কাছে পেশ করেছি।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “যেসব সংস্কারের কথাগুলো সাইফুল হক সাহেব বলেছেন, আমরাও যে সমস্ত কথা বলছি এই সব সংস্কার নিয়ে এ বিষয়ে আমরা আরও বিশদ আলোচনা করব এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে এব্যাপারেও আমাদের যৌথভাবে আমাদের বক্তব্য নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হব।”
আলোচনার জন্য বেলা সোয়া ১টায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। অন্য সদস্যরা হলেন- দলটির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছান আলী দুলাল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক, মাহমুদ হোসেন ও এ্যাপেলো জামালী।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলনের ঐক্য গড়ে তুলতে গত ২৪ মে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে এবং ২৭ মে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের লেবার পার্টির সাথে সংলাপে বসে বিএনপি।
তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয় দল দুটি।