পদ্মা সেতুর জন্য সরকারকে ধন্যবাদ দেওয়া যায় না: গয়েশ্বর

goyeshawar-chandro-010722

পদ্মা সেতু নির্মাণে ‘দুর্নীতি হওয়ায়’ আওয়ামী লীগ সরকারকে ধন্যবাদ দেওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “ধন্যবাদ জানালে আমরা ছোটো হইতাম না? ধন্যবাদ জানাইতে পারতাম যদি এই সেতু প্রতিষ্ঠার সাথে বা নির্মাণের সাথে ওদের (সরকার) দুর্নীতি নামক শব্দটা সম্পৃক্ত না থাকত, যদি এটা দুর্নীতিবিহীন স্বচ্ছতার সাথে সেতুটা নির্মাণ হত, অবশ্যই আমরা ধন্যবাদ জানাতে পারতাম।

“কিন্তু এখন সেতুর জন্য ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে আমরা তো তারে এখান থেকে গচ্ছিত টাকাটাকে হালাল করতে পারি না। সেই কারণে দুঃখিত, যে প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে, সেই প্রকল্পের জন্য ধন্যবাদ দিতে পারি না।”

পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে বিশ্ব ব্যাংক চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে পিছু হটেছিল। এ নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের পর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের পথে এগিয়ে যায়। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার নির্মিত সেই সেতু চালু হয় গত সপ্তাহে।

বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ তুলেছিল, তারা তা প্রমাণ করতে পারেনি। এ নিয়ে কানাডার আদালতে মামলাও হয়েছিল, কিন্তু তা টেকেনি।

পদ্মা সেতুর নির্মাণব্যয় জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, “জনগণের পক্ষ থেকে ডাইরেক্ট অনুরোধ- আপনারা শ্বেতপত্র প্রকাশ করেন। কত টাকা ব্যয় হলে, কেনো হল- এখানে যে টাকা আত্মসাৎ বা লুটপাট হয় নাই- তা আপনারা প্রমাণ করেন। যেদিন প্রমাণ করতে পারবেন, সেদিন ধন্যবাদ জানাব।”

গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের তরফে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তা প্রত্যাখান করে বিএনপি।

গয়েশ্বরের কথায়, “পদ্মা সেতু… কেউ কেউ বলেন যে, খালেদা জিয়া তারে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ধন্যবাদ দিতে পারত। খালেদা জিয়া বন্দি। আইনমন্ত্রী বললেন, যেতে বাধা নেই। যেতে যদি বাধা না থাকে, দাওয়াত দিতে বাধা থাকল ক্যান?

“তিনি আমাদেরকে ঠিকই দাওয়াত দিলেন, আর দাওয়াত দিলেন না আমাদের নেত্রীকে। খেয়াল কইরেন; আমরা যদি উনার দাওয়াত কবুল করতাম, তাহলে আমরা কি রাস্তায় দাঁড়াতে পারতাম? সুতরাং নেত্রীকেও দাওয়াত দেয় নাই, মানে কাউকে দাওয়াত দেন নাই।”

বিএনপির আমলে পদ্মা সেতু নির্মাণে ‘গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কাজ’ সম্পন্ন হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়ার সরকারে ২০০৫ সালের এই সেতুর নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সমীক্ষা হয়েছিল, মাটি পরীক্ষা হয়েছিল, সাইট সিলেকশন হয়েছিল, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছিল। সতুরাং সেতু নির্মাণ করে যেতে পারেননি, আরেকজন করবেন- এটাই তো নিয়ম।

“সরকার তো অস্থায়ী, কিন্তু কর্মগুলো তো চলমান। সেই কর্মগুলো শেষ করতে হবে। পদ্মা সেতুর যখন সব পিলার উঠে গেছে- কোনো সরকার এসে সেই সেতু করবে না- এটা গাঁজাখুরি স্বপ্ন, গাঁজাখুরি কথাবার্তা।”

বানভাসিদের জন্য সরকারের ‘অপ্রতুল ত্রাণ’, মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে অর্থপাচার নিয়ে মামলা এবং বিদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে বাজেটে বিশেষ সুবিধার কঠোর সমালোচনা করেন গয়েশ্বর।

তৃণমূল নাগরিক আন্দোলনের উদ্যোগে ‘বন্যা দুর্গত মানুষের আর্তনাদ সরকারের লোক দেখানো ত্রাণ তৎপরতা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়।

সংগঠনের সভাপতি মফিজুর রহমান লিটনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের রহমাতুল্লাহ, বিলকিছ ইসলাম, কাজী মনিরুজ্জামান, জাহাঙ্গীর আলম, কাদের সিদ্দিকী, আবদুল্লাহ আল নাঈম, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন মনি, দেশপ্রেমিক নাগরিক পার্টির আহসান উল্লাহ শামীম, জাতীয় গণতান্ত্রিক মঞ্চের ইসমাইল হোসেন তালুকদার খোকন।

Pin It