গত বছর জানুয়ারিতে দেশের মাটিতে ক্যারিবিয়ানদের তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। স্পিনারদের অসাধারণ বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে হলো এর পুনরাবৃত্তি।
২০২০ সালের মার্চের পর প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে খেলার সুযোগ পেয়ে ২৮ রানে ৫ উইকেট নেন তাইজুল। দেশের বাইরে বাংলাদেশের কোনো স্পিনারের যা সেরা বোলিং। প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট নেওয়া ৩০ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনার জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
রান তাড়ায় শুরু থেকেই সাবলীল ছিলেন তামিম। আরেক পাশে ধুঁকছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পেসার আলজারি জোসেফের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ডিফেন্স করার চেষ্টায় কিপার শেই হোপকে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ভোগান্তি।
ক্রিজে প্রথম বলেই চার মেরে রানের খাতা খোলেন লিটন দাস। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান দ্রুত রান তোলায় চাপ সরে যায় তামিমের উপর থেকে। দুই জনে এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। ২৮ রানে আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেওয়ার পর রিভিউ নিয়ে বাঁচেন লিটন।
বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেনকে তারা সামাল দেন খুব সহজেই। তবে কিছুটা পরীক্ষা নিচ্ছিলেন মোটি। তিনিই ভাঙেন ৫০ রানের জুটি। বাঁহাতি এই স্পিনারকে সুইপ করে বল মাটিতে রাখতে পারেননি তামিম। এগিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে চমৎকার ক্যাচ নেন আকিল।
চারটি চারে ৫২ বলে ৩৪ রান করেন তামিম। আগের ম্যাচে অপরাজিত ফিফটিতে দলকে ফিরিয়ে জেতা বাংলাদেশ অধিনায়ক জেতেন সিরিজ সেরার পুরস্কার।
তামিমের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টেকেননি লিটন। ৬২ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে মোটির দুর্দান্ত ফিরতি ক্যাচে সেই রানেই ফেরেন তিনি। ৬৫ বলে খেলা লিটনের ৫০ রানের ইনিংস গড়া পাঁচ চার ও এক ছক্কায়।
এক বল পর চমৎকার এক ডেলিভারিতে আফিফকে বোল্ড করে দেন মোটি। তিন বলের মধ্যে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম ১৯ বলে চার রান করা মোসাদ্দেক হোসেন বেরিয়ে এসে মোটির মাথার উপর দিয়ে মারেন চান। পরে নিকোলাস পুরানকে ওড়ান ছক্কায়।
ব্যাটসম্যানদের বারবার পরীক্ষা নেওয়া মোটির সেটি ছিল শেষ ওভার। অনায়াসে শেষ দুটি বল ছেড়ে দেওয়া যেত। তবুও বিনা কারণে ঝুঁকি নেন মোসাদ্দেক। বেরিয়ে এসে ইন সাইড আউট খেলার চেষ্টায় ক্যাচ দেন লং অফে।
প্রায় একই ধরনের কাজ করেন অনেকটা সময় ক্রিজে থাকা মাহমুদউল্লাহ। রান রেটের তেমন কোনো চাপ না থাকলেও বেরিয়ে এসে পুরানকে খেলার চেষ্টায় স্টাম্পড হন অভিজ্ঞ এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে বাকিটা সারেন নুরুল হাসান সোহান। চারটি চারে ৩৮ বলে এই কিপার-ব্যাটসম্যান করেন ৩২। ৩৫ বলে মিরাজের রান ১৬।
ব্যাটিংয়ের সময় হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়ায় ফিল্ডিংয়ে নামেননি পেস বোলিং অলরাউন্ডার কিমো পল। এতে বোলার কমে যায় একজন। শারীরিক সমস্যার জন্য নিজের দ্বিতীয় ওভার অসমাপ্ত রেখেই মাঠ ছাড়েন রভম্যান পাওয়েল। স্বাগতিকদের বোলার ঘাটতি থাকার পরও জেতার জন্য বাংলাদেশের খেলতে হয় ৪৯তম ওভার পর্যন্ত!
২৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফলতম বোলার মোটি। আরেক বাঁহাতি স্পিনার আকিল শেষ ৩ ওভার মেডেন নেওয়ার পরও ৪৫ রান নিয়ে থাকেন উইকেটশূন্য।
২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হয় বাংলাদেশ। পরে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারে ২-০ ব্যবধানে, বৃষ্টিতে ভেসে যায় একটি ম্যাচ। তবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করে শেষটা ভালো করল বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৮.৪ ওভারে ১৭৮ (হোপ ২, কিং ৯, ব্রুকস ৪, কার্টি ৩৩, পুরান ৭৩, পাওয়েল ১৮, পল ৮, আকিল ১, শেফার্ড ১৯, মোটি ২, জোসেফ ৭*; নাসুম ৯.৪-১-৩৯-২, মুস্তাফিজ ৯-০-২৪-২, তাইজুল ১০-২-২৮-৫, মোসাদ্দেক ১০-১-২৩-১, মিরাজ ৮-০-৬১-০, আফিফ ২-১-২-০)।
বাংলাদেশ: ৪৮.৩ ওভারে ১৭৯/৬ (তামিম ৩৪, শান্ত ১, লিটন ৫০, মাহমুদউল্লাহ ২৬, আফিফ ০, মোসাদ্দেক ১৪, সোহান ৩২*, মিরাজ ১৬*; জোসেফ ১০-০-২৫-১, শেফার্ড ১০-০-৩৮-০, আকিল ১০-৩-৪৫-০, পাওয়েল ১.৫-০-৮-০, কার্টি ০.১-০-১-০, মোটি ১০-২-২৩-৪, পুরান ৬.৩-০-৩৮-১)
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০তে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তাইজুল ইসলাম
ম্যান অব দা সিরিজ: তামিম ইকবাল