উন্নয়ন কার্যক্রমে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। উন্নয়ন প্রকল্পও ব্যয়বৃদ্ধির শঙ্কার মুখে রয়েছে। দেশে চলতি অর্থবছরে ১ হাজার ৪৩৪টি প্রকল্প চলমান। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ২৪৩টি, কারিগরি সহায়তা ১০৬টি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ৮৫টি। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব প্রকল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শনিবার পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, যেসব প্রকল্পে গাড়ির ব্যবহার আছে, যেখানে জ্বালানি তেলের ব্যবহার আছে, সেখানে খরচ অবশ্যই বাড়বে। একই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দামের প্রভাব সর্বত্র পড়ায় অনেক প্রকল্পের ব্যয়বৃদ্ধির পুরোপুরি আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ কারণে ঠিকাদাররা হয়তো সুযোগ নিতে পারেন। কিন্তু আমরা সজাগ রয়েছি। অহেতুক যাতে কোনো ক্ষেত্রে ব্যয় না বাড়ে, সেটি খেয়াল রাখা হবে। সব মিলিয়ে বলা যায়, প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব ভালোভাবে পর্যালোচনা করে দেখা হবে।
সূত্র জানায়, চলমান প্রকল্পের পাশাপাশি চলতি অর্থবছরের শুরুতে ১৫টির মতো প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে সংশোধিত প্রকল্পের পাশাপাশি নতুন প্রকল্পও রয়েছে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেলে হাজার হাজার কোটি টাকা বাড়তি খরচ হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক শাহাবুদ্দিন খান বলেন, জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে একসঙ্গে পুরো প্রকল্পের ব্যয় হয়তো বাড়বে না। তবে বিভিন্ন সামগ্রীর দাম বেড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যয় সমন্বয় করার সুযোগ আছে। অর্থাৎ বরাদ্দের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কিছু বাড়তি ব্যবস্থা থাকে। সেখান থেকে বাড়তি ব্যয় মেটানো যাবে। তবে সেই অর্থের তুলনায় বেশি খরচ হলে প্রকল্প সংশোধনের প্রয়োজন হবে। তবে এ মুহূর্তে কিছু বলা যাবে না। কেননা আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে তো আবার দেশের বাজারেও কমবে। সেক্ষেত্রে প্রকল্পের খরচ কমে বরাদ্দ উদ্বৃত্তও হতে পারে। তাই শুধু শঙ্কা নয়, এর পাশাপাশি আশাও আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এত তাড়াতাড়ি কিছুই বলা যাবে না। এখন আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পে জ্বালানি তেলের ব্যবহার খুব বেশি নয়। এরপরও কিছু ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু কৃষি খাত, পরিবহণ খাত ও শিল্প খাতে যে রকমভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, উন্নয়ন প্রকল্পে সেভাবে পড়ার কথা নয়। তবে ঠিকাদাররা একটা সুযোগ নিতে পারে। সেক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা তারা কোনো ক্ষেত্রে ব্যয়বৃদ্ধির প্রস্তাব দিলে তা খতিয়ে দেখতে হবে। তারা যেসব সামগ্রীর দাম বাড়াতে চাচ্ছে, সত্যিই সেগুলোর দাম বেড়েছে কি না, তা যাচাই করতে হবে। গড়ে ব্যয় বাড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।