আইএমএফের ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ পেতে আলোচনা শুরু এ মাসেই

image-605393-1665722842

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা এ মাসের মধ্যেই শুরু হবে। এ লক্ষ্যে এ মাসের আইএমএফের একটি দল আগামী সপ্তাহে ঢাকায় আসবেন। তারা ঋণের বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করবেন। এর মধ্যে প্রধান বৈঠক হবে অর্থমন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সংশ্লিস্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে। এ বিষয়ে আইএমএফ প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভা চলার সময় সাইড লাইনে এসে সংস্থার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে তারা দেশের পুরো অর্থনীতির ঝুকি ও সমস্যাগুলোর একটি মূল্যায়ন করবে। একই সঙ্গে আইএমএফের শর্তগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে সেটি পর্যালোচনা করবে। ইতোমধ্যে সরকার আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য প্রধান চারটি শর্ত বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমিয়েছে, সারের দাম বাড়িয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণে বাড়িয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারকে বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস হিসাবের পাশাপাশি নিট হিসাবও করছে এবং তা নিয়মিতভাবে আইএমএফকে দিচ্ছে। এই চারটি প্রধান শর্ত বাস্তবায়ন করায় আইএমএফের ঋণ পেতে সরকার অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আলোচনায় দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলে ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড় করতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এর আগে আইএমএফের কাছ থেকে জরুরিভিত্তিতে ঋণ পাওয়া সম্ভাবনা নেই। এ দিকে বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিস্থিতিতে দেশে ডলারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সংকটের কারণে আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ।

সূত্র জানায়, গত ১০ অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সাধারণ সভা শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত। ওই সভায় বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে, অর্থসচিবসহ একটি প্রতিনিধি দল যোগ দিয়েছেন। সভার অংশ নেওয়ার পাশাপাশি প্রতিনিধি দলটি সাইড লাইনে বিভিন্ন দেশের সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করছে। বৃহস্পতিবার শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, স্ট্যান্ডর্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এশিয়া প্যাসেফিক অঞ্চলের প্রধান ও জেপি মর্গাণের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনে আইএমএফের সঙ্গেও সরকারের প্রতিনিধি দলের একটি অনানুষ্ঠিক বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে এ মাসের মধ্যেই আইএমএফ মিশনটি ঢাকায় আসবে।

তবে যেহেতু বাংলাদেশ জরুরিভিত্তিতে ঋণ চেয়েছে এবং ঋণের কিছু শর্ত বাস্তবায়নও হয়ে গেছে- এ কারণে দ্রুতই ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, রপ্তানির চেয়ে আমদানি ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যাওয়ায় ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় বাজারে ডলারের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে রিজার্ভ থেকে ডলার দিয়ে বাজারের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এ ভাবে রিজার্ভ থেকে বেশিদিন ডলারের জোগান দেওয়াও সম্ভব নয়। এ কারণে ডলার সংকট মোকাবিলা করতে সরকার আইএমএফসহ বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছে ঋণ সহায়তা চেয়েছে। আইএমএফের কাছ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চাওয়া হতে পারে। জুলাইয়ে সরকার থেকে আইএমএফের কাছে চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঋণ চাওয়া হয়েছে। গত ১৪ জুলাই আইএমএফের একটি মিশন বাংলাদেশে এসে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে গেছে। দলটি ২২ জুলাই ঢাকা ত্যাগ করে।

Pin It